বাংলাদেশের ক্রিকেটে ‘পাওয়ার হিটিং’ এখন আলোচিত বিষয়গুলোর একটি। এটাই স্বাভাবিক। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তো দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে বাংলাদেশ দলে ছক্কা-চারের ফুলঝুরি ছোটাতে পারেন, এমন কোনো ব্যাটসম্যান নেই। মুশফিকুর রহিম, লিটন দাসরা যে ‘পাওয়ার হিটার’ নন, সেটি স্বীকার করে নিয়েছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ নিজেই।
কেবল মারতে না পারার ব্যর্থতায় বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে পাওয়ারপ্লেতে রান পায় না, শেষের দিকেও রানের গতি বাড়াতে পারে না। দেশে এখন চলছে ‘পাওয়ার হিটার’ তৈরির কথাবার্তা। জাতীয় দলের জন্য এমন একজন কোচ খুঁজে বের করারও কথাবার্তা খুব চাউর।
কিন্তু ম্যাথু হেইডেন যা বলছেন, তাতে বেশ হতাশ হবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের নীতিনির্ধারকেরা। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই ব্যাটসম্যান নিজে ছিলেন পাওয়ার হিটিংয়ের বিজ্ঞাপন। যখন খেলেছেন, তখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা দুনিয়াময় এমন ছড়িয়ে পড়েনি। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেছেন মাত্র ৯টি।
মাত্র ৯ ম্যাচ খেলেই ৫১.৩৩ গড়ে ৩০৮ রান করেছেন। স্ট্রাইক রেট চমকে দেওয়ার মতোই—১৪৩.৯৩। আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে ৩২টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ৩৬.৯ গড়ে ১১০৭ রান তাঁর। স্ট্রাইক রেট ১৩৭.৫২। সেই হেইডেনই সাফ বলে দিয়েছেন, পাওয়ার হিটার তৈরি করা যায় না।
হেইডেন এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলের ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড যে জাতীয় দলের ব্যাটিং-সামর্থ্যের উন্নতির জন্য ঠিক লোকটিকেই বেছে নিয়েছে, সেটির প্রতিফলন তাদের খেলাতেই দেখা যাচ্ছে। বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান, আসিফ আলী, শোয়েব মালিকরা প্রতি ম্যাচেই দেখিয়েছেন, তাঁরা কী করতে পারেন। পাওয়ার হিটিং প্রসঙ্গে হেইডেনের মত খুবই পরিষ্কার, ‘এটা একটা বিরল ক্ষমতা।’
তাহলে কি প্রতিভা খুঁজে বের করা ছাড়া ‘পাওয়ার হিটার’ পাওয়ার কোনো উপায়ই নেই? হেইডেন অবশ্য এখানে ব্যাটসম্যনদের ব্যাটিং-মানসিকতার কথাও বলেছেন, ‘হ্যাঁ, প্রতিভা থাকতে হবে অবশ্যই, কিন্তু ইনিংসের শেষ দিকে মেরে খেলা অনেকটাই নির্ভর করে একজন ব্যাটসম্যানের মানসিকতার ওপর।’
পাকিস্তান দলে তাঁর শিষ্য আসিফ আলীর ‘পাওয়ার হিটিং’ নিয়েই আসলে কথাগুলো বলেছিলেন হেইডেন। আসিফ ‘পাওয়ার হিটার’ কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবেই কথাগুলো বলেছিলেন হেইডেন, ‘খুব বেশিসংখ্যক ক্রিকেটারের মধ্যে প্রচণ্ড জোরে বল পেটানোর ক্ষমতা থাকে। এটা ওই ব্যাটসম্যানদের জন্মগত ব্যাপার। আসিফের সেটি আছে।’
তবে পাওয়ার হিটার কেন কোচিং করিয়ে তৈরি করা যায় না, সেটির ব্যাখ্যা হেইডেন দিয়েছিলেন এভাবে, ‘খুব অল্প কিছু ক্রিকেটারের মধ্যে বল জোরে মারার জন্মগত শক্তি থাকে। আর এই শক্তি কোচিং করিয়ে তৈরি করাটা খুব কঠিন।’
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে ‘পাওয়ার হিটার’ খুঁজে বের করার কাজটা তাহলে কীভাবে হবে! জোরে বল মারতে পারে, এমন ক্রিকেটার খুঁজে বের করে তাঁদের পরিচর্যার মাধ্যমে এটি হতে পারে। আরেকটি ব্যাপার হতে পারে ক্রিকেটারদের মানসিক শক্তি বাড়ানোর মধ্য দিয়ে। ভালো উইকেট, ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচের আধিক্য—মানসিক শক্তিটা তো বাড়ানো যায় এসব পথ ধরেই।
বিসিবি এখন পাওয়ার হিটার কীভাবে বের করবে, দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেটপ্রেমীরা।