>ধরুন, অনেক পরিপাটি, কেতাদুরস্ত হয়ে বেরিয়েছেন, কিন্তু শার্টের একটা বোতাম নেই! খুব সামান্য বিষয় অথচ কত বড় অপূর্ণতা একবার ভাবুন। এই অপূর্ণতা থেকে গেছে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামেও।
এর চেয়ে সুন্দর সকাল আর হতে পারে না! কার্তিকের রৌদ্রকরোজ্জ্বল এ সকালে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে প্রথমবারের মতো টেস্টের টস করতে মাঠে ঢুকলেন দুই অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ও হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। একদল শিশু রঙিন বেলুন উড়িয়ে দিল সুনীল আকাশে। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান বাজিয়ে দিলেন সোনালি ঘণ্টা।
উৎসবমুখর পরিবেশেই হয়েছে সিলেট ভেন্যুর টেস্ট অভিষেক। এই অভিষেক রঙিন করতে আয়োজনে কোনো কমতি রাখেননি আয়োজকেরা। স্টেডিয়ামের লবিতে করা জাতীয় দলে খেলা সিলেটের খেলোয়াড়দের ছবি নিয়ে করা হয়েছে একটি গ্যালারি। শিল্পীর তুলিতে আঁকা বাংলাদেশ ক্রিকেটের গুরুত্বপূর্ণ বাঁক কিংবা দুর্দান্ত ইনিংস খেলা ক্রিকেটারদের ছবিও শোভা পাচ্ছে সেই গ্যালারিতে। সকালে টস হয়েছে বিশেষ কয়েনে। দেশের হয়ে টেস্ট খেলা সিলেটের সাবেক খেলোয়াড়দের আমন্ত্রণ করা হয়েছে। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ১১টার দিকে স্টেডিয়ামে এসেছেন রাজিন সালেহ ও এনামুল হক জুনিয়র। সবই হয়েছে, কিন্তু একটি অপূর্ণতা যে রয়ে গেছে।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের ঠিক মাঝখানে বিশালাকায় একটি ঘড়ি বসানোর কথা ছিল আয়োজকদের। ঘড়িটা অবশ্য পাঁচ বছর আগেই স্থাপন করা হয়েছিল। নারীর কপালে লাল টিপ যেমন, এই ঘড়িটাও ঠিক একইভাবে শোভা বাড়ায় ইউরোপীয় স্থাপত্যের আদলে তৈরি দৃষ্টিনন্দন গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের। লাখ টাকা খরচ করে ঘড়িটা কেনা হয়েছিল ইংল্যান্ড থেকে। কিন্তু স্টেডিয়ামে সেটি স্থাপনের পর দেখা যায় অন্য সমস্যা।
কী সমস্যা, সেটি খুলেই বললেন বিসিবি পরিচালক ও সিলেটের শীর্ষ ক্রীড়াসংগঠক শফিউল আলম চৌধুরী, ‘স্টেডিয়ামের গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের সঙ্গে ক্লাসিকাল বা সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বাগানবাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে রোমান হরফের একটা ঘড়ি আমরা ইংল্যান্ড থেকে এনেছিলাম। বিদ্যুতের সমস্যা বা অন্য যেকোনো কারণেই হোক ঘড়িটা স্থাপনের এক বছর পরে দেখলাম, স্থানীয় সময় থেকে ঘড়ির কাটা পাঁচ মিনিট করে এগিয়ে থাকে। সময় যতই মিলিয়ে দেওয়া হোক পাঁচ মিনিট এগিয়ে থাকবেই। সমস্যার সমাধানে আমরা ঘড়ি কোম্পানিকে ডিভাইস পাঠিয়ে দিই। ঠিক করে আনার পর দেখি একই সমস্যা।’
সিলেট টেস্টের আগে অনেক চেষ্টার পরও ঘড়িটা পুনঃস্থাপন করা যায়নি। এর আগে যখন ঠিক করতে পাঠানো হয়েছিল ইংল্যান্ডে, প্রায় ছয় মাস সময় লাগিয়েছে তারা। আবারও পাঠালে একই সময় লাগবে বলে আয়োজকেরা সেটি আর পাঠাতে চাননি। এখন বিকল্প সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানালেন শফিউল আলম, 'হাল ছাড়ছি না। যেভাবেই হোক দেশের ভেতর কিংবা দেশের বাইরে থেকে নতুন মেশিন লাগিয়ে ঘড়িটা স্থাপন করব। ওরা আবারও পাঠাতে বলেছে। কিন্তু লম্বা সময়ের ব্যাপার। ছয় মাস লেগে যায়। আবারও যদি ছয় মাসের জন্য পাঠাই এবং পরে কাজ করবে কি না নিশ্চিত নই।’
টেস্ট সফলভাবে আয়োজন করতে ঘড়ি স্থাপন করতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। ধরুন, অনেক পরিপাটি, কেতাদুরস্ত হয়ে বেরিয়েছেন, কিন্তু শার্টের একটা বোতাম নেই! খুব সামান্য বিষয় অথচ কত বড় অপূর্ণতা। এই অপূর্ণতা থেকে গেছে সিলেটেও, যেটি পোড়াচ্ছে শফিউল ইসলামকে, ‘শেষ পর্যন্ত একটা অপূর্ণতা থেকেই গেল। যা যা পরিকল্পনা ছিল সবই হয়েছে। এটিই শুধু পারিনি। নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা বলব না। তবে এই মুহূর্তে আসলে কিছু করার নেই। এবার হলো না সামনে চেষ্টা করব ঘড়িটা পুনঃস্থাপনের।’