>এক বছর আগে ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ সন্ত্রাসী হামলায় কেঁপে উঠেছিল নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিল সে হামলা থেকে। বাংলাদেশের ক্রিকেট সেদিন রক্ষা পেয়েছিল অভাবনীয় এক বিপর্যয় থেকে
এক বছর আগে ঠিক এই দিনে বাংলাদেশে সকালটা শুরু হয়েছিল একরাশ উৎকণ্ঠা নিয়ে। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে এক সন্ত্রাসী জুমার নামাজের সময় মসজিদে গুলি করে হত্যা করেছিল নিরীহ মানুষদের। সে মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার কথা ছিল নিউজিল্যান্ড সফররত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের। ভাগ্যক্রমেই সেদিন বেঁচে গিয়েছিলেন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহরা।
ক্রাইস্টচার্চে পরদিন থেকেই শুরু হওয়ার কথা ছিল সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। সকালে অনুশীলন করে খেলোয়াড়দের যাওয়ার কথা ছিল মসজিদে। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ করছিলেন সংবাদ সম্মেলন। সংবাদকর্মীদের প্রশ্নে প্রশ্নে সেটি শেষ হতে কিছুটা দেরিই হয়ে গিয়েছিল। অধিনায়কের জন্য অপেক্ষায় ছিল বাংলাদেশ দল। কিছুটাও তাগাদাও আসছিল। নামাজে যেতে হবে যে! কী অদ্ভুত ব্যাপার, সংবাদ সম্মেলনের সেই দেরিই যে বাঁচিয়ে দিয়েছিল ক্রিকেটারদের।
বাংলাদেশ দলের বাস যখন মসজিদের সামনে, ঠিক তখনই রক্তাক্ত শরীর নিয়ে এক নারী মসজিদের ভেতর থেকে টলোমলো পায়ে বেরিয়ে পড়ে যান। ক্রিকেটাররা তখনো বুঝতে পারেননি, কী ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেছে ভেতরে! দলের সঙ্গে ছিল না কোনো নিরাপত্তাকর্মী, এমনকি কোনো লিয়াজোঁ অফিসারও। তামিমরা হয়তো মসজিদেই ঢুকে যেতেন। কিন্তু বাসের পাশে নিজের গাড়ি নিয়ে এসে এক নারী চিৎকার করে তাঁদের মসজিদে ঢুকতে নিষেধ করেন। বলেন, ‘তোমরা ভেতরে যেয়ো না। ওখানে গোলাগুলি চলছে।’
বাসে অবরুদ্ধ হয়ে বসেই ভয়াবহ দৃশ্য দেখেন ক্রিকেটাররা। রক্তাক্ত লোকজন চারদিকে পড়ে আছে। কী করবেন তাঁরা ভেবে উঠতে পারছিলেন না। আতঙ্কে অস্থির হয়েই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, যেভাবেই হোক ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভাল মাঠে ফিরে যেতে হবে। মোটামুটি দূরত্বে হ্যাগলি ওভালে তাঁরা সেদিন ফেরেন হেঁটেই। আতঙ্কিত ক্রিকেটারদের একটি পার্কের মধ্য দিয়ে হ্যাগলি ওভালে ফেরার সেই দৃশ্য হয়তো কোনো দিনই ভুলবেন না দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা।
বাংলাদেশ দলের মসজিদে ঢোকার কথা ছিল বেলা দেড়টায়। সংবাদ সম্মেলনটাই সেদিন বড় রক্ষা কবচের ভূমিকা রেখেছিল। কারণ সেটি শেষ হয়েছিল ১টা ৪০ মিনিটেরও পর। ঠিক সময়ে মাহমুদউল্লাহর সংবাদ সম্মেলনটি শেষ হলে কী হতো, এটা ভেবে শিউরেই উঠতে হয়।
এমন ঘটনার পর ক্রিকেট খেলার প্রশ্নই ওঠে না। ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট বাতিল হয়ে যায় সেদিনই। দলও দেশে ফিরে আসে পরদিনই। গুলির শব্দ, রক্তাক্ত মৃতদেহ—এমন ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি যেন আর কাউকেই হতে না হয়।