২০০৭ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যে ম্যাচে স্টুয়ার্ট ব্রডের এক ওভারে ছয় ছক্কা মেরেছিলেন যুবরাজ সিং, সেই ম্যাচে ঠিক ২০০ রান করেও ১৮ রানে হারে ইংল্যান্ড। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে সেটিই হয়েছিল ইংল্যান্ডের শেষ ২০০ ছোঁয়া ইনিংস।
প্রায় ১৫ বছর পর ট্রেন্ট ব্রিজে আজ ইংল্যান্ডের ২০০ রানের সেই অপেক্ষা ফুরিয়েছে। প্রথম দুই ম্যাচ হেরেই সিরিজ খোয়ানো ইংলিশরা আজ করেছে ৭ উইকেটে ২১৫ রান। এবার আর হারেনি, ভারতকে ১৭ রানে হারিয়ে সান্ত্বনার জয় পেয়েছে জস বাটলারের দল। রান তাড়ায় ভারত করে ৯ উইকেটে ১৯৮ রান।
তবে ইংল্যান্ডকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন সূর্যকুমার যাদব। রান তাড়ায় অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করেছেন ৩১ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। শুধু ভারতের জার্সিতেই নয়, ২১১ ম্যাচের স্বীকৃত টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারেই প্রথম সূর্যকুমারের এটি প্রথম সেঞ্চুরি। ১৭তম ওভারে ডেডিড উইলিকে থার্ড ম্যান দিয়ে চার মেরে ৪৮ বলে তিন অঙ্ক ছোঁয়া সূর্যকুমার শেষ পর্যন্ত করেছেন ৫৫ বলে ১১৭ রান। ১৪টি চার ও ৬টি ছক্কায় সাজানো তাঁর প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরিটি।
রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা মোটেই ভালো ছিল না ভারতের। রোহিত শর্মার অধিনায়কত্বে টানা ১৪টি টি–টোয়েন্টি জেতা দলটি পাঁচ ওভারে ৩১ রান তুলতেই হারিয়ে ফেলে ৩ উইকেট। ঋষভ পন্ত, বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা—হেভিওয়েট সব উইকেট। ১ রান করেছেন পন্ত, ফর্ম হারানো কোহলি ও অধিনায়ক রোহিত করেছেন ১১ রান করে। পন্ত ও রোহিতকে ফেরান রিস টপলি, কোহলির উইকেটটি ডেভিড উইলির।
এমন বাজে অবস্থা থেকেই শ্রেয়াস আইয়ারকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে ১১৯ রানের জুটি সূর্যকুমারের। সেটিও মাত্র ৬২ বলে। জুটিতে দর্শক হয়েই ছিলেন শ্রেয়াস, ২৩ বলে করেছেন ২৮ রান।
সূর্যকুমারকে ব্যাটিংয়ে নামতে হয়েছিল তৃতীয় ওভারেই কোহলির বিদায়ের পর। শট এক্সট্রা–কাভারে জেসন রয়কে ক্যাচ দেওয়া আগের দুই বলেই চার–ছয়ে ১০ রান নিয়েছিলেন কোহলি। পরে রোহিতের আউটের সাক্ষী হওয়া সূর্যকুমার প্রথম পাওয়ারপ্লেতে শান্তই ছিলেন। ৬ ওভার শেষে তাঁর রান ১২ বলে ৮।
সেই ব্যাটসম্যান সপ্তম ওভারের প্রথম দুই বলেই চার ও ছক্কা মেরে দিলেন ডিপ কাভার ও স্কয়ার লেগ দিয়ে। সেই শুরু, এরপর নবম ওভারে লিয়াম লিভিংস্টোনকে মারলেন তিনটি চার। ছয় ছক্কার ৪টিই সূর্যকুমার মেরেছেন ১৩ থেকে ১৫ ওভারের মধ্যে।
তাঁর বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের কারণেই বাড়তে থাকা আস্কিং রেটকেও অসম্ভব ভাবেনি ভারত। শেষ পাঁচ ওভারে ৬৬ রান দরকার। উইকেটে যখন দুই থিতু হওয়া ব্যাটসম্যান, টি–টোয়েন্টিতে সবচেয়ে নিজেদের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের স্বপ্নই দেখছিল ভারতীয়রা।
তবে ১৬তম ওভারের প্রথম বলেই শ্রেয়াসের বিদায়ে বড় ধাক্কা। উইকেটকিপারকে ক্যাচ দেন শ্রেয়াস। পরের দুই ওভারে দিনেশ কার্তিক ও রবীন্দ্র জাদেজাকেও হারিয়ে আরও চাপে পড়ে ভারত। তবে ১২ বলে যখন ৪১ রান দরকার, ভারতের ডুবন্ত আশাকে আবারও জাগিয়ে তুলতে শুরু করেছিলেন সূর্যকুমার। মঈন আলীর করা ১৯তম ওভারের প্রথম তিন বলেই চার–ছক্কায় তুললেন ১৪ রান। ওভারের পঞ্চম বলে আরেকটি ছক্কা মারতে গিয়েই লং অফে ফিল সল্টের হাতে ক্যাচ হয়ে তাঁর বিদায়েই কার্যত শেষ ভারতের আশা।
২১ রানের সমীকরণ নিয়ে শেষ ওভারটা শুরু করা ভারত তো রানই তুলতে পারল না। ক্রিস জর্ডান সেই ওভারে ৩ রান দিয়েই নিলেন ২ উইকেট।
এর আগে ইংল্যান্ডের ইনিংসে সর্বোচ্চ ৭৭ রান করেছেন ডেভিড ম্যালান। সেটিও মাত্র ৩৯ বলে। ৬টি চার ও ৫টি ছক্কায় সাজানো ম্যালানের ইনিংসটি। লিভিংস্টোনকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে ৪৩ রানেই ৮৪ রান যোগ করেন ম্যালান। চারটি ছক্কা মারলেও সঙ্গীর মতো অতটা আক্রমণাত্মক ছিলেন না লিভিংস্টোন, অপরাজিত ৪২ রান করেছেন ২৯ বলে।
তবে ম্যালান নন, ম্যাচসেরা ২২ রানে ৩ উইকেট নেওয়া বাঁহাতি পেসার টপলি।