>ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেও আফসোস সৌম্য সরকারের। দল যদি জিততে পারত অথবা ম্যাচটা নিদেনপক্ষে ড্র হতো! দল হারায় এই সেঞ্চুরির কোনো মূল্যই নেই তাঁর কাছে।
প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির আনন্দটাই তো অন্যরকম। ক্রিকেটের ধ্রুপদি সংস্করণে নিজের সামর্থ্যের জানান দেওয়া! ক্রিকেটারদের ‘ক্রিকেটার’ হয়ে ওঠার পেছনে তো এই স্বপ্নটাই তো তাড়া করে—টেস্ট ক্রিকেটে সাদা পোশাকে একটা তিন অঙ্কের সংগ্রহ। আর সেই সেঞ্চুরিটি যদি হয় প্রতিপক্ষের ডেরায়, কঠিন পরিস্থিতিতে, সেটি তো অন্য মাত্রাই বহন করে। সৌম্য সরকারের সেঞ্চুরিটিও ঠিক তেমন। কিন্তু এমন দারুণ একটা ইনিংস খেলার পর তিনি সেটি উপভোগ করতে পারছেন না। কারণ সৌম্যর কাছে দেশ একটা ‘সামান্য’ সেঞ্চুরির চেয়ে অনেক বড় কিছু। হ্যামিল্টনে দেশ হেরেছ ইনিংস ব্যবধানে, সেঞ্চুরি উদ্যাপনের সুযোগ কোথায়?
তাহলে কী নিজের প্রথম টেস্ট শতক নিয়ে সৌম্যর কোনো অনুভূতি নেই! এমন কিছু আবার বাড়াবাড়ি হয়ে যায়। সুখানুভূতি তো অবশ্যই আছে। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর সর্বশেষ পঞ্চাশ পেরোনো ইনিংস তো সেই ২০১৭ সালে। রান পাচ্ছিলেন না বেশ কিছু দিন ধরেই। এর মধ্যে নিউজিল্যান্ডের বোলারদের সুইং, বাউন্স আর পেস সামলিয়ে টেস্টে একটা সেঞ্চুরি করে ফেলা তো আর বিশেষ কিছু নয়। কিন্তু সৌম্যকে পোড়াচ্ছে দেশের হারই, ‘টেস্ট সেঞ্চুরি করে তো অবশ্যই ভালো লাগছে। এটা আমার প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। কিন্তু ম্যাচটা তো হেরেছি। এ জন্য আক্ষেপ থাকবেই। যদি জিততাম, বা ড্র করতে পারতাম, তাহলে অনুভূতিটা অন্যরকম হতে পারত।’
নিজে ভালো খেলেছেন, অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ভালো খেলেছেন, কিন্তু এত কিছুর পরেও ইনিংস হার সঙ্গী হওয়াটা মেনে নিতে পারছেন না তিনি, ‘খারাপ লাগছে আউট হয়ে গিয়েছি। থাকতে পারলে ওরা আবার নামত। আমি থাকলে রিয়াদ ভাই (মাহমুদউল্লাহ) আরও ভালো খেলতেন। আমরা দুজনই ২০০ করতে পারলে আজকে হয়তো খেলাই শেষ হতো না।’
হ্যামিল্টনের এই শতক সৌম্যকে অনেক কিছু শিখিয়েছেও, ‘যে সময়টায় ব্যাটিং করছিলাম, পরিস্থিতিটা খুব কঠিন ছিল। নিউজিল্যান্ডের বোলাররা যে পরিকল্পনায় বোলিং করছিল, তেমন পরিকল্পনায় আগে কখনো ব্যাটিং করিনি। বল বাউন্স করছিল, এর মধ্যে টিকে থাকাটা খুব কঠিন ছিল। অনেক রান মাথার ওপরে ছিল। তার ওপর দুই দিন ব্যাটিং করতে হবে। রিয়াদ ভাইয়ের সঙ্গে পরিকল্পনা করেই এগিয়ে যাচ্ছিলাম। তারপরেও আমরা যদি প্রথম ইনিংসে আরও রান করতাম, তাহলে আমাদের জন্যই ভালো হতো। তাহলে খেলাটা নিদেনপক্ষে ড্রয়ের দিকে এগোত।’
সৌম্যর এমন অনেক ইনিংস আছে যেসবে ভালো শুরুর পরেও তা দীর্ঘ করতে পারেননি। সবকিছু চিন্তা করেই আজ নিজেকে একটু অন্যভাবে দেখতে চেয়েছিলেন তিনি, ‘আমি চেষ্টা করে গিয়েছি উইকেটে টিকে থাকার। আমি সে সময় তাড়াহুড়ো করলে হয়তো দলের বিপদ বাড়তে পারত। দলের আরও খারাপ হতো। ওরা যেভাবে বোলিং করছিল, আমি উইকেটে টিকে থেকে উইকেটের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে চেষ্টা করেছি। ওদের বোলারদের বেশি করে খেলতে চেয়েছি। পরে সেট হয়ে বলের মেরিট অনুযায়ী খেলতে চেয়েছি।’
সৌম্য নিজে বলছেন টিকে থাকার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ইনিংসে চোখ ধাঁধানো যে শটগুলি খেললেন, সেটির সমন্বয়টা কীভাবে করলেন তিনি? সৌম্যর উত্তর খুবই সোজা-সাপটা, ‘চিন্তা করেছি ওরা যেভাবে ভালো বোলিং করছিল, তাতে একপর্যায়ে দেখলাম রান না করে কেবল টিকে গেলে হবে না, একটা ভালো বল হয়ে গেলেই আউট হয়ে যাব। নিজের রানটাও করা হবে না। কিন্তু চড়াও হলে ওরা পরিকল্পনা পরিবর্তন করবে। তবে চড়াও হতে চেয়েছি কিছু কিছু বলে। রক্ষণাত্মকের পাশাপাশি আক্রমণাত্মক হওয়ারও চেষ্টা করেছি।’
সৌম্য দলকে জেতাতে চান, জেতার সময় পারফরম করতে চান, সেই পারফরম্যান্স উদ্যাপনেও মজা। আপাতত ভবিষ্যতে সে মজাটা অবশ্যই পেতে চান তিনি, ‘দলের জয় সব সময়ই ভালো লাগে। আর দলের জেতায় পারফরম করতে পারলে সেটি আরও ভালো লাগে। আমি শতরান করেছি। এতে আমি নিজে হয়তো খুশি। কিন্তু দল যেহেতু জেতেনি, তাই এর কোনো মূল্য নেই।’
সৌম্যর সেই উদ্যাপনটা তোলা রইল ভবিষ্যতের জন্যই।