ডারবানে শেষ দিনের ব্যাটিং–ব্যর্থতা আর দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারদের আক্রমণাত্মক স্লেজিং ভুলে সেন্ট জর্জেস পার্কে জয়ে চোখ বাংলাদেশের।
মাঠে নামার আগেই কি একটু ‘ব্যাকফুটে’ চলে গেলেন মুমিনুল হক!
ডারবান টেস্টের পর দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারদের স্লেজিং নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করতে ছাড়েননি দলের সঙ্গে থাকা বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির প্রধান জালাল ইউনুস এবং টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদও। সেই টেস্টে না খেললেও ম্যাচ শেষে মাঠে নেমে তামিম ইকবালও দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটারদের আক্রমণাত্মক স্লেজিং নিয়ে আম্পায়ারদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।
কিন্তু পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টকে সামনে রেখে কাল অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকার এক সাংবাদিকের প্রশ্নে মুমিনুলের ‘ডিফেন্সিভ শট’, ‘স্লেজিং নিয়ে আমি কোনো অভিযোগ করিনি। ক্রিকেটে স্লেজিং হবেই। এটা মেনে নিতে হবে। আমি এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ করিনি। আপনি হয়তো ভুল শুনেছেন।’
‘স্লেজিং’ নিয়ে বাংলাদেশের সুর হঠাৎ নরম হয়ে আসার কারণ আছে। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দেওয়াটা যে ভালো চোখে নেয়নি আইসিসি! পোর্ট এলিজাবেথে আসার পর বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টকে নাকি এ নিয়ে জবাবদিহিও করতে হয়েছে ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটের কাছে। পাইক্রফট অবশ্য দুই পক্ষকেই সতর্ক করেছেন মাঠে অসদাচরণ না করতে। তবে বাংলাদেশের জন্য বাড়তি সতর্কবার্তা—এ রকম কিছু হলে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি না দিয়ে তারা যেন সেটা ম্যাচ রেফারি বা আইসিসিকে জানায়।
তারপরও কিংসমিডের উত্তেজনার রেশ থেকে যেতে পারে সেন্ট জর্জেস পার্কে। অন্তত দক্ষিণ আফ্রিকা দলের ভাবেসাবে সেটাই মনে হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ এখন মনেপ্রাণেই চাইছে মনোযোগটা শুধু খেলায় কেন্দ্রীভূত করতে। স্লেজিং নিয়ে উচ্চবাচ্যটা যে বাড়াবাড়ি রকমেরই হয়ে গেছে, আছে সেই উপলব্ধিও।
মুমিনুল অবশ্য ডারবানের নেতিবাচক কোনো কিছুই পোর্ট এলিজাবেথে টেনে আনতে চান না। শেষ দিনে ৫৫ মিনিটে ৭ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হারার চেয়ে তিনি স্মৃতিতে ভাসাতে চাইছেন সেই টেস্টের অর্জনগুলো। প্রথম ইনিংসে মাহমুদুল হাসানের শতক, বোলারদের ভালো বোলিং আর কিছু দুর্দান্ত ফিল্ডিংও আছে সে তালিকায়।
মুমিনুল কাল বলছিলেন, ‘আমরা পাঁচ দিনের মধ্যে চার দিনই খুব ভালো খেলেছি। ওই টেস্টে ইতিবাচক অনেক কিছু ছিল। তাসকিন, খালেদ ভালো বোলিং করেছে। জয় (মাহমুদুল) খুব ভালো ইনিংস খেলেছে, লিটনও খুব ভালো ব্যাটিং করেছে। শুধু শেষ দিন খুব বাজে ব্যাটিং করে ফেলেছি। তবে এখানে সবাই খুব ভালো মেজাজে আছে, সবাই খুব আত্মবিশ্বাসী।’
ডারবানের যে ব্যাপারের পুনরাবৃত্তি মুমিনুল পোর্ট এলিজাবেথে চান না, সেটা ওই দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংই, ‘দ্বিতীয় ইনিংসে আমরা যেভাবে ব্যাটিং করেছি, ওই জায়গায় হয়তো আমাদের আরেকটু দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করতে হবে। আমরা আবার ওই পরিস্থিতিতে পড়লে কী করব, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।’
মাহমুদুলের শতক আর লিটন-মেহেদী হাসান মিরাজদের ব্যাটে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে প্রায় ৩০০ রান এলেও দলের দুই ভরসা মুমিনুল আর মুশফিকুর রহিম যেন নিজেদের ছায়া হয়েই ছিলেন। তাই বলে দ্বিতীয় টেস্টেও তাঁদের ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা থেকে যাবে, সেটি মনে করেন না মুমিনুল। মুশফিককে নিয়ে বলেছেন, ‘ওনাকে নিয়ে কোনো চিন্তাই করি না আমরা। উনি বাংলাদেশ দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান, বিশ্বেরও।
তিনটা ডাবল সেঞ্চুরি আছে। উনি অবশ্যই দ্রুত ফিরে আসবেন।’ আত্মবিশ্বাসী নিজেকে নিয়েও, ‘নিজেকে নিয়েও আমি চিন্তিত নই। আগে কী হয়েছে, তা নিয়ে না ভেবে এখন সামনের ম্যাচে কী হবে, সেটার দিকেই তাকিয়ে আছি।’
পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টের সামনে মুমিনুল একটা ছবিই দেখেন—জয়। হ্যাঁ, কথাটা কাল সরাসরিই বলেছেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক, ‘অবশ্যই আমরা জেতার জন্য খেলব। প্রতিটি সেশন শতভাগ দিয়ে খেলব, এটাই পরিকল্পনা। আগের ম্যাচে কী হয়েছিল, সেসব নিয়ে না ভেবে অন্তত ১২-১৩টি সেশন কীভাবে জিততে পারি, সেই চিন্তা নিয়েই আমরা এগোতে চাই। এই টেস্টে আমরা প্রভাব বিস্তার করে খেলতে চাই।’
কিংসমিড ভুলে সেই প্রভাব সেন্ট জর্জেস পার্কে বাংলাদেশ দেখাক ব্যাটে-বলে।