হাতে লাল চকচকে নতুন বল। টেস্ট ক্রিকেটে আনকোরা লাল বল দেখলেই নড়েচড়ে বসেন সবাই। সেটা দ্বিতীয় নতুন বল হলে আরও বেশি। ঝিম মেরে আসা দিনটা চনমনে করতে নতুন বলের চেয়ে ভালো কিছু আর কী হতে পারে!
সেই নতুন বলটা মার্কো ইয়ানসেন ফেললেন অনেক বাইরে, লেংথটাও একদম ব্যাটসম্যানের মনের মতো। অজিঙ্কা রাহানে ব্যাটে বলটা লাগানোর পর, সে বলের ভাগ্য নিয়ে কারও মনে এক বিন্দু সন্দেহ থাকল না। ক্রাঞ্চ!
পয়েন্ট দিয়ে মারা সে চারটা সেঞ্চুরিয়ন টেস্টের পুরো দিনের বিজ্ঞাপন। ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্বলতম দল নিয়ে নামা দক্ষিণ আফ্রিকা পুরো দিনটাই পিছিয়ে ছিল। শেষ বিকেলেও এর অন্যথা হবে কেন! সেঞ্চুরিয়নে ৩ উইকেটে ২৭২ রান তুলেছে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ জেতার আশায় যাওয়া ভারত।
সর্বশেষ যখন ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে বল করেছিলেন, কাগিসো রাবাদার ও লুঙ্গি এনগিডির কাঁধে কোনো দায়িত্ব ভার হয়ে চেপে বসেনি। বোলিং আক্রমণে যখন ডেল স্টেইন, মরনে মরকেল আর ভারনন ফিল্যান্ডার থাকে, তখন তরুণ রাবাদার চাপ নিয়ে না ভাবলেও চলছিল। ফিল্যান্ডারের মতোই ১৫ উইকেট পেয়েছিলেন নির্ভার রাবাদা। স্টেইনের বদলে দুই ম্যাচে নেমে ৯ উইকেট পেয়েছিলেন এনগিডিও।
আজ তাঁরা দুজন যখন নতুন বলের দায়িত্ব নিয়ে নেমেছেন, তখন দলের সব ভার তাঁদের কাঁধে। চতুর্থ পেসার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা নামিয়েছে অলরাউন্ডার উইয়ান মুল্ডারকে। আর তৃতীয় পেসার আজই অভিষিক্ত মার্ক ইয়ানসেন। ২০১৮ সালে নেটে বল করতে এসে বিরাট কোহলির সঙ্গে তোলা ইয়ানসেনের ছবিটাও তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ ঘোরাফেরা করছিল।
অভিষেকের দিনে অন্য কোনো কারণে আলোচনার উপায়ও রাখেননি ইয়ানসেন। ৮১তম ওভারে যেমন দ্বিতীয় নতুন বলটা একটা বাউন্ডারি দিয়ে উদ্বোধন করেছেন, তাঁর টেস্টে করা প্রথম বলটাও এভাবে সীমানায় ছুটে গিয়েছিল। নিজের প্রথম ওভারে তিন চার হজম করে টেস্ট ক্রিকেট কত কঠিন, সেটা টের পেয়েছেন ইয়ানসেন।
শুধু ইয়ানসেন কেন, দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো বোলারই তো আজ দাগ কাটতে পারছিলেন না। দশম ওভারেই তাই ইয়ানসেনের আবির্ভাব। ১২তম ওভারে মুল্ডারও বল হাতে পেয়ে গেলেন। কেশব মহারাজ বল পেলেন অবশ্য মধ্যাহ্নবিরতির আগে শেষ ওভারে। ভারতের দুই ওপেনার সে ওভারটি অনায়াসে সামলে লাঞ্চে গেছেন। বিনা উইকেটে ৮৩ রান নিয়ে বিরতিতে গিয়ে একটি কীর্তিও ছুঁয়েছেন কে এল রাহুল ও মায়াঙ্ক আগারওয়াল। ২০০৭ সালের কেপটাউন টেস্টের পর এই প্রথম দেশের বাইরে কোনো টেস্টের প্রথম সেশনে উইকেট হারায়নি ভারত।
তবে এটা না–ও হতে পারত। ৫২ রানেই উইকেট হারাতে পারত ভারত। যদি ইয়ানসেনের বলে আগারওয়ালের দেওয়া কঠিন ক্যাচটি ধরতে পারতেন কুইন্টন ডি কক। ৩৬ রানে জীবন পাওয়া আগারওয়াল শেষ পর্যন্ত থামলেন ৪১তম ওভারে।
৬০ রানে থাকা আগারওয়ালের প্যাডে বল লাগলে জোরালো আবেদন করে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু আম্পায়ার এরাসমাস তাতে সায় দেননি। একদম শেষ মুহূর্তে রিভিউ নেন অধিনায়ক ডিন এলগার। রিভিউতে আউটের সিদ্ধান্তই জানানো হয়। ততক্ষণে উদ্বোধনী জুটিতে ১১৭ রান এসে গেছে। ১১ বছর ও ১৫ ইনিংস পর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ভারতীয় কোনো উদ্বোধনী জুটি শতক পেরোল।
পরের উইকেট পেতে আবার ৪০.২ ওভার দরকার হয়নি স্বাগতিকদের। পরের বলেই এনগিডি ফিরিয়ে দিয়েছেন চেতেশ্বর পূজারাকে। হ্যাটট্রিক বলটা সামলে বিরাট কোহলি ভালোই সঙ্গ দিয়েছেন রাহুলকে। এতক্ষণ আগারওয়ালের পাশে সহযোগীর ভূমিকায় থাকা রাহুল দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন তৃতীয় উইকেট জুটিতে। দুজনে মিলে দ্বিতীয় সেশনটা কাটিয়ে দিয়েছেন। তৃতীয় সেশনেও রাবাদাদের হতাশ করছিলেন দুজন।
দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের একটু আশা বাড়িয়েছিলেন কোহলি। বেশ কিছুক্ষণ রান আটকে দিয়ে ফাঁদ পেতেছিলেন এনগিডি। তারপর অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে গুড লেংথে বল ফেলেছেন। ড্রাইভ করতে গিয়ে তৃতীয় স্লিপে ধরা পড়েছেন ফর্মে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠা কোহলি (৩৫)।
দক্ষিণ আফ্রিকার তবু ম্যাচে ফেরা হয়নি। ওয়াসিম জাফরের (১১৬, ২০০৭) পর মাত্র দ্বিতীয় ভারতীয় ওপেনার হিসেবে শতক পেয়েছেন রাহুল। রাহানেকে (৪০*) নিয়ে অসমাপ্ত চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৭৩ রান এনে দিয়েছেন। ১৭ চার ও ১ ছক্কায় ১২২ রান নিয়ে প্রথম দিন শেষ করেছেন রাহুল। ৪৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে প্রথম দিনের একমাত্র সফল বোলার এনগিডি।