>নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে দলে সাব্বির রহমানকে দলে ফিরিয়েছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাঁকে দলে ফেরানোর প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল সংবাদমাধ্যমে। এবার কৌতূহল দেখাল নিউজিল্যান্ডের সংবাদমাধ্যমও
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ক্রিকেটপ্রেমীকে গালাগাল করেছিলেন সাব্বির রহমান। গত বছর এ ঘটনায় ১ সেপ্টেম্বর সাব্বিরকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কারের সুপারিশ করে বিসিবির শৃঙ্খলা কমিটি। এরপর প্রায় চার মাস পেরিয়ে গেলেও সুপারিশ অনুমোদন হয়েছে কি না, তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি বিসিবি। সাব্বিরের এই শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু নিউজিল্যান্ড সফরে সাব্বিরকে বাংলাদেশ দলে ফেরানোয় ব্যাপারটি আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে। সাব্বিরের শাস্তি তাহলে কমাল কে? বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া এই কৌতূহল আছড়ে পড়েছে সুদূর নিউজিল্যান্ডেও।
নিউজিল্যান্ডের খ্যাতনামা সংবাদমাধ্যম ‘স্টাফ’-এ শিরোনাম, ‘নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার তিন সপ্তাহ আগেই নিষিদ্ধ ক্রিকেটারকে নিউজিল্যান্ড সফরের দলে নিল বাংলাদেশ।’ এই প্রতিবেদনে শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন সপ্তাহ আগেই নিষিদ্ধ ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমানকে নিউজিল্যান্ড সফরে দলে টানার কারণ হিসেবে বোঝাবুঝির ভুলকে দোষারোপ করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।’ ক্রিকইনফোর উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, সাব্বিরের শাস্তি নিয়ে ‘ইউ-টার্ন’ নিয়েছে বিসিবি, ‘পেশাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাঁরা হাস্যরসের বিষয়বস্তু। এ ছাড়াও সব মিলিয়ে বাংলাদেশ দলের সংস্কৃতি নিয়ে এটি বিপজ্জনক বার্তাও।’
ক্রিকইনফো এবং বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের উদ্ধৃতিও প্রকাশ করেছে স্টাফ, ‘যখন আমার কাছে খেলোয়াড় তালিকা সই করার জন্য আসে, আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম ওর (সাব্বির) শাস্তির ব্যাপারটা। আমাকে বলেছে শাস্তি শেষ। হয়তো ভুল করে বলেছে কিংবা হতে পারে মেয়াদটা কমিয়ে দেওয়াতে শাস্তি কমে গেছে।’ বিসিবি সভাপতির উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি আরও লিখেছে, বিশ্বকাপ স্কোয়াডের কথা মাথায় রেখে সাব্বিরকে চেয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং কোচ স্টিভ রোডস, এমন কথাই বলেছেন নাজমুল হাসান।
নিউজিল্যান্ডে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের জন্য বাংলাদেশ দলে ডাক পেয়েছেন সাব্বির। এই সিরিজ শুরু হবে ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে। অথচ সাব্বিরের শাস্তির মেয়াদ ফুরোবে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিনে। গত ২৩ জানুয়ারি নিউজিল্যান্ড সফরের ওয়ানডে দলে সাব্বিরকে ফেরায় টিম ম্যানেজমেন্ট। এ নিয়ে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন তখন জানান, বিসিবি সাব্বির শাস্তির মেয়াদ এক মাস কমিয়েছে বলেই তাঁরা তাঁকে দলে নিয়েছেন। সঙ্গে এটাও জানান, বিশ্বকাপের কথা চিন্তা করে সাব্বিরকে নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে দলে নেওয়ার অনুরোধ করেছেন অধিনায়ক মাশরাফি। নির্বাচকেরা তাতে সম্মত হয়েছেন।
শাস্তি কমিয়ে সাব্বিরকে ফেরানো কোনো সমস্যা নয়, কিন্তু যেভাবে তাঁকে ফেরানো হলো সেই প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দুটোই হচ্ছে। সাব্বিরের ফেরা নিয়ে মাশরাফির বক্তব্য, তিনি শুধু দলে সাব্বিরের প্রয়োজন বোধ করার কথা জানিয়েছেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব ও ক্ষমতা দুটি-ই ছিল শুধু নির্বাচকদের। তবে নিউজিল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়কের এই বক্তব্য প্রকাশ করেনি কিংবা এ নিয়ে কিছু লেখেনি।
তবে সাব্বির এবং ফেরার প্রক্রিয়া যে এখন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে কৌতূহলের বিষয়বস্তু তা বলাই যায়। সামনে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ থাকায় নিউজিল্যান্ডের সংবাদমাধ্যমের আগ্রহ হয়তো একটু বেশি। তবে নেতিবাচক এই আগ্রহ ছড়ানোর পেছনে যে বিসিবি-কর্তাদের তথাকথিত ‘ভুল বোঝাবুঝি’ দায়ী তা না বললেও চলে। নিউজিল্যান্ড সফরে যাওয়ার পর স্বাগতিক সংবাদকর্মীরাও হয়তো এ নিয়ে প্রশ্ন করবেন সাব্বিরকে। তখন দেশ-বিদেশের চাপ সহ্য করে ভালো খেলতে পারবেন তো সাব্বির?