ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষেকে সারা গ্লেন।
ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষেকে সারা গ্লেন।

এক মাতালের কারণেই করোনা হয়েছিল সারার

মনে রাখার মতো একটি বছরই যাচ্ছে সারা গ্লেনের। করোনায় আক্রান্ত হওয়া থেকে শুরু করে ইংল্যান্ড নারী দলের সেরা খেলোয়াড়, এরপর প্রথমবারের মতো বিগ ব্যাশ লিগ খেলতে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া—২০২০ সালটাকে মনে রাখতেই হবে এই লেগ স্পিনারকে। বিগ ব্যাশ খেলতে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে এখন কোয়ারেন্টিনে আছেন ২১ বছর বয়সী ক্রিকেটার। অ্যাডিলেডের হোটেল কক্ষে ‘বন্দী’ সারার সন্দেহ, করোনা আক্রান্ত এক লোক ইচ্ছে করেই তাঁর শরীরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।

যুক্তরাজ্যের দ্য টেলিগ্রাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন দাবি করেছেন সারা। ইংল্যান্ড নারী দলের হয়ে ৩টি ওয়ানডে ও ১৫টি টি-টোয়েন্টি খেলা সারা গত এপ্রিলে আক্রান্ত হন করোনায়। ওই ধকল সামলে পুরোপুরি সুস্থ হতে তাঁকে প্রায় দুই মাস লড়াই করতে হয়েছে। সারার দাবি করোনা থেকে বাঁচতে যতটুকু সতর্ক থাকা দরকার ছিল ততটুকু সতর্কই ছিলেন তিনি। লকডাউনের সময় ডার্বিশায়ারে বাবা-মার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে ছিলেন তিনি। কিন্তু একদিন এক খাবারের দোকানে গিয়েই নাকি সর্বনাশটা হয়।

সারা বলছেন তাঁকে করোনা দেওয়া লোকটি মাতাল ছিলেন, ‘একদিন জরুরি প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যেতে হলো। খাবার কিনতে আমি এক দোকানে গেলাম। সেখানে আমার পাশে দাঁড়ানো এক লোক হাসতে হাসতে হঠাৎ আমার গায়ে এসে পড়ল। সে সম্ভবত মাতাল ছিল। আমি ও ক্যাশ কাউন্টারের মহিলা ভয় পেয়ে যাই।’

যেসব তরুণ বলে ‘‘আমাদের কিছুই হবে না’’, তাঁদের ওপর আমার প্রচণ্ড রাগ হয়। আমিও তো পুরো ফিট এক অ্যাথলেট, কিন্তু আমাকেও তো ভুগতে হলো কত রাত!
সারা গ্লেন

ওই ঘটনার পর কতটা অস্বস্তি নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন সেটিও বর্ণনা করেছেন সারা, ‘প্রচণ্ডরকম অস্বস্তি লাগছিল। লকডাউনের সময় ওই একদিনই কেনাকাটা করতে গেলাম, আর কী বাজে অভিজ্ঞতা হলো! ওই লোক আবারও আমাকে ধাক্কা দিলেন। এরপর আমি বের হয়ে গেলাম। রাগে গজগজ করতে করতে বাড়ি ফিরেছিলাম। আমি বাবা-মাকে বললাম, ‘‘আগামী সপ্তাহে আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাগের মাথায় কী করি বলতে পারছি না।’’ ঠিকই পরের সপ্তাহে বিছানায় পড়লাম। খুব সুখকর ছিল না ওই অভিজ্ঞতা।’

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সারা গ্লেন (ডানে)।

পরে অ্যান্টিবডি টেস্টে ধরা পড়ে করোনা হয়েছে সারার। তবে তাঁর বাবা-মা নেগেটিভ হন। করোনা থেকে সেরে উঠতে অনেক সময় লেগেছিল সারার। যন্ত্রণাদায়ক সেই অভিজ্ঞতা থেকে ভালোই শিক্ষা নিয়েছেন ১৫ টি-টোয়েন্টিতে ২২ উইকেট নেওয়া বোলার। যেসব তরুণ করোনাকে থোড়াই কেয়ার করেন তাঁদের উপদেশও দিলেন সারা, ‘ওই অভিজ্ঞতা আমার চোখ খুলে দেয়। যেসব তরুণ বলে ‘‘আমাদের কিছুই হবে না’’, তাঁদের ওপর আমার প্রচণ্ড রাগ হয়। আমিও তো পুরো ফিট এক অ্যাথলেট, কিন্তু আমাকেও তো ভুগতে হলো কত রাত! আমি ঠিক জানি না এটা কারও ফুসফুসের কতটা ক্ষতি করে, তবে আমার সেরে উঠতে অনেক সময় লেগেছে।’

করোনার ছাপ অবশ্য সারার খেলায় পড়েনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী দলের বিপক্ষে সিরিজে ইংল্যান্ডের ৫-০ ব্যবধানে জয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছিলেন তিনিই। ওই সিরিজের ৭ উইকেটই তাঁকে এই গ্রীষ্মে ইংল্যান্ডের সেরা নারী ক্রিকেটারের সম্মাননা এনে দেয়।

সারার লেগ স্পিনার হওয়ার গল্পটাও দারুণ। জুনিয়র ক্রিকেটে পেস বোলিং করতেন। বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে ডেনবি নামের স্থানীয় এক ক্লাবে খেলতেন। একদিন বোলিং করার সময় তাঁর কবজিটা লেগ স্পিনারদের মতো উল্টে যাচ্ছিল। সেদিন তাঁর বাবা ও ভাই বলেন ‘তুমি তো লেগ স্পিন করছ!’

বিগ ব্যাশ খেলতে অস্ট্রেলিয়ার উড়োজাহাজে ওঠার আগে সারা গ্লেন।

কিন্তু সে সময়ে নাকি লেগ স্পিন কী জিনিস সেটিই বুঝতেন তা সারা! বাবা ও ভাই তাঁকে সেটি বুঝিয়ে পরামর্শ দেন পেস বোলিং অথবা লেগ স্পিনের যে কোনো একটিকে বেছে নিতে, ‘তাঁরা আমাকে বলেন লেগ স্পিন করাটা কঠিন। খুব বেশি লোক তা করতে পারে না। আমার মনে হলো বেশ ব্যাপার তো! আমি শেন ওয়ার্নের ভিডিও দেখা শুরু করলাম, ক্যাথেরিন ব্রান্টের বোলিংও দেখতাম। ওয়ার্নের সঙ্গে কখনোই দেখা হয়নি। দেখা হলে দারুণ ব্যাপার হবে। তিনি আমার গুগলি ঠিক করে দিতে পারেন।’

শুধু পেস কিংবা লেগ স্পিন নয়, সারাকে বেছে নিতে হয়েছে ক্রিকেট কিংবা হকির যে কোনো একটিকেও। হকিতেও বেশ ভালো ছিলেন সারা। বয়সভিত্তিক হকিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে। লর্ডসের গ্যালারিতে বসে ইংল্যান্ডের মেয়েদের ২০১৭ বিশ্বকাপ জিততে দেখার পরই পুরোপুরি ক্রিকেটে মনোযোগ দিয়েছেন সারা।

কেন সেই ব্যাখ্যাও টেলিগ্রাফকে দিয়েছেন, ‘দর্শকেরা যেন পাগল হয়ে গিয়েছিল! আমি ভাবলাম ‘‘আমাকে এই অভিজ্ঞতাটা নিতে হবে।’’ ক্রিকেট ছেড়ে হকি খেললেও হয়তো এমন অভিজ্ঞা হতো। সে সময়ে মনে হলো ক্রিকেট-হকি দুটিই খেলে অনেক মানুষকে আমি সন্তুষ্ট করতে চাচ্ছি। কিন্তু এই অভিজ্ঞতা নিতে হলে যেকোনো একটিকে বেছে নিতে হবে।’

আগামী রোববার শেষ হবে সারার কোয়ারেন্টিন। এই দুই সপ্তাহে হোটেলে বসে শুধু সাইক্লিং করেই ফিটনেস ঠিক রাখতে হয়েছে তাঁকে। ব্রিটেনের উন্মুক্ত বিশ্ব বিদ্যালয়ে ক্রীড়া বিজ্ঞানের ছাত্রী এই সময়ে কিছু পড়াশোনাও সেরে নিয়েছেন।

হোটেল কক্ষে দুই সপ্তাহ বন্দী থাকাটা সহজ ছিল না। তবে সারার দাবি শুরুর অস্বস্তিটা কাটিয়ে উঠেছেন তিনি, ‘প্রথম যেদিন কক্ষে ঢুকলাম মালপত্তর এগিয়ে দিতে আসা কর্মীটি বলল ‘‘দু সপ্তাহ পরে তোমার সঙ্গে দেখা হবে’’, সেই সময়ে খুব বিষণ্নতায় পেয়ে বসেছিল। কিন্তু এখন সব ঠিক হয়ে গেছে। এটাই এখন নতুন স্বাভাবিকতা। আমি এটাকে ইতিবাচকভাবে দেখি।’

সারা বিগ ব্যাশ টি-টোয়েন্টি খেলবেন পার্থ স্করচার্সের হয়ে। ২৫ অক্টোবর শুরু হবে টুর্নামেন্ট। করোনার বিধিনিষেধের কারণে পুরো টুর্নামেন্টই হবে সিডনিতে।