>টেস্ট আর ওয়ানডে মিলিয়ে ২৭০৮২ রান করেছেন ক্যারিয়ারে। কত শত ভয়ংকর বোলারকে সামলেই রানটা করেছেন। কিন্তু রিকি পন্টিংয়ের দুঃস্বপ্ন হয়ে এখনো হয়তো হানা দেয় ২০০৫ অ্যাশেজে এজবাস্টন টেস্টে অ্যান্ড্রু ফ্লিটনফের সেই ওভার।
জীবনে তাবৎ বাঘা বাঘা বোলারদের সামলেছেন। ওয়াসিম আকরাম থেকে শুরু করে কোর্টনি ওয়ালশ, মুত্তিয়া মুরালিধরন থেকে শুরু করে শোয়েব আখতার, ওয়াকার ইউনিস থেকে শুরু করে ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, কার্টলি অ্যামব্রোস থেকে শুরু থেকে শন পোলক - টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান হওয়ার পথে সবার বাধাই পার হয়েছেন রিকি পন্টিং। অনেক বোলারই অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অধিনায়ককে 'উপহার' দিয়েছেন দুঃস্বপ্নের কিছু মুহূর্ত। সেসব মুহূর্তগুলোর মধ্যে সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ীটা বেছে নিয়েছেন পন্টিং।
তবে ওয়াকার-ওয়াসিম-শোয়েবের পাকিস্তান বা অ্যামব্রোস-ওয়ালশের ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয়, নয় পোলক-ডোনাল্ডের দক্ষিণ আফ্রিকা বা ভেট্টোরি-বন্ডদের নিউজিল্যান্ডও, পন্টিংয়ের খেলা সবচেয়ে দুঃস্বপ্নের ওভারের কারিগর একজন ইংলিশ। তিনি আর কেউ নন, সাবেক ইংলিশ অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে নিজের খেলা সবচেয়ে ভীতিজাগানিয়া ওভারের কথা বলতে গিয়ে পন্টিং বেছে নিয়েছেন ফ্লিনটফকেই। সে ওভার কোনটি? জানতে ফিরে যেতে হবে পনেরো বছর আগে, ২০০৫ অ্যাশেজে। সেবার উনিশ বছর পর অ্যাশেজ ভস্মাধারের মালিকানা ফেরত পেয়েছিলেন ফ্লিনটফ-ভনরা। আগের উনিশ বছরের মতো যে তাঁরা সেবার হারতে আসেননি, পন্টিংকে করা ওই ওভারটা সেটারই একটা বার্তা ছিল যেন।
দ্বিতীয় টেস্টের কথা। লর্ডসে আগের টেস্টে ২৩৯ রানে জিতে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে আছে। সিরিজে ফেরার জন্য এজবাস্টনে হওয়া দ্বিতীয় টেস্টটায় তাই জিততে মরিয়া ইংল্যান্ড। আর সে লক্ষ্যে সবচেয়ে বেশি উদ্যমী ছিলেন ফ্লিনটফই। ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ রান এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে নিয়েছিলেন তিন উইকেট। তবে আসল জাদুটা জমা করে রেখেছিলেন শেষ ইনিংসের জন্য। জেতার জন্য অস্ট্রেলিয়ার ২৮২ রান লাগে তখন। বিনা উইকেটে ৪৭ তুলে ফেলেছে অজিরা। উইকেটে দুই ওপেনার জাস্টিন ল্যাঙ্গার ও ম্যাথু হেইডেন মোটামুটি থিতু হয়ে গেছেন।
উইকেট পাওয়ার জন্য মরিয়া অধিনায়ক মাইকেল ভন তখন বল তুলে দিলেন সাতাশ বছর বয়সী ফ্লিনটফের হাতে। ফ্লিনটফ নিজেও অসাধারণ এক ব্যক্তিগত রেকর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আগের ইনিংসের শেষ দুই বলে জেসন গিলেস্পি আর মাইকেল ক্যাসপ্রোভিচকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলা ফ্লিনটফ এই ইনিংসে নিজের প্রথম বলে উইকেট নিতে পারলে করে ফেলতেন হ্যাটট্রিক। সেটা হতে দেননি ল্যাঙ্গার। কিন্তু ওভারের দ্বিতীয় বলেই ফ্লিনটফ বোল্ড করলেন ল্যাঙ্গারকে।
দুর্দান্ত গতির সঙ্গে ভয়াল রিভার্স সুইং - এই 'জুটি'র জবাব জানা ছিল না অজিদের কাছে। এই জাদুতে পরাস্ত হলেন রিকি পন্টিংও। পরের তিনটা বল পড়িমরি করে ঠেকালেন, যার দুই বলে আউট হতে হতে বাঁচলেন। প্রত্যেকটা বলের গতি ছিল ঘণ্টায় ন্যূনতম ১৪০ কিলোমিটার। কিন্ত শেষ বলে ফ্লিনটফের তেজ আর সামলাতে পারলেন না পন্টিং। উইকেটরক্ষক জেরাইন্ট জোন্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন প্যাভিলিয়নে।
সেই ওভারটার কথা মনে করতে গিয়েই সাবেক অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক টুইটারে লিখেছেন, 'আমার জীবনে খেলা সেরা ওভার ওটা। অসাধারণ রিভার্স সুইংয়ের সঙ্গে প্রত্যেকটা বলের গতি আশ্চর্যজনকভাবে ঘণ্টায় নব্বই মাইলেরও বেশি ছিল!'
শেষমেশ দুই রানে টেস্টটা হারে অস্ট্রেলিয়া। আর ফ্লিনটফ নেন চার উইকেট। ম্যাচসেরাও হন তিনি।