>এশিয়া কাপ জেতায় ২ কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে সালমাদের জন্য। দেশের মেয়েদের ক্রিকেট উন্নয়নে সবচেয়ে যেটি বেশি জরুরি, তাঁদের আর্থিক সুবিধা বাড়ানো। সেটি কি বাড়াবে বিসিবি?
বিদেশ থেকে সিরিজ বা টুর্নামেন্ট খেলে দেশে কতই তো ফিরেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। কিন্তু এমন রাজসিক সংবর্ধনা কি কখনো পেয়েছেন সালমারা? কখনোই পাননি। সোমবার সন্ধ্যায় ছয়টায় বিমানবন্দরে নেমেই দল চলে এল সোজা হোটেল সোনারগাঁওয়ে। বিসিবির শীর্ষ কর্তারা সেখানে বরণ করে নিলেন ফুল দিয়ে। মেয়েদের অভিনন্দন জানাতে হোটেল সোনারগাঁওয়ে এসেছিলেন সাকিবরাও।
সবাই সালমা খাতুনের কথা শুনতে চান। রুমানা আহমেদের কথা শুনতে চান। বিজয়ী মেয়েদের কথা শুনতে চান। সালমা কুয়ালালামপুরেই বলেছেন। দেশে ফিরেও বললেন অসামান্য এই অর্জন নিয়ে, ‘বিমানবন্দরে নেমেই শুধু উপহার পাচ্ছি। অনেক ভালো লাগছে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়ার পরও আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল ঘুরে দাঁড়াতে পারব। সেটি পেরেছিও।’
রুমানা শুধু এশিয়া কাপ জয়েই আটকে থাকতে চান না। এই সাফল্য তিনি ধরে রাখতে চান আগামী মাসে হল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইয়ে, ‘অনেক দিনের সাধনা করেছি। (গত মাসে) দক্ষিণ আফ্রিকায় জিততে পারিনি। তবে সেখানে অনেক কিছু শিখেছি। সেটাই এবার কাজে দিয়েছে। একবার ওদের (ভারতকে) ধরতে পেরেছিলাম। ফাইনালের আগে তাই জানতাম কীভাবে ওদের ধরতে হয়! সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইটা পেরোনো।’
স্নায়ুক্ষয়ী মুহূর্তে ছেলেদের দল অনেকবার হতাশ করেছে। ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনাল, ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুতে ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচ, নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল, সর্বশেষ একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেরাদুনে আফগানদের বিপক্ষে। ছেলেদের এই দুঃখটা এবার ভুলিয়ে দিয়েছেন মেয়েরা। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের মুখে তাই তৃপ্তির হাসি, ‘শুধু ক্রিকেটে নয়, বাংলাদেশের ক্রীড়া ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় অর্জন। তিন বছর ধরে আমরা মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে কাজ করছি। ছেলেদের নিয়েও করছি। তবে ফলটা মেয়েরা এনে দিয়েছে। এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না। ছেলেদের ক্রিকেটে অনেক দুঃখ আছে। শেষ বলে শেষ মুহূর্তে গিয়ে ম্যাচ হেরে যাচ্ছি আমরা। শেষ মুহূর্তে কেন যেন পারছিলাম না। আমাদের ধারণা, সেই দুঃখ এবার ঘুচবে। মেয়েরা পথ দেখিয়ে দিয়েছে, আশা করি ছেলেরাও ভালো করবে।’
যাঁরা পথ দেখিয়ে দিলেন, তাঁদের অনুপ্রাণিত করতে বিসিবি সভাপতি ঘোষণা করলেন, এশিয়া কাপজয়ী দলকে দেওয়া হবে ২ কোটি টাকা। ১৫ খেলোয়াড় পাবেন ১০ লাখ করে। বাকি ৫০ লাখ পাবে টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচিং স্টাফ ও যে কজন তুলনামূলক বেশি ভালো খেলেছেন। কানাডা থেকে ফিরে টাকাটা মেয়েদের হাতে তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া বিসিবির স্পনসর রবি একটি করে ফোনসেট উপহার দিয়েছে দলের সবাইকে। কোটি টাকার পুরস্কার নাহয় হলো, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, মেয়েদের পারিশ্রমিক কি এবার বাড়বে? বাড়বে তাঁদের ম্যাচ ফি?
মেয়েদের বেতন বাড়ানো নিয়ে বিসিবি সভাপতি কিছু বলেননি, ‘১৭ জন খেলোয়াড় আমাদের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আছে। ৩০ হাজার, ২০ হাজার ও ১০ হাজার—এই তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। অনেকেই নতুন খেলা শুরু করেছে। ছেলেদের সঙ্গে ওদের তুলনা করা কঠিন। উদাহরণ হিসেবে তুষার ইমরানের কথাই বলি। এত দিন সে খেলে আসছে, অথচ তার বেতন ২২ হাজার টাকা। (ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের বেতন) খুব কম নয়। সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তুলনা করলে চলবে না। ওরা (সালমারা) যে সাফল্য এনে দিয়েছে, এখন অনেক মেয়ে আগ্রহী হবে ক্রিকেটে। আমাদের ওয়ার্কিং কমিটির চেয়ারম্যান সিরাজ ভাইকে (এনায়েতউল্লাহ) দায়িত্ব দিয়েছি, ওদের জন্য কী করণীয় সেটা ঠিক করতে।’
মেয়েদের অভ্যর্থনা জানাতে হোটেল সোনারগাঁওয়ে আসা ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার ঘোষণা দিলেন, শুধু মেয়েদের জন্য একটি একাডেমি করে দেবেন তাঁরা। বাংলাদেশ ক্রিকেটের মানচিত্র বদলে দিয়েছিল ১৯৯৭ সালে কুয়ালালামপুরে আকরাম খানদের আইসিসি ট্রফি জয়। সেই কুয়ালালামপুরে আরেকটি ইতিহাস গড়েছেন মেয়েরা। এই অর্জন কি বদলে দেবে বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ?