>ডানেডিনে ৮৮ রানে হারা ম্যাচে বড় প্রাপ্তি সাব্বির রহমানের সেঞ্চুরি। কিন্তু ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো তিন অঙ্ক ছুঁয়ে সাব্বির যে উদ্যাপনটা করলেন, সেটি একেবারেই পছন্দ হয়নি মাশরাফি বিন মুর্তজার
কোনো ওয়ানডেতে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান যখন ৮৮ রান হয়, এ থেকেই বুঝে নেওয়া যায় ম্যাচটা কেমন হয়েছে। ম্যাচের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি বাংলাদেশের ইনিংসের ৪৮তম ওভারে, তবে জেতা-হারার মীমাংসা তো আসলে হয়ে গেছে তৃতীয় ওভারের শুরুতেই। বাংলাদেশের স্কোর যখন ৩ উইকেটে ২!
তিন অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই অর্ধেক উইকেট হারিয়ে ফেলার ধারা বজায় রেখে ১৫তম ওভারে বাংলাদেশের রান ৫ উইকেটে ৬১। ৩৩১ রানের পাহাড় তাড়া করতে নামা দলের অবস্থা যখন এ-ই, তখন আর এই ম্যাচ নিয়ে আর আগ্রহ থাকে! ‘মরা’ ম্যাচে আগ্রহ জাগিয়ে রাখার কাজটা বলতে গেলে একাই করলেন সাব্বির রহমান। ওয়ানডেতে এর আগের ৫০ ইনিংসে যে সাব্বির একবার সত্তরের ঘরেও যেতে পারেননি, সেঞ্চুরি করে বসলেন তিনিই।
ধবলধোলাই হওয়ার সিরিজে বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের মনে রাখার মতো কীর্তি এই একটাই। বাকি সব ছাপিয়ে সাব্বিরের সেঞ্চুরি নিয়ে তাই আলোচনা হওয়ারই কথা। কিন্তু সেঞ্চুরির চেয়েও যে বেশি আলোড়ন তুলেছে তাঁর উদ্যাপন! এক হাতে ব্যাট আর আরেক হাতে বকবক করার ভঙ্গি দেখিয়ে সাব্বির কী বলতে চেয়েছেন, সেটি বুঝতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সেটির অবশ্য ভিন্ন ভিন্ন অর্থও করা যায়। একটি অর্থ হতে পারে, ‘আমি যা বলবার তা ব্যাট দিয়েই বলব।’ অথবা—‘অনেক তো বকবক করেছ, দেখো ব্যাট দিয়েই তার কেমন জবাব দিলাম।’
প্রথম সম্ভাবনাটা আসলে বলার জন্যই বলা। যা বলবার ব্যাট দিয়েই তা বলার সিদ্ধান্ত এভাবে প্রকাশ্যে ঘোষণা করার কিছু নেই। এটা তো ব্যাটের সঙ্গে হাতের ওই ভঙ্গিতেই বলা হয়ে গেল। সাব্বির আসলে ব্যাট দিয়ে দেওয়া জবাবটাকে যথেষ্ট মনে না করে সমালোচকদের উদ্দেশে বাড়তি কিছু তিরই ছুড়ে দিতে চেয়েছেন। মাশরাফি বিন মুর্তজার যা একদমই পছন্দ হয়নি।
শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষিদ্ধ থাকার সময়টা শেষ হওয়ার আগেই সাব্বিরকে দলে ফেরানো নিয়ে সমালোচনাটা অযৌক্তিক কিছু ছিল না। তারপরও তাঁকে ফেরানো হয়েছে, সাত নম্বরে তাঁর কোনো বিকল্প খুঁজে না পাওয়ায়। তৃতীয় ম্যাচে একজন বোলার বেশি খেলানোয় সাব্বির এদিন অবশ্য নেমেছেন ছয় নম্বরে। শাস্তি ভোগ শেষ না করেই তাঁর দলে ফেরায় অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার চাওয়ার অবশ্যই বড় ভূমিকা ছিল। সাব্বিরের সেঞ্চুরিতে মাশরাফিরই তাই সবচেয়ে বেশি খুশি হওয়ার কথা। সেটি অবশ্যই হয়েছেন। কিন্তু উদ্যাপন করতে গিয়ে সাব্বিবের পাল্টা জবাব দেওয়াটা তাঁর একদমই পছন্দ হয়নি। আউট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরার পর সাব্বিরকে পরিষ্কারভাবে সেটি জানিয়েও দিয়েছেন। তা সাব্বির কী বলেছেন?
শুনুন মাশরাফির মুখেই, ‘ওকে জিজ্ঞেস করায় ও বলেছে, আমি বলতে চেষ্টা করেছি, আমার ব্যাট অনেক দিন পর কথা বলেছে।’ আসল ঘটনা যে তা নয়, সেটি কি আর মাশরাফি বোঝেননি নাকি! নইলে কেন বলবেন, ‘ভবিষ্যতে ওকে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখতে হবে।’ এদিন যে তা একটু কঠিনই ছিল, সেটিও বুঝতে পেরে একটু সহমর্মিতার সুর মাশরাফির কথায়, ‘জীবনের প্রথম (আন্তর্জাতিক) সেঞ্চুরি, এ কারণে ও খুব রোমাঞ্চিত ছিল। আর ও যা কিছুর মধ্য দিয়ে এসেছে, সেটাও মনে রাখতে হবে।’
ভবিষ্যতের জন্য একটা বার্তা অবশ্য দিয়ে দিয়েছেন সাব্বিরকে, ‘আমি আশা করি, ও যা করেছে, তা এই সিরিজেই থেমে থাকবে না। সামনে আমাদের অনেক খেলা। ও এমন আরও অনেক পারফরম্যান্স করবে।’
মাশরাফির বলার ভঙ্গিতে বুঝতে সমস্যা হলো না, সাব্বিরের কাছ থেকে এমন পারফরম্যান্স তিনি আরও অনেক দেখতে চান, তবে এমন ‘কাউকে দেখিয়ে দেওয়া’ বা ‘জবার দেওয়া’র উদ্যাপন আর একবারও নয়।