হারের বৃত্ত থেকে এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দ-দৌড়। জয়ের গর্জনে ছুটছেন রুমানা-সানজিদারা। ছবি: টুইটার
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দ-দৌড়। জয়ের গর্জনে ছুটছেন রুমানা-সানজিদারা। ছবি: টুইটার
>ছেলেদের ব্যর্থতার ক্ষত মোচনের দাওয়াই হতে পারে মেয়েদের এশিয়া কাপ জয়

মেয়েদের ক্রিকেট! ও হবে না! গত মে মাসে জাহানারা-রুমানারা দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে ফেরার পর এমনটা ভেবেছেন অনেকেই। পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ও তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ মিলিয়ে হারের ব্যবধানটা যে ছিল ৮-০। ক্রিকেটপ্রেমীদের তাই দোষ দেওয়া যায় না।
কিন্তু এবার সেই সমর্থকেরা বোকা বনে গেছেন। তাঁদের এই বোকা বনে যাওয়ার মধ্যে যে গর্ব আর আনন্দ মিশে থাকে, সেটা ভালোভাবেই অনুভব করেছেন তারা। এর মাহাত্ম্য অন্যরকমই। দর্শকদের যাঁরা বোকা বানিয়েছেন, তারাও কী সেই মাহাত্ম্য টের পেয়েছেন? বোধ হয় না। তা না হলে জয়ের পর বাংলাদেশ অধিনায়ক সালমা খাতুন বলতেন না, ‘আমাদের হারানোর কিছু ছিল না। এই জয় ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’
যেকোনো বিচারেই এই জয় অনন্য। মেয়েদের এশিয়া কাপ ক্রিকেট শুরু হয়েছে ২০০৪ থেকে। প্রথম চারটি টুর্নামেন্টে ছিল ওয়ানডে সংস্করণে। ২০১২ সাল থেকে তা পাল্টে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে আনা হয়। তা, যে সংস্করণই হোক চ্যাম্পিয়ন দলের নামটা কখনো পাল্টায়নি। সেটা আজকের আগে পর্যন্ত। মেয়েরা কী কাণ্ড ঘটিয়েছে, বুঝে নিন। এশিয়া কাপ চালুর পর থেকেই অবিসংবাদিত চ্যাম্পিয়ন, টানা ছয়বারের শিরোপাজয়ী ভারতকে হারিয়েছে রুমানারা। সেটাও প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠে!

মেয়েদের এই শিরোপা দ্বার খুলে দিকে অনেক শিরোপার। ছবি: টুইটার

একটা পরিসংখ্যান দিয়েই পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেওয়া যাক। এই এশিয়া কাপেই টানা ৩৪ ম্যাচ অপরাজিত ভারতকে  গ্রুপ পর্বে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ফাইনালে এসে ভারত আবারও হারল বাংলাদেশের কাছে। মহা পরাক্রমশীল কোনো প্রতিপক্ষকে টানা দুই ম্যাচে হারিয়ে দেওয়া কিন্তু কম কথা নয়।
ভারতের ক্রিকেট অবকাঠামোকে তুলাদণ্ডের এক পাত্রে রেখে অন্য পাত্রে আমাদের মেয়েদের ক্রিকেট অবকাঠামো রেখে বিচার-বিশ্লেষণে বসলেই সালমা-জাহানারাদের প্রতি শ্রদ্ধাটা আরও বাড়বে। এই ফাইনাল না জিতলে কী হতো? আরেকটি হার? আমাদের ক্রিকেটে ফাইনালে হারটা মোটেও অপরিচিত কিছু নয়। এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠে ছেলেরা দুবার হেরেছে। আর মেয়েরা এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠার আগেই নিজের রেকর্ডকে লিখিয়েছে নতুন করে।
ভারতের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের সেই ম্যাচে টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের নজির গড়েছেন রুমানারা। অর্থাৎ, তাঁরা ছাপিয়ে গেছেন নিজেদের সামর্থক্যেই। আর এবার ফাইনাল জিতে তাঁরা বুঝিয়ে দিল ছেলেদের মতো বারবার ‘তীরে এসে তরী ডোবানো’কে ঘৃণাই করেন তারা।
আবার, এই মেয়েরাই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে তিন ম্যাচে এক শ-র নিচে গুটিয়ে গেছে। দেশে তখন ‘ছ্যা ছ্যা’ পড়ে গিয়েছিল। ছেলেরা খারাপ করলে যেমন হয় আর কি! আফগানদের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হওয়া তাঁর সাম্প্রতিকতম উদাহরণ। তা ভুলে যাওয়ার সেরা দাওয়াই মেয়েদের এই বিজয়—এশিয়ার রানি বলে কথা! আর তাই দেশের নানা জায়গা থেকে ভেসে আসছে রাশি রাশি শুভেচ্ছা। সাকিব-তামিমরাও এই জয়ের আনন্দ-হিল্লোলে ফুটছেন টগবগ করে।

বাংলাদেশের ক্রিকেটেই তো সবচেয়ে বড় ট্রফিটা এনে দিল মেয়েরা!