এক জায়গায় সাকিব এগিয়ে কোহলি–রোহিতদের চেয়েও।
এক জায়গায় সাকিব এগিয়ে কোহলি–রোহিতদের চেয়েও।

সাকিব যেখানে রোহিত, কোহলি, বাবরদের চেয়ে এগিয়ে

আগের বলটা খেলার পরই সতর্ক হতে পারতেন সাকিব আল হাসান। রাকিম কর্নওয়ালের অফ স্পিন স্টাম্প থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল। সাকিব তাঁর প্রিয় শট স্কয়ার কাটের সুযোগ ছাড়বেন কেন! কিন্তু বলটা একটু ওঠায় তাঁর ব্যাটের ওপর দিয়ে জমা পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ উইকেটরক্ষক জশুয়া দা সিলভার গ্লাভসে। ওই ওভার শেষে মাত্র ছয় ওভার পরই মধ্যাহ্নভোজের বিরতি। এদিকে কর্নওয়াল বাঁকের সঙ্গে বাউন্সও পাচ্ছেন। উইকেটে জমে যাওয়ায় সাকিব তখন একটু সাবধান হতেই পারতেন। বাকি কয়েকটি ওভার কাটিয়ে দিয়ে দ্বিতীয় সেশনে শুরু করতে পারতেন নতুন করে। তাহলে হয়তো সাকিব সেঞ্চুরিও পেতেন আর বাংলাদেশও থাকত আরও শক্তিশালী অবস্থানে।

এসবই প্রত্যাশার কথা। চট্টগ্রাম টেস্টে কাল প্রথম দিনের শেষ সেশনে দারুণ ব্যাট করে প্রত্যাশার পারদটা কাল নিজেই চড়িয়েছেন সাকিব। আজ প্রথম সেশনের শুরু থেকেও করছিলেন জমাট ব্যাটিং। কিন্তু ওই যে পছন্দের শট—এই লোভটাই সংবরণ করতে পারেননি। কর্নওয়ালের করা পরের ডেলিভারিটি ছিল আগেরটির ‘রেপ্লিকা’—আর সাকিবও ফাঁদে পা দিয়ে আবারও কাট করতে গিয়ে ভুলটা বুঝতে পারেন। ততক্ষণে ব্যাট চালিয়ে ফেলেছেন এবং দোনোমনায় থেকে ক্যাচ দেন পয়েন্টে। ৬৮ রানের ভীষণ আশাব্যঞ্জক এক ইনিংসের দুঃখজনক অপমৃত্যু।

অথচ তার আগে সুখের বাতাবরনের পরশ বুলিয়েছেন সাকিব নিজেই। এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মাঠে ফেরার পর এটাই ছিল সাকিবের প্রথম টেস্ট। তার আগে আবার খেলতে হয়েছে ওয়ানডে সিরিজ। প্রায় সবাই ভেবেছিলেন, দীর্ঘদিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরায় সাকিবের টেস্টে মানিয়ে নিতে সমস্যা হতে পারে। ভুল। আউট হওয়ার আগে সাকিবের খেলা ১৪৯ বলে ভুল ধরার সুযোগ ছিল খুব কম। আর তাই হিসাব-নিকাশও শুরু হয়ে গিয়েছিল। টেস্টে কত দিন পর সেঞ্চুরি...। কিন্তু তাঁর ধৈর্যচ্যুতি ঘটায় বের করতে হলো ফিফটির হিসাব। টেস্টে ৭৯৭ দিন পর ফিফটির দেখা পেলেন সাকিব।

টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ১৮ বছরের মাথায় প্রথম ইনিংস ব্যবধানে জয়ের মুখ দেখেছিল বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে ঢাকায় এই ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই বিপক্ষে। সে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৮০ রানের পর আজ পেলেন ৬৮-র দেখা। হ্যাঁ, দুটোই সেঞ্চুরি হতে পারত। পঞ্চাশকে এক শ-তে পরিণত করার বিদ্যাটা এখনো আরও ভালোভাবে আয়ত্ত করা বাকি এই তারকা অলরাউন্ডারের।

তাই বলে সাকিব রানের মধ্যে নেই, সে কথা ভাবলে ভুল হবে। ২০১৯ সাল থেকে হিসাব কষলে ন্যূনতম ১০০০ রান করেছেন, এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের ব্যাটিং গড়ই সবচেয়ে বেশি। জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করায় ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন সাকিব। এর মধ্যে এক বছর ছিল স্থগিত নিষেধাজ্ঞা। সে হিসাবে গত বছরের ২৯ অক্টোবর সাজার মেয়াদ শেষ হয় তাঁর। এর মধ্যেই ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে ২০ ম্যাচ খেলেছেন সাকিব। ব্যাটিং গড় ৬৭.৩৭।

২০১৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের ব্যাটিং গড় ৬৭.৩৭

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে (তিন সংস্করণ মিলিয়ে) এ সময় আর কোনো ব্যাটসম্যানই ব্যাটিং গড়ে সাকিবকে টপকে যেতে পারেননি। এমনকি ষাটের ঘরে আছেন শুধু আরেকজন—কেন উইলিয়ামসন। নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক এ সময় সাকিবের দ্বিগুণের বেশি ম্যাচ (৪৩) খেলে ৬০.৪২ গড়ে রান তুলেছেন ২৫৩৮। ৫৯.০৮ গড় নিয়ে তৃতীয় বাবর আজমের সংগ্রহ ৫৩ ম্যাচে ২৯৫৪ রান। শীর্ষ তিনে পরের দুজনের চেয়ে সাকিবের রানসংখ্যা অনেক কম (১০৭৮)। সেটি ম্যাচ কম খেলার জন্য। তবে একটি জায়গায় আবার অলরাউন্ডার হিসেবে সাকিব এ সময় ছাপিয়ে গেছেন বেন স্টোকস ও রবীন্দ্র জাদেজাদের। এ সময় এক ইনিংসে ৫ উইকেটের দেখা পেয়েছেন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার, স্টোকস ও জাদেজা ইনিংসে ৪ উইকেটের বেশি পাননি।

শীর্ষ দশের তালিকায় ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি এ সময় রান তুলেছেন সবচেয়ে বেশি। ৬৬ ম্যাচে ৫৪.০৪ গড়ে ৩২৯৭ রান। সেঞ্চুরি ৭টি। এ সময় রোহিত শর্মার সেঞ্চুরিসংখ্যা সবচেয়ে বেশি (১১)। ৫৬ ম্যাচে ৫১.৪৬ গড়ে ২৮৮২ রান করেছেন রোহিত। উইলিয়ামসন ও স্টিভেন স্মিথরাও এ সময় কোহলির সমান ৭টি করে সেঞ্চুরি পেয়েছেন। ৮টি করে সেঞ্চুরি ডেভিড ওয়ার্নার ও বাবর আজমের। সাকিব এ জায়গায় বেশ পিছিয়ে। এ সময় মাত্র ২টি সেঞ্চুরি পেয়েছেন সাকিব। ওই তো, সেই পুরোনো কথাই ঘুরেফিরে উঠে আসে—পঞ্চাশকে এক শ বানানোর কায়দাটা সাকিবের হয়তো জানা, শুধু ধৈর্য ধরে তা প্রয়োগেই যত সমস্যা! নইলে আজও তো হয়ে যেত, হয়নি বলেই সাকিবের ৬৮ রানে সন্তুষ্টির চেয়ে আক্ষেপ-ই বেশি।