বাংলাদেশ দলের কোচ থাকার সময়ে সাকিবের সঙ্গে ল
বাংলাদেশ দলের কোচ থাকার সময়ে সাকিবের সঙ্গে ল

সাক্ষাৎকারে স্টুয়ার্ট ল

বাংলাদেশের জয়ে একদমই অবাক হইনি

বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া দুই দলের ড্রেসিংরুমই দেখেছেন তিনি। বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচ ছিলেন, আর অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তো খেলেছেনই। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১টি টেস্ট ও ৫৪টি ওয়ানডে খেলা সাবেক এই ক্রিকেটার বর্তমানে আছেন ইংলিশ কাউন্টি দল মিডলসেক্সের প্রধান কোচের দায়িত্বে।

২০১১ বিশ্বকাপের পর দুই বছরের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নিলেও এক বছর কাজ করেই পারিবারিক কারণে চাকরি ছেড়ে চলে যান ল। ২০১৬ যুব বিশ্বকাপের আগে আবার তিনি দায়িত্ব নেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের উপদেষ্টার। স্টুয়ার্ট ল লন্ডনে বসেই দেখেছেন বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজটি।

মুঠোফোনে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি কথা বলেছেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যর্থতা ও বাংলাদেশের সাফল্য নিয়ে—

প্রশ্ন: সদ্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ যেভাবে অস্ট্রেলিয়াকে হারাল, দেখে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন…

স্টুয়ার্ট ল: নিজেদের কন্ডিশনে বাংলাদেশকে হারানো কঠিন। দলটার স্পিন আক্রমণ খুবই ভালো। এখন তো ইনিংসের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পেসারদেরও ওরা বেশ ভেবেচিন্তে ব্যবহার করছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তাদের এই সাফল্যে আমি একদমই অবাক হইনি।

প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় তো এই সিরিজের কোনো খেলাই দেখানো হয়নি। ইংল্যান্ডে থাকায় আপনি তাও সিরিজটা দেখতে পারলেন। দলের পরাজয় দেখতে নিশ্চয়ই ভালো লাগেনি…

ল: দেখুন, নিজের দেশের দলকে হারতে দেখা কখনোই সুখকর অভিজ্ঞতা নয়, তা আপনি যেখানেই থাকুন। এই সিরিজে বাংলাদেশ খুবই ভালো খেলেছে। তাদের জন্য টুপিখোলা অভিনন্দন। যদিও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, তবু কেন জানি দলটাকে ভালো খেলতে দেখে আমারও ভালো লেগেছে। বাংলাদেশে আমার চমৎকার সময় কেটেছে।

যখন বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন ল

প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়াকে এভাবে হারতে দেখে ইংল্যান্ডের মানুষের প্রতিক্রিয়া কী? আপনাকে নিশ্চয়ই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে…

ল: (হাসি) তেমন কিছু বলে না, ওরা শুধু আমাকে দেখে হাসে। আসলে শুধু ক্রিকেট নয়, অস্ট্রেলিয়া যেকোনো খেলায় হারলেই এই দেশের (ইংল্যান্ড) মানুষ সেটা নিয়ে কথা বলতে শুরু করে।

প্রশ্ন: খেলা দেখে অস্ট্রেলিয়া দলের ব্যর্থতার কী কারণ চোখে পড়েছে আপনার?

ল: বেশ কয়েকজন বড় বড় খেলোয়াড়ের না খেলাটা একটা কারণ তো অবশ্যই। তা ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা বরাবরই স্পিনের বিপক্ষে দুর্বল। এ ধরনের কন্ডিশন তাদের জন্য অপরিচিতও।

প্রশ্ন: কিন্তু বিশ্বের সব দলকেই তো দেশের বাইরে গিয়ে অপরিচিত কন্ডিশনে খেলতে হয়। অস্ট্রেলিয়াও জানত বাংলাদেশে তাদের জন্য কী ধরনের কন্ডিশন অপেক্ষা করছে…

ল: সেটা ঠিক। তবে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা সাধারণত উপমহাদেশে গিয়ে স্পিনের বিপক্ষে সংগ্রামই করে। আমরা দেশের উইকেটে স্পিনটা যেভাবে খেলি, ওখানে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই একটু অন্যভাবে খেলতে হবে।

তামিম ইকবালের সঙ্গে ল

প্রশ্ন: এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে তাদের কী করা উচিত বলে মনে করেন?

ল: ওখানে (উপমহাদেশে) আগে যারা খেলে এসেছে, তাদের সঙ্গে কথা বলে সে সম্পর্কে জানতে হবে। ওই ধরনের উইকেটে কীভাবে স্পিন খেলতে হবে, সেটা এখনো আমাদের ব্যাটসম্যানরা শিখছে। কাজটা সহজ নয়, তবে তাদের স্পিন খেলার উপায় খুঁজে বের করতেই হবে। সেরা হতে চাইলে যেকোনো কন্ডিশনে মানিয়ে নিতে জানতে হবে।

প্রশ্ন: কন্ডিশনের বাইরে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং ব্যর্থতার আর কোনো কারণ কি চোখে পড়েছে আপনার? বাংলাদেশের বোলিং নিয়ে কী বলবেন?

ল: বাংলাদেশ আসলেই দুর্দান্ত খেলেছে। তাদের পরিকল্পনা, প্রস্তুতি সবই খুব ভালো ছিল। সেগুলো তারা মাঠেও খুব ভালোভাবে বাস্তবায়ন করেছে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশে কিছুটা অনভিজ্ঞ দল পাঠিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। সিরিজের ফলাফল দেখে কি মনে হচ্ছে সিদ্ধান্তটা সঠিক ছিল না?

ল: এখন যে পরিমাণ খেলা হয় বা খেলোয়াড়দের যে পরিমাণ ম্যাচ খেলতে হয়, এত ম্যাচ খেলা আসলে সম্ভব নয়। করোনা মহামারি বিষয়টা আরও কঠিন করে দিয়েছে। আমি মনে করি এটা ঠিকই আছে। একেবারেই কোনো দল না পাঠানোর চেয়ে এ রকম একটা দল পাঠানোই ঠিক ছিল।

মোস্তাফিজ দারুণভাবে ফিরে এসেছেন বলে মনে করেন ল

প্রশ্ন: একসময় আপনি বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন। পরে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের দায়িত্ব নেন। দুই সময়ের অনেক খেলোয়াড়ই বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় দলে আছেন। এই সিরিজে কেমন দেখলেন তাঁদের?

ল: আমার সময়ে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলা সাইফউদ্দিন ও মিরাজ (মেহেদী হাসান) এখন জাতীয় দলে খেলছে। এটা আমার জন্য খুবই আনন্দের। একই সঙ্গে ভালো লাগছে জাতীয় দলের হয়ে রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) ও সাকিবের ভালো পারফরম্যান্স দেখে। দুজনই অসাধারণ ক্রিকেটার। অভিজ্ঞতার সঙ্গে তারা এখন অনেক পরিণত। মোস্তাফিজকেও দেখলাম কিছুদিন আড়ালে থাকার পর দারুণভাবে ফিরে এসেছে। একেবারেই নতুন কিছু ক্রিকেটারও দেখলাম। তারাও তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। প্রত্যেকেই দারুণ প্রতিভা।

প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে দুই দলের খেলায় এই সিরিজ কেমন প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন?

ল: সাফল্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এটা আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ দল সেই আত্মবিশ্বাসটা এই সিরিজ থেকে ভালোভাবেই তুলে নিল। অন্যদিকে বিশ্বকাপের আগে এখন দুর্বল জায়গাগুলোর দিকে অস্ট্রেলিয়াকে মনোযোগ দিতে হবে। তবে আশার কথা, বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া দলে বড় বড় নাম ফিরে আসবে। আর সংযুক্ত আরব আমিরাতের উইকেটও বাংলাদেশের চেয়ে ভিন্ন হবে।