এ যেন খেলার মধ্যে খেলা! খোলাসা করে বললে, মেলানোর খেলা। আগের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ উইকেটরক্ষক জশুয়া দা সিলভার হাতে আউট হয়েছিলেন তামিম ইকবাল। আজও তাঁকে ফেরালেন সেই সিলভাই। পার্থক্য শুধু আগের ম্যাচে স্টাম্পিং, আজ ক্যাচ।
নাজমুল হোসেন শান্তও (১৭) নেমেছিলেন মেলানোর খেলায়। আগের ম্যাচে ক্যাচ অনুশীলন করিয়েছেন শর্ট মিড উইকেটে। সেই একই জায়গায় ক্যাচ দিয়েছেন আজকেও। পার্থক্য শুধু টাইমিংয়ে।
সেদিন ‘রসগোল্লা’ তুলে দিয়েছিলেন হাতে। আজ ‘বুলেট’ ছুড়েও পার পাননি। এ ছাড়া সবকিছু প্রায় একই রকম। নিষ্প্রাণ ম্যাচ, উবে যাওয়া লড়াই, এর মধ্যে যা ব্যতিক্রম হয়েও প্রত্যাশিত—তামিমদের সিরিজ জয়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে দল নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে, তাতে ওয়ানডে সিরিজ জয় প্রত্যাশিত বলেই ধরে নেওয়া হয়েছিল। এই প্রত্যাশায় মিলেছে আরও এক প্রত্যাশা—এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জয়।
দ্বিতীয় ওয়ানডে আজ ৭ উইকেটে জিতে সেই প্রত্যাশাই মিটিয়েছে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচের চেয়ে আজ বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের খানিকটা উন্নতি চোখে পড়তে পারে অনেকের—১ উইকেট কম হারানো। প্রথম ম্যাচে ৬ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ।
তৃতীয় ম্যাচেও বাংলাদেশ পরে ব্যাট করলে ১০ উইকেটে জয়ের প্রত্যাশাটা অনেকের কাছে আকাশকুসুম মনে না–ও হতে পারে। কারণ, জেসন মোহাম্মদের এ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে চিরায়ত সেই ক্যারিবীয় আগুন অন্তত প্রথম দুই ম্যাচে দেখা যায়নি।
এ দুই ম্যাচের পারফরম্যান্স বিচারে তৃতীয় ম্যাচের প্রত্যাশাটুকু যে মিলবে না, সেই ভরসা দেখা যাচ্ছে না সফরকারীদের পারফরম্যান্সে।
এর চেয়ে বরং নিষ্প্রাণ জয়ে ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্সের কাটাছেঁড়া হতে পারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দলে বিপজ্জনক বোলার বলতে শুধু বাঁহাতি স্পিনার আকিল হোসেন।
৪টি দর্শনীয় চারের মারে ২৪ বলে ২২ রানে ছন্দে থাকা লিটনকে গতির ফাঁদে বোকা বানিয়েছেন আকিল। তাঁকে খেলতে সবারই কষ্ট হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে জাতীয় দলেও বাঁহাতি স্পিনারের অভাব নেই। তাঁদের খেলে ব্যাটসম্যানদের কাছে হাত পাকানোর প্রত্যাশাটা মোটেও বাড়াবাড়ি কিছু নয়।
কিন্তু আকিল ৮ ওভার করা পর্যন্ত তাঁকে ২৯টি ‘ডট’ দেওয়া সেই প্রত্যাশায় দৃশ্যমান ক্ষত। শেষ পর্যন্ত ৯.২ ওভারে ৪৫ রানে ১ উইকেট নেন আকিল। ডটসংখ্যা ৩২।
শেরেবাংলায় অন্ধকারাচ্ছন্ন আবহাওয়া, বিকেলেও কুয়াশার ঘনঘনটা এবং কালো মাটির স্পিনবান্ধব উইকেটে দ্রুত রান তোলাটা মোটেও সহজ কিছু নয়।
কিন্তু হাতের তালুর মতো চেনা এই মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৪৮ রান তাড়া করতে নেমে ৬৫.৭৯ স্ট্রাইকরেটে ফিফটি তুলে নেওয়ায় কোনো উত্তেজনা বোধ হয় না। বলা হচ্ছে তামিম ইকবালের কথা।
এই দুই ম্যাচের সব খেলোয়াড়ের মধ্যে এটাই প্রথম ফিফটির নজির। সেখানে আছে ৩টি চার ও ১ ছক্কার মার। এই চার শট বাদে তামিমের স্কোরকার্ড দেখুন—৭৬ বলে কাঁটায় কাঁটায় ৫০। অন্তত স্বাভাবিক ব্যাটিং বলার সুযোগ নেই।
হ্যাঁ, এ কথা বলা যায় লক্ষ্য তো সাদামাটা, তাই ব্যাটিংটা হয়েছে রয়ে–সয়ে, দেখেশুনে।
তাহলে কিন্তু ওই প্রত্যাশার কোনো দাম থাকে না—ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ ফেবারিট। কিন্তু ব্যাটিংটা কি ফেবারিটের মতো হলো?
আগের ম্যাচে মাত্র ১২৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৩৩.৫ ওভার খেলেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে লক্ষ্য ছিল তার চেয়ে ২৬ রান বেশি। কিন্তু তাড়া করার গতিপ্রকৃতি এতটুকু পাল্টায়নি।
সেই ৩০ ওভার পরেই (৩৩.২) এসেছে জয়। অথচ তামিম, সাকিব, মুশফিকদের নিয়ে বানানো তারকাসমৃদ্ধ দল ‘শিক্ষানবিশ’দের বিপক্ষে দাপট দেখিয়ে জিতবে—এটাই ছিল স্বাভাবিক প্রত্যাশা। যদিও সিরিজ জয়ে ব্যাটিংয়ের ধরন দেখে সেটি আর স্বাভাবিক থাকল না। তবু সিরিজ জয়ের আনন্দ নিয়েই শেষ ম্যাচ খেলতে চট্টগ্রামে যাবে বাংলাদেশ দল। সোমবার তৃতীয় ম্যাচ।
আজ অবশ্য সাকিবের ব্যাটিং দেখে এর উল্টো মত দিতে পারেন অনেকে। আগের ম্যাচে উঁকি মারা জড়তাটুকু আজ ছিল না। ৫১ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত ইনিংসে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন সাকিব। তার চেয়েও বড় কথা, ৮১.৪০ স্ট্রাইকরেটে সাকিবসুলভ ব্যাটিংই করেছেন সাকিব।
কিন্তু দলীয় স্কোরকার্ডে ‘ডট’সংখ্যা দেখলে অস্বস্তি জাগতে বাধ্য। ১৪৮ রান তাড়া করতে নেমে ৩৩.২ ওভার ব্যাট করে ১১৩ বল ডট দিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। ওদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিক্ষানবিশ ব্যাটসম্যানরা ৪৩.৪ ওভারে ডট দিয়েছেন ১৭৪।
সহজ প্রশ্ন, কোনটা চোখে লাগে বেশি?