স্বপ্ন দেখছে পুরো দেশ

>বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে হয়তো পুরো দুনিয়া জ্বরে কাঁপে না, কিন্তু এ আসরে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স দেখার জন্য গোটা দেশ উন্মুখ হয়েই আছে। নিজে দুটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। বাংলাদেশের সাফল্যে অবদান রেখেছেন। বিশ্বকাপ শুরুর দিন দূরবীক্ষণে চোখ রেখে এর রোমাঞ্চ নিয়ে লিখেছেন ক্রিকেটার আবদুর রাজ্জাক।

বিশ্বকাপের পর্দা উঠছে আজ। ফুটবল বিশ্বকাপের মতো হয়তো পুরো দুনিয়া জ্বরে কাঁপছে না; তারপরও এই ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে উৎসাহী বা চার বছর ধরে আজকের দিনের ক্ষণ গুনেছেন—এমন মানুষের সংখ্যাও কিন্তু কম নেই। আমাদের দেশের কথা ভাবলে তো পুরো দেশই অপেক্ষা করে আছে বিশ্বকাপের পর্দা ওঠার। সেটি হয়তো মাশরাফির দলটার জন্যই। গত বিশ্বকাপের পর থেকেই বাংলাদেশ যে ধরনের ইতিবাচক ক্রিকেট খেলেছে, তাতে বিশ্বমঞ্চে এ দলটির নৈপুণ্য দেখার জন্য গোটা দেশ তো উন্মুখ হয়েই থাকবে।

সে প্রসঙ্গে পরে আসি। আগে ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ নিয়ে আমার নিজের একটা অনুভূতির কথা বলি। ক্রিকেটের জন্ম, ঐতিহ্য সব মিলিয়ে ইংল্যান্ডে খেলাটা আমার জন্য খুব রোমাঞ্চকর ছিল সব সময়ই। তবে আমার খেলার সময়ে খুব বেশি সুযোগ হয়নি ওখানে খেলার। তাই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ আমার কাছে বাড়তি আকর্ষণের।

বাংলাদেশ দল যখন প্রথম বিশ্বকাপ খেলল ১৯৯৯ সালে, তখনো হয়তো আমি বিশ্বকাপে খেলার কথা ভাবিনি। কিন্তু বুলবুল ভাই (আমিনুল ইসলাম), আকরাম ভাইদের বিশ্বকাপ খেলতে দেখে রোমাঞ্চিত হয়েছি। পরে নিজে যখন জাতীয় দলে খেলা শুরু করেছি, তখন তো আর ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ হয়নি। এবার যখন আবার ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ খেলছে দল, তখন আমি সেই দলে নেই। ভাবতে এখন মজা পাই, ২০ বছরের ব্যবধানে দুবার ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ হচ্ছে। প্রথমবার আমি জাতীয় দলে খেলার মতো বড় হইনি। এবার মনে হয় একটু বেশিই বড় হয়ে গেছি।


আয়োজক ইংল্যান্ড ছাড়াও এবারের বিশ্বকাপের আরেকটা ব্যাপার আমাকে খুব আকর্ষণ করছে। সেটি হলো ফরম্যাট। আবার ১৯৯২-এর সেই ফরম্যাটে ফিরছে বিশ্বকাপ। সব দল অন্তত ৯টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবেই।

তাতে শুরুতে হোঁচট খেলেও যেকোনো দলের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকবে শেষ পর্যন্ত। গ্রুপ পর্বে একটি অঘটন যেমন অনেক সময় অনেক দলকে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে দেয়, এবার সেটি হবে না। মোদ্দাকথা, দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটা বিশ্বকাপ দেখতে চলেছি আমরা।

সবাই মনে করছে, বড় রানের ক্রিকেট বিশ্বকাপ হতে চলেছে এবার। আমিও দ্বিমত পোষণ করছি না। তবে আমি এ-ও মনে করি না যে একেবারে ব্যাটসম্যানদের বিশ্বকাপই হতে চলেছে। বিশেষ করে বিশ্বকাপের শেষ ভাগে গিয়ে ‘ক্লান্ত’ উইকেটে কিন্তু কম রানের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ দেখতে পারি আমরা।

পেস বোলারদের জন্য ইংল্যান্ডে যে কাজটা কঠিন হবে, সেটি হলো সঠিক লেন্থটা খুঁজে বের করা। এর সঙ্গে বৈচিত্র্য ধরে রেখে বল করতে পারলে ম্যাচের ভাগ্যনিয়ন্তা হয়ে উঠতে পারেন বোলাররাও। আর ইংল্যান্ডের উইকেট বলে স্পিনারদের নিয়ে হয়তো কেউ খুব বেশি মাতামাতি করছে না। কিন্তু আমার মনে হয়, আমরা এমন অনেক ম্যাচই দেখব, যেখানে স্পিনাররাই পার্থক্য গড়ে দিচ্ছেন। আসলে বিশ্বকাপের মঞ্চে প্রত্যেকের হাতেই সুযোগ থাকবে নিজেকে আলাদা করে চেনানোর।

সাম্প্রতিক ফর্মের বিচারে ইংল্যান্ড-ভারত দারুণ খেলবে বলেই মনে হচ্ছে। আবার অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজও কিন্তু ছড়ি ঘোরাতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকা-নিউজিল্যান্ড হয়তো নিজেদের শিরোপাশূন্যতা ভরিয়ে তুলতে চাইবে এবার। পাকিস্তান তো বরাবরই অনুমানের বাইরের একটা দল। তবে যদি বিশ্বকাপ কারা জিতবে—আমাকে প্রশ্ন করেন, আমার মনে হয় প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি মনে হচ্ছে। আমার চার সেমিফাইনালিস্ট এমন—ইংল্যান্ড, ভারত, অস্ট্রেলিয়া...চতুর্থ দলটা আমি চাইব বাংলাদেশ। হ্যাঁ, সেই সম্ভাবনা খুব ভালোভাবেই আছে বাংলাদেশের।

শুধু আমি নই, পুরো বাংলাদেশই এই স্বপ্নটা দেখছে। তবে সেটি যে সত্যি হবেই, এমন কিছু বলা যাবে না। তবে একটা ব্যাপার বিশ্বাস করি, এবার খুব ভালো ক্রিকেট খেলবে বাংলাদেশ।

লেখক: আবদুর রাজ্জাক, ক্রিকেটার