দুর্দান্ত ফর্মে আছেন মোহাম্মদ হাফিজ। আবুধাবিতে চলছে টি-টেন লিগ। সেখানে মারাঠা অ্যারাবিয়ানসের হয়ে সর্বশেষ ম্যাচেই প্রায় ২০০ স্ট্রাইকরেটে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন। এই লিগের পারফরম্যান্সকে গুরুত্ব না দিতে চাইলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর সর্বশেষ পারফরম্যান্স টেনে আনা যায়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১৪০ রান করেছিলেন হাফিজ। ওই সিরিজে পাকিস্তানের সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন এই অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। তবু তাঁর জায়গা হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে।
এ নিয়ে বেশ শোরগোল পড়েছে পাকিস্তান। মিসবাহ-উল-হক দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে বেশ কয়েকবার। কোচিং প্যানেলের ওপর বিরক্ত হয়ে অবসর নিয়ে ফেলেছেন মোহাম্মদ আমির। শোয়েব মালিককেও প্রায়ই দলের বাইরে থাকতে হচ্ছে। সে তালিকায় হাফিজও যোগ হচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। সেলিম মালিকও এ বিষয়ে আলোচনায় যোগ দিয়েছেন।
ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে নিষেধাজ্ঞার শাস্তি ভোগ করা সাবেক এই ব্যাটসম্যানের দাবি, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দল থেকে এভাবে বাদ দিয়ে হাফিজের সঙ্গে অন্যায় করেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।
পাকিস্তান ক্রিকেটে আবার ফেরার চেষ্টা করছেন সেলিম মালিক। এ উদ্দেশ্যে অনেক দিন ধরেই নিজের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। অন্য সাবেক ক্রিকেটারদের মতোই জাতীয় দল ও বোর্ডের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা বলে আলোচনায় থাকার চেষ্টা করছেন। ১১ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে আজ বোর্ডের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন, ‘একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় দলে থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অভিজ্ঞরা না থাকলে পুরো চাপটা নতুনদের ঘাড়ে পড়ে। অবশ্যই নতুনদের গড়ে তুলতে হবে এবং তাদের নিয়ে এগোতে হবে। কিন্তু অভিজ্ঞদের একেবারেই ভুলে গেলে চলবে না। দলে অভিজ্ঞদের থাকা উচিত। পাকিস্তানের জন্য অসাধারণ অবদান রেখেছে হাফিজ। সর্বশেষ সিরিজেও সে খুব ভালো করেছে।’
দলীয় কোন্দল, বোর্ডের রাজনীতি মিলিয়ে পাকিস্তানে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের দল থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা বা ঝামেলায় ফেলার সংস্কৃতি অবশ্য বেশ পুরোনো। হাফিজের সঙ্গেও সে রকমই অন্যায় করা হয়েছে বলে দাবি মালিকের, ‘আমি জানি না কে কার বিপক্ষে লেগেছে। কিন্তু আমি দেখেছি, কিছু কিছু মানুষ অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের ক্যারিয়ারের শেষ দিকে খেলতে দিতে চান না। আমার ধারণা, হাফিজের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে।’
এদিকে মোহাম্মদ হাফিজকে দলে নেওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন প্রধান নির্বাচক মোহাম্মদ ওয়াসিম। তাঁর দাবি, আবুধাবিতে টি-টেন লিগ খেলতে গিয়েই নিজেকে বিপদে ফেলেছেন ৪০ বছরের হাফিজ, ‘হাফিজ দারুণ ফর্মে আছে এবং তাকে পাওয়া গেলে অবশ্যই দলে রাখতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে জৈব সুরক্ষাবলয়ে ৩ ফেব্রুয়ারিতে ঢুকতে পারবে না (টি-টেন লিগে খেলার কারণে), এ কারণেই তাকে এ সিরিজের জন্য আমরা বিবেচনায় রাখতে পারছি না। কোভিড-১৯–এর নিয়ম সবাইকে মানতে হবে।’
টি-টেন লিগে শুধু মোহাম্মদ হাফিজই খেলছেন, এমন নয়। পাকিস্তানের অনেক ক্রিকেটারই জায়গা পেয়েছেন এ লিগে। সেখান থেকে আসিফ আলীকে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দলে ঠিকই ডেকে পাঠিয়েছে পাকিস্তান। এ ব্যাপারে ওয়াসিমের যুক্তি, ‘আসিফ আলীও টি-টেন লিগ খেলছে, কিন্তু সে ৩ ফেব্রুয়ারির আগেই বলয়ে যোগ দিতে রাজি হয়েছে।’
এ ব্যাপারে হাফিজ নিজের মনোভাব একটু ভিন্নভাবেই জানিয়েছেন। দল ঘোষণার পর দলের সঙ্গে নিজের ছবি দিয়ে টুইটারে লিখেছেন, ‘নিশ্চয় সর্বশক্তিমান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের পক্ষে আছেন।’ এর আগেও টি-টেন লিগ খেলতে গেলে তাঁর পাকিস্তান দলে জায়গা না পাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন হাফিজ, ‘আমি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার জন্য সদা প্রস্তুত আছি। কারণ, পাকিস্তানের হয়ে খেলাই আমার কাছে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায়। পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে কোনো সমস্যা হবে না, এটা জেনেই টি-টেন লিগের জন্য আমাকে অনাপত্তিপত্র দেওয়া হয়েছে। আমি জৈব সুরক্ষাবলয়ের সব নিয়ম মানব।’
কিন্তু পাকিস্তান বোর্ডের সঙ্গে যে তাঁর এই কথা মিলছে না, সেটা তো দেখাই যাচ্ছে। দলেই রাখা হয়নি তাঁকে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের পর ১১, ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে পাকিস্তান।