অচেনা এক স্বাদ পেতে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে এগিয়ে থেকে টস করতে নামবেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। গত ২০ বছরে এমন কোনো কিছু দেখা যায়নি। উপায়ও ছিল না, ১৯ বারের চেষ্টায় স্বাগতিকদের কখনো হারাতেই পারেনি বাংলাদেশ। ১৮ মার্চ সে আক্ষেপ কেটেছে। সেঞ্চুরিয়নে সাকিব আল হাসান, ইয়াসির আলী ও তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স বহুকাঙ্ক্ষিত এক জয় এনে দিয়েছে বাংলাদেশকে।
আজ বাংলাদেশ সময় বেলা দুইটায় শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ। ওয়ান্ডারার্সে আজ সিরিজ জেতার লক্ষ্য নিয়ে নামবে বাংলাদেশ। আজ হারলেও হতাশা হওয়ার কোনো কারণ নেই। ২৩ মার্চ সিরিজ জেতার আরেকটা সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। তার আগে দেখে নেওয়া যাক, দ্বিতীয় ম্যাচেই সিরিজ জেতার সুযোগ পেলে সেটা কতটা কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ম্যাচেই সিরিজ জেতার সম্ভাবনা জাগানো মানেই সেটা তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। আর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ এখন পর্যন্ত খেলেছে ৫৬টি। এই ৫৬ সিরিজের মধ্যে কোনো ম্যাচই বাংলাদেশ জিততে পারেনি, এমন ঘটনা ঘটেছে ২৮ বার। সোজা ভাষায়, ২৮টি সিরিজে ধবলধোলাই হয়েছে বাংলাদেশ।
বাকি ২৮ সিরিজে অন্তত একটি হলেও ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। আর সে সিরিজগুলোর ২০টিতেই সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েছে। অর্থাৎ ২০টি সিরিজে দ্বিতীয় ম্যাচেই সিরিজ জেতার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ।
এসব ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান বাংলাদেশের সাফল্যের গান গাইছে। কারণ, এমন ১০ সিরিজেই প্রতিপক্ষকে ধবলধোলাই করেছে বাংলাদেশ। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে শেষ ম্যাচেও প্রতিপক্ষকে ছাড় দেয়নি দল। শুরুটা কেনিয়াকে দিয়ে হয়েছিল, এরপর একে একে বাংলাদেশের শিকার হয়েছে আয়ারল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২ বার), নিউজিল্যান্ড (চার ম্যাচের সিরিজের দৈর্ঘ্য কমিয়ে দিয়েছিল বৃষ্টি), পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়ে (৪ বার)।
বাকি ১০ সিরিজ নিয়েই কৌতূহল। সে সিরিজগুলোয় প্রথম ম্যাচ জিতে পরে কেমন করেছে বাংলাদেশ?
২০০৪ থেকেই শুরু করা যাক। দ্বিপক্ষীয় সিরিজে সেবারই প্রথম জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। হারারেতে ১০ মার্চ স্বাগতিক দলকে প্রথম ম্যাচে ৮ রানে হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। সিরিজ জেতার আশায় দুই দিন পর মাঠে নামা বাংলাদেশ কাছে গিয়েও হতাশ হয়েছিল। মাত্র ১৪ রানে হেরে পরে সিরিজও হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ।
২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়টি ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বলতম এক মুহূর্ত। মাত্রই ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ (আইসিএল) বাংলাদেশের ক্রিকেটে বড় এক ক্ষত সৃষ্টি করেছিল। জাতীয় দলের একগাদা তারকা ভারতের বিদ্রোহী টি-টোয়েন্টি লিগে খেলতে চলে গিয়েছিলেন। খর্বশক্তির বাংলাদেশ সিরিজের প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছিল। তবে পরের দুই ম্যাচ হেরে সেবারও সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ।
পরের সুযোগ আসতে আসতে ২০১৩। জিম্বাবুয়ে সফর করতে গিয়ে শুরুটা ভালোই করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পরের দুই ম্যাচেই বাংলাদেশকে হতভম্ব করে দিয়ে সিরিজ জিতে নিয়েছে জিম্বাবুয়ে। ২০১৫ সালে আর সে ভুল করেনি বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে মোস্তাফিজুর রহমানের অসাধারণ বোলিং প্রথম দুই ম্যাচেই সিরিজ নিশ্চিত করে দিয়েছে।
পরের বছর আফগানিস্তানের বিপক্ষে অবশ্য সেটা করতে পারেনি দল। দ্বিতীয় ম্যাচে সিরিজ নিশ্চিত করতে নেমে হেরে বসেছিল বাংলাদেশ। সিরিজ জিততে তৃতীয় ম্যাচের অপেক্ষা করতে হয়েছে সবাইকে। ২০১৭ সালের শ্রীলঙ্কা সফর ভিন্ন এক স্বাদ দিয়েছে বাংলাদেশকে। সিরিজের প্রথম ম্যাচ জেতা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ম্যাচে জয় বা হার, কোনোটিরই স্বাদ পায়নি। বৃষ্টি সে ম্যাচ ভাসিয়ে দিয়েছিল। শেষ ম্যাচে হেরা যাওয়ায় সমতা নিয়ে ফিরেছিল বাংলাদেশ।
পরের চারটি ঘটনাতেই সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে দুটি সিরিজেই প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে হেরে শেষ ম্যাচের জন্য নাটক জমিয়েছিলেন তামিম-মুশফিকেরা। আর ২০২১ ও ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলেছিল বাংলাদেশ। সিরিজ জয়ের স্বাদটা শেষ ম্যাচে হেরে একটু মলিন হয়েছিল বাংলাদেশের।
আজ ম্যাচের ফল যা–ই হোক না কেন, বাংলাদেশের সমর্থকেরা সিরিজ নিয়ে আশাবাদী হতেই পারেন। কারণ, পরিসংখ্যানই তো বলছে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমেই জয় পেলে গত ৮ বছরে কখনো সিরিজ হারেনি বাংলাদেশ।