ড্যারেন স্যামি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের প্রেসবক্সে নিজের কাজে ব্যস্ত রোনাল্ড কক্স
ড্যারেন স্যামি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের প্রেসবক্সে নিজের কাজে ব্যস্ত রোনাল্ড কক্স

ক্যারিবীয় ডায়েরি

স্কোরার কক্সের ‘খেপ’ যখন ‘বেটিংয়ে’

রোনাল্ড কক্সকে ‘স্ট্যাটস পারফর্ম’ নামের বেটিং–সহায়ক প্রতিষ্ঠানে চাকরিটা দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড।

রোনাল্ড কক্স কাজ করেন একটি বেটিং–সহায়ক প্রতিষ্ঠানের হয়ে। তিনি বসেন প্রেসবক্সে। প্রথম ও দ্বিতীয় তথ্য ব্যাপক সাংঘর্ষিক। ভাবছেন, বাজিকর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত লোক আবার প্রেসবক্সে কী করেন? তাঁর তো মাঠের ধারেকাছেই থাকার কথা নয়!

দাঁড়ান, আরও অবাক করা তথ্য আছে। রোনাল্ড কক্সকে ‘স্ট্যাটস পারফর্ম’ নামের বেটিং–সহায়ক প্রতিষ্ঠানে চাকরিটা কারা দিয়েছে জানেন? ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড। শুধু তা–ই নয়, এই কক্স সাহেব ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের একজন স্কোরার এবং ওটাই তাঁর আসল চাকরি। ‘স্ট্যাটস পারফর্ম’–এর হয়ে যে কাজ তিনি করেন, বাংলায় সেটির মানে দাঁড়ায় আসলে ‘খেপ’। তবে আসল চাকরির চেয়ে কক্স সাহেবকে খেপটাই বেশি মারতে হয় বলে মনে হয়।

রোনাল্ড কক্স

অ্যান্টিগা টেস্টের প্রেসবক্সে তিনি ছিলেন না। না–ই থাকতে পারেন। এখানে যে দ্বীপে খেলা, সেই দ্বীপের লোকজনই মাঠের কাজকর্মে বেশি সম্পৃক্ত থাকেন। কক্স সেন্ট লুসিয়ার মানুষ, তাই তিনি এখানে। তবে কাল ড্যারেন স্যামি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের প্রেসবক্সে পরিচয়ের পর অ্যান্টিগা টেস্টের প্রসঙ্গ তুলতে কক্স দিলেন ভিন্ন ব্যাখ্যা, ‘আমি আসলে তখন দেশে ছিলাম না। স্ট্যাটস পারফর্মের হয়ে কাজ করতে বিদেশে কয়েকটি ম্যাচে উপস্থিত থাকতে হয়েছে।’

‘স্ট্যাটস পারফর্ম’ বেটিং–সহায়ক প্রতিষ্ঠান জেনে শুরুতে অবাকই হয়েছিলাম। পরে কক্সের সঙ্গে কথা বলে ভুল ভাঙল। এসব দেশে বাজি গড়াপেটা করা অবৈধ হলেও বাজি ধরা অবৈধ নয়। সেদিক দিয়ে বেটিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত কেউ খেলার মাঠে থাকতেই পারেন। আর কক্স তো সরাসরি বেটিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্তও নন। তাঁদের কাজ পরিসংখ্যান নিয়ে।

সেটি নিয়ে আরও অনেকের মতো বেটিং প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের কাজে ব্যবহার করে। আমার দ্বিধান্বিত অবস্থা দেখেই কিনা কক্স বললেন, ‘দেখো, এখানে আজ আমি ম্যাচের স্কোরিংটাই করতে এসেছি, যেটা আমার চাকরি। তবে একই সঙ্গে আমাকে স্ট্যাটস পারফর্মকেও সাহায্য করতে হচ্ছে।’

টেস্টের প্রথম দিনে দাপট দেখিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ

স্কোরিংয়ের মতো জটিল কাজের সঙ্গে আরেকটা কাজ, সেটাও পরিসংখ্যাননির্ভর! কীভাবে সম্ভব? প্রশ্ন শুনে আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যায় চলে গেলেন কক্স, ‘স্ট্যাটস পারফর্ম কাজ করে মূলত খেলার পরিসংখ্যান নিয়ে। কাজটা স্কোরিংয়ের চেয়েও কঠিন। স্কোরিংয়ে একটা ডট বলে আমাকে একটা জায়গায় ইনপুট দিলেই হয়, স্ট্যাটস পারফর্মে ইনপুট দিতে হয় সাতটা জায়গায়।’

কক্স তাঁর কাজ সম্পর্কে এরপর যা বললেন, তার সারমর্ম দাঁড়ার এ রকম—ধরুন একটা বল ডট হলো, সেটা কোথায় পড়ে ডট হলো এবং বলটা কেমন ছিল, ব্যাটসম্যান এই বলে কী করতে চাইলেন, বলটা নিয়ে ওয়াগন হুইল বানানো, এ রকম আরও অনেক তথ্যই তাঁদের দিতে হয়। ম্যাচের প্রতিটি বলেই এগুলো করতে হয়।

স্কোরিংয়ের পাশাপাশি এত কিছু যে আসলেই সম্ভব নয়, সেটা কক্সের ভালোই জানা, ‘স্ট্যাটস পারফর্মের হয়ে এই টেস্টে কাজটা করেছেন আরেকজন, আরেক জায়গায় বসে। স্কোরিংয়ের পাশাপাশি আমার কাজ হলো ও কিছু ভুল করছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখা। ভুল ধরা পড়লে আমি তাকে জানাব।’

রোনাল্ড কক্স

কথা বলতে বলতেই এই প্রতিবেদকের কাছে একটা সাহায্য চাইলেন রেনাল্ড কক্স। ল্যাপটপের মনিটর দেখিয়ে বললেন, ‘এখানে কিছু তথ্য আছে, দেখ তো ঠিক আছে কি না...।’ তাকিয়ে দেখলাম, মনিটরে ড্যারেন স্যামি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে হওয়া আগের ৯টি টেস্টের সারাংশ, যেখানে বাংলাদেশেরও দুটি টেস্ট ম্যাচ আছে। কক্সের মূল জানার বিষয়, ওই দুটি ম্যাচের তথ্যগুলো ঠিকভাবে তোলা হয়েছে কি না।

এ ছাড়া ২০১৪ সালের টেস্টে খেলা কে কে আছেন এবারের দলে, জানতে চাইলেন সেটাও। বললাম, তামিম ইকবাল আর এনামুল হক আছেন। সেই টেস্টে খেলা মুমিনুল হক, তাইজুল ইসলামও আছেন এবারের স্কোয়াডে, সেন্ট লুসিয়া টেস্টে এই দুজন খেলছেন না।

এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নয় যদিও, তারপর মনে হলো, ‘গোপন’ কিছু বলে দিলাম না তো? বেটিংয়ের জাল তো নাকি অনেকভাবেই ছড়িয়ে থাকে!