শোয়েব আখতার।গোলা ছোঁড়ার পর।
শোয়েব আখতার।গোলা ছোঁড়ার পর।

হাঁটতে না–পারা সেই ছেলেই একসময় হয়ে উঠলেন শোয়েব আখতার

শরীর বেয়ে ঝরঝর করে ঝরছে ঘাম। সীমানার প্রায় কাছ থেকে ক্ষিপ্রগতিতে শুরু করলেন দৌড়। ব্যাটসম্যানদের দিকে যেন ক্রিকেট বল নয়, আগুনের গোলা ছুড়লেন তিনি। শুধুই কি গতি? সেই সঙ্গে রিভার্স সুইং কিংবা বাউন্সার। শোয়েব আখতার যখন বোলিং করতেন, তখন দৃশ্যপট হতো এমনই।

সেই ১৯৯৯ সালে কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে লাখো দর্শককে স্তব্ধ করে দিয়ে দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে উপড়ে নিয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকারের স্টাম্প। এর আগের বলেই একই রকম এক বলে বোল্ড করেছিলেন ‘দ্য ওয়াল’ রাহুল দ্রাবিড়কে। ক্রিকেটপ্রেমীরা কীভাবে ভোলেন অসাধারণ সেই মুহূর্ত দুটি! ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬১.৩ কিলোমিটার বেগে বল করেছিলেন, আজ পর্যন্ত কেউ পেরিয়ে যেতে পারেনি সেই রেকর্ড। দুই দশক তো প্রায় হতেই চলল! কিন্তু ক্রিকেট মাঠে গতির ঝড় তোলা শোয়েবের ক্রিকেটারই হওয়ার কথা ছিল না। শুনলে অবাক হবেন, একসময় ঠিক করে হাঁটতেই পারতেন না তিনি। অস্ট্রেলীয় সংবাদপত্র ‘দ্য এজ’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এটি জানান রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস।

ক্যারিয়ারে গতির ফুলকি ছুটিয়েছেন শোয়েব আখতার

৪৪৪টি আন্তর্জাতিক উইকেট পাওয়া এই পেসার ক্রমাগত লড়াই করেছেন চোটের সঙ্গে। ক্যারিয়ার আরও দীর্ঘায়িত না হওয়ার বড় কারণ ছিল চোট। ৯টি অপারেশন ছাড়াও বাঁ হাঁটুতে ৪২টি ইনজেকশন নিতে হয়েছিল বলে জানান ৪৬ বছর বয়সী সাবেক এই ফাস্ট বোলার। শোয়েব নিজের ছোটবেলার গল্পটাও বলেছেন দ্য এজকে, ‘আমি ছয় বছর বয়স পর্যন্ত হাঁটতে পারতাম না। হামাগুড়ি দিতাম। চিকিৎসক সব সময় আমার মাকে বলতেন, “শুনুন, এই ছেলে সাধারণ ছেলেদের মতো দৌড়াতে পারবে না।”’

অনেক সময় চোট লুকিয়েও খেলেছেন তিনি, ‘আমার হাঁটুর হাড়ের ওপর হাড় হয়ে গেছিল। কী ব্যথার মধ্য দিয়ে গিয়েছিলাম, তা ভাবুন। ব্যথাটা এতটাই ভয়ানক ছিল যে আমি “আইস বাথ”–এ ঘুমিয়ে পড়তাম। অনেক সময় সতীর্থরা আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বলত, “সকাল চারটা বাজে, বের হও এবং বিছানায় যাও।” তাদের থেকে আমি আমার চোট লুকিয়ে রাখতাম। মিডিয়া বুঝতে পারত না, কেন আমি নিয়মিত খেলতাম না।’ সত্য হয়নি শোয়েব আখতারের শৈশবে করা সেই চিকিৎসকের ভবিষ্যদ্বাণী। কোনো প্রতিবন্ধকতাই ক্রিকেটার হয়ে উঠতে তাঁর বাধা হয়ে ওঠেনি। সবকিছু সামলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বিশ্বসেরাদের কাতারে। তাঁর বোলিং পাকিস্তানকে দিয়েছে অসংখ্য জয়ের স্বাদ।

২০১১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানো এই পেসার বিভিন্ন ইস্যুতে সাহসী ও বিতর্কিত বক্তব্যে বরাবরই সোচ্চার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। হয়েছেন সংবাদের শিরোনাম।