এই মৌসুমে আইপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচেই দুর্দান্ত প্যাট কামিন্স
এই মৌসুমে আইপিএলে নিজের প্রথম ম্যাচেই দুর্দান্ত প্যাট কামিন্স

হতভম্ব করে দেওয়া ইনিংসের পর কামিন্স, ‘আমি নিজেই অবাক’

শ্রেয়াশ আইয়ারই বললেন ঘটনাটা। প্যাট কামিন্সের এমন দুর্দান্ত ইনিংস দেখে তিনি অবাকই কেবল নন, হতভম্বও! তাঁর দূরতম কল্পনাতেও নাকি ছিল না অস্ট্রেলীয় টেস্ট অধিনায়কের কাছ থেকে এমন কিছু কলকাতা নাইট রাইডার্স পেতে পারে। ১৫ বলে ৫৬, পঞ্চাশ পেরোলেন ১৪ বলে, হাঁকালেন ৪ বাউন্ডারি, ৬ ছক্কা—দল পেল সহজ জয়। কামিন্সের এমন বিধ্বংসী ইনিংসে আইয়ার নিজে কেন অবাক তাঁর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। ম্যাচের আগের দিন নেট অনুশীলনে নাকি ব্যাটেই বল লাগাতে পারছিলেন না কামিন্স। আইয়ার বলেছেন, ‘আগের দিন নেটে সে শুধু বোল্ড হচ্ছিল। ব্যাটেই বল লাগাতে পারছিল না। আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না, সে-ই এমন একটা ইনিংস খেলতে পারে।’

আগের দিন নেটে যে ব্যাটসম্যানের ব্যাটে-বলে সংযোগ ঘটছিল না, তিনিই খেললেন ১৫ বলে ৫৬ রানের ইনিংস। আইপিএল ইতিহাসে যৌথভাবে দ্রুততম অর্ধশতকের রেকর্ডের মালিক হয়েছেন কামিন্স। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে কামিন্সের কোনো বড় ইনিংসই নেই। টেস্টে দুটি অর্ধশতক আছে। ব্যাটিং যে তিনি টুকটাক পারেন না, সেটি নয়। হয়তো ছোটখাটো ঝোড়ো ইনিংসই প্রত্যাশিত ছিল তাঁর কাছে, কিন্তু তাই বলে এমন দানবীয় ব্যাটিং!

১৫ বলে ৫৬ রানের ইনিংসে মুম্বাইকে ধ্বংস করে দিয়েছেন কামিন্স

শ্রেয়াশ আইয়ার আর কী অবাক হবেন, নিজের ইনিংস দেখে অবাক যে কামিন্সই। কোনো রাখঢাক রাখেননি। এমন ইনিংস খেলার পর হাওয়ায় ওড়েননি। মাটিতে পা রেখেই তাঁর সরল স্বীকারোক্তি—এভাবে ব্যাটিং করবেন কখনো ভাবেনইনি!

বিশ্বের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার হিসেবেই ধরা হয় কামিন্সকে। গত বছরের শেষ দিকে টিম পেইনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর অস্ট্রেলীয় দলের টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্ব পান তিনি। সেটিও বহু বছর পর কোনো অস্ট্রেলীয় পেসারের টেস্ট অধিনায়কত্ব পাওয়ার ঘটনা। হয়েছেন সফলও। ঘরের মাঠে অ্যাশেজ জিতেছেন, ২৪ বছর পর পাকিস্তানে সফরে গিয়ে টেস্ট সিরিজও জিতেছেন। বেশ ফুরফুরে মেজাজ নিয়েই আইপিএলে এসেছিলেন কামিন্স। সেটিও রাঙালেন দারুণভাবেই।

কাল মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে কলকাতা নাইটরাইডার্স ১৬১ রান তাড়া করতে নেমেছিল। ১৪তম ওভারে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্দ্রে রাসেল আউট হওয়ার পর মাঠে নেমে প্রথম বলে যখন একটি রান নিলেন, তখনো কেউ ভাবতে পারেননি কী ঘটতে চলেছে। ওই ওভারেরই শেষ দুই বলে মারলেন একটি চার ও একটি ছক্কা। পরের ওভারে বুমরাকে আবারও একটি ছক্কা আর একটি চার উপহার দেন কামিন্স। ১৬তম ওভারে ড্যানিয়েল শ্যামসকে নিয়ে তিনি রীতিমতো ছেলেখেলাই করলেন। ততক্ষণে ৮ বলে ২২ করে ফেলেছেন। কলকাতার দরকার ৩০ বলে ৩৫। কিন্তু ওই ওভারের শেষেই খেলার যবনিকা। জিতে গেছে কলকাতা!

কামিন্স যেভাবে খেলেছেন, ‘তুলোধুনো’ শব্দটিও সেখানে প্রয়োগ করা যাবে না

চার ওভার হাতে রেখে ম্যাচ জেতার পর কামিন্সের স্বীকারোক্তি, ‘আমিই খুব সম্ভবত সবচেয়ে বেশি অবাক নিজের ইনিংসটি দেখে। ভালো লাগছে যে এমন কিছু করতে পেরেছি। আমি ভেবেছিলাম, নাগালের মধ্যে বল পেলে ব্যাট চালাব। তবে মারার ব্যাপারটা নিয়ে খুব বেশি ভাবিনি।’

তবে এমন ইনিংস খেলার তৃপ্তিটা অন্য রকমই। কামিন্সেরও সেটিই মনে হচ্ছে, ‘আইপিএলে এ মৌসুমে নিজের প্রথম ম্যাচে এমন খেলতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আমি মাঠে কিছুটা ছোট বাউন্ডারির দিকটাকে ব্যবহার করেছি।’

মুম্বাই অধিনায়ক রোহিত শর্মা আরও বেশি হতভম্ব কামিন্সের এই ইনিংস দেখে। প্রতিপক্ষের অধিনায়ক হিসেবে তাঁর পক্ষে এমন কিছু মেনে নেওয়াটা খুবই কষ্টের, ‘আমি আসলে আশা করিনি যে কামিন্স মাঠে নেমে এমন ইনিংস খেলবে। সে যেভাবে খেলেছে, পুরো কৃতিত্বটাই তার। ১৫তম ওভার পর্যন্ত মুম্বাই ম্যাচে ছিল। কিন্তু কামিন্স যা করল...’

রোহিত কথাই শেষ করতে পারলেন না!