ক্যাচ মিসের আক্ষেপ তামিমের।
ক্যাচ মিসের আক্ষেপ তামিমের।

সুযোগ হাতছাড়ার আক্ষেপ তামিমের

৫৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলার ধাক্কা নিউজিল্যান্ড কাটিয়ে ওঠে ডেভন কনওয়ে ও টম ল্যাথামের জুটিতে। শুধু ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা কী, দুজনের চতুর্থ উইকেট জুটিতে বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে ম্যাচ থেকে ছিটকে ফেলতে থাকে নিউজিল্যান্ড। তখন জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ১৬.২ ওভারে ১০৬ রান। ঠিক সেই সময়ই মিড অফ থেকে তামিম ইকবাল দারুণ এক থ্রোতে রানআউট করেন দুর্দান্ত খেলতে থাকা কনওয়েকে। অধিনায়কের এই থ্রো আবার ম্যাচে ফেরায় বাংলাদেশকে।

শুধু ম্যাচে ফেরানোই নয়, তামিমের দুর্দান্ত ওই থ্রো আর কনওয়ের রানআউটে নিউজিল্যান্ডকেই উল্টো চাপে ফেলে দেয় বাংলাদেশ। সেই চাপ বয়ে আনে সুযোগও। কিন্তু বাংলাদেশি ফিল্ডারদের পিচ্ছিল হাত সুযোগ আর কাজে লাগাতে পারল কই! সুযোগ হাতছাড়া করায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটাও আর বাঁচিয়ে রাখা যায়নি। ক্রাইস্টচার্চের জয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে টম ল্যাথামের দল। ম্যাচ শেষে তামিমের যত আক্ষেপ ওই সুযোগ হাতছাড়া করা নিয়েই।

মাঝের ওভারে গতি দিয়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটিং অর্ডারে ফাটল ধরানোর কৌশল কত কার্যকর, গত বিশ্বকাপে লিয়াম প্লাংকেটকে দিয়ে এইউন মরগানের ইংল্যান্ড সেটা করে দেখিয়েছে। তামিমও আজ তাসকিনকে একই দায়িত্ব দিয়েছেন। গতি দিয়ে নতুন ব্যাটসম্যান জিমি নিশামকে ভড়কে দিয়ে আউট করতে পারলেই নিউজিল্যান্ডের লোয়ার অর্ডার উঁকি দেবে! বাংলাদেশের দেওয়া ২৭২ রানের লক্ষ্য তখন আরও কঠিন মনে হবে নিউজিল্যান্ডের জন্য!

মুশফিকের ক্যাচ মিসের মাশুল দিয়েছে বাংলাদেশ।

তামিমের কৌশল কাজেও লেগেছিল। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়ে গতিতে তাসকিন ঠিকই ভড়কে দিয়েছিলেন নিশামকে। ৩৬তম ওভারে বাঁহাতি নিশামের ব্যাট ছুঁয়ে বল চলে গিয়েছিল উইকেটকিপারের হাতে। কিন্তু বাংলাদেশের উইকেটকিপার মুশফিকের গ্লাভস জোড়া ছিল বড্ড পিচ্ছিল! তাই তো গ্লাভসে বলটি জমাতেই পারলেন না। তখন মাত্র ৩ রানে খেলছিলেন কিউই এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার। নিউজিল্যান্ড তখনো জয় থেকে ১০০ রান দূরে!

নিশ্চিত সুযোগ হাতছাড়ার রেশ কাটেনি তখনো। মেহেদী হাসানের অফ স্পিনে উইকেটে জমে যাওয়া কিউই অধিনায়ক ল্যাথাম তুললেন ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ ফিরতি ক্যাচ। কিন্তু ৫৯ রানে ব্যাট করা ল্যাথামের সহজ ক্যাচটিও মেহেদীর তালুবন্দী হয়নি। বাংলাদেশি ফিল্ডারদের চোখেমুখে তখন অবিশ্বাসের ছায়া। অধিনায়ক তামিমের মুখে নেমে আসে অন্ধকার। তাসকিন হয়তো তখনো আশা হারাননি। পরের ওভারে এসে আরেকটি সুযোগ তৈরি করেন ল্যাথামকে আউট করার। এবার পয়েন্টে মেহেদী হাসান মিরাজের আঙুল ছুঁয়ে বল গেল বাউন্ডারিতে। সেখান থেকে ল্যাথাম করেন অপরাজিত ১১০ রান। নিউজিল্যান্ডের ৫ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেই তিনি ছেড়েছেন হ্যাগলি ওভাল।

হারের হতাশা তখনো কাটেনি। রাখঢাক না রেখেই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে অধিনায়ক তামিম বলেছেন, ‘ম্যাচটা জেতা উচিত ছিল। বোলাররা সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আমরা সুযোগ লুফে নিতে পারিনি। ক্যাচ ফেলেছি এমন অবস্থায়...। আমরা কালেভদ্রে ম্যাচ জিতি (এই কন্ডিশনে)। যখন সুযোগ আসে তখন আমাদের সবকিছুই ১০০ ভাগ দিয়ে করা উচিত। অবশ্যই আমি হতাশ।’

ডানেডিনের তুলনায় ক্রাইস্টচার্চে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে উন্নতি হলেও ম্যাচ হারের আক্ষেপটা আড়াল করেননি তামিম, ‘ব্যাটসম্যানরা ভালো করেছে। মিঠুন দারুণ ব্যাটিং করেছে। মুশফিকও ভালো করেছে। আগের ম্যাচ থেকে ভালো, কিন্তু আমরা এখানে উন্নতি করতে আসিনি। আমরা জিততে এসেছি। দেখুন, ক্যাচ হাতছাড়া হবেই। কিন্তু এটা কষ্ট দেয়। আমরা যদি ওই দুটি সুযোগ নিতে পারতাম, তাহলে খেলা জমে যেত।’

ওয়ানডে সিরিজ হারলেও বাংলাদেশের আইসিসি সুপার লিগের ১০ পয়েন্ট জয়ের সুযোগ থাকছে ২৬ মার্চ শেষ ম্যাচে। ওয়েলিংটনে অন্তত ক্রাইস্টচার্চের ভুল দেখতে চান না তামিম। সেটি পরিষ্কার বলেও দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘পরেরবার যখন সুযোগ আসবে, তখন দুহাত বাড়িয়ে সেই সুযোগ নিয়ে নিতে হবে। ওয়েলিংটনে আমাদের ইতিবাচক থাকতে হবে এবং তাদের আবার চেপে ধরতে হবে।’