আইপিএল খেলতে সাকিব এখন কলকাতায়। বিমানবন্দরে তাঁর কাঁধের ব্যাগ নিয়ে হায়দরাবাদ একটু রসিকতাও করেছে
আইপিএলে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ টিম এখন কলকাতায়। ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সাকিব আল হাসানও। মাথায় কালো টুপি, পরনে ছাই রাঙা টি-শার্ট আর নীল জিনস—কলকাতা বিমানবন্দরে বাংলাদেশ অলরাউন্ডারকে উষ্ণ অভ্যর্থনাই জানিয়েছে হায়দরাবাদ ফ্র্যাঞ্চাইজি।
সাকিবের কাঁধে ব্যাগ দেখে ফেসবুকে নিজেদের পেজে হায়দরাবাদ খানিকটা রসিকতার সুরে লিখেছে, ‘অভিজ্ঞ ও অলরাউন্ড পারফরমার। সাকিব আল হাসান শুধু আসেনইনি, এক ব্যাগ ট্রিকস নিয়ে এসেছেন।’ সাকিব যেখানেই খেলতে যান প্রচুর ‘ট্রিকস’ বা ‘কৌশল’ নিয়েই যান। তাঁর কৌশল কতটা কার্যকর হায়দরাবাদ গত আইপিএলেই দেখেছে। ১৭ ম্যাচের ১৩ ইনিংসে ২৩৯ রান আর ১৪ উইকেট নিয়ে শুধু দলেরই নয়, পুরো টুর্নামেন্টে সেরা পাঁচ অলরাউন্ডারের একজন ছিলেন। হায়দরাবাদের ফাইনালে ওঠার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।
ব্যাটিংয়ে লম্বা ইনিংস না খেলতে পারার অতৃপ্তি থাকলেও গতবার সাকিব সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত হয়েছেন বোলিং দিয়ে। ২০১৮ আইপিএলে হায়দরাবাদের বোলিং যে সবচেয়ে সেরা বলা হয়েছিল, সেটির বড় কৃতিত্ব সাকিবের। টি-টোয়েন্টিতে স্পিনারদের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা দিতে হয় পাওয়ার প্লেতে। বেশির ভাগ ম্যাচে সাকিবকে আক্রমণে আসতে হয়েছিল এ সময়টাতেই। অধিনায়কের আস্থার যথার্থ প্রতিদানও দিয়েছেন তিনি। প্রতিপক্ষে টপ অর্ডারে আঘাত হানছেন, কৃপণ বোলিং করেছেন। হায়দরাবাদ যে ছয়টি লো স্কোর (১৫০ রানের নিচে) ডিফেন্ড করে জিতেছিল, বেশির ভাগ ম্যাচেই বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন সাকিব। দুটিতে তো ম্যাচসেরার জোরালো দাবিদারও ছিলেন। শুধু পারফরম্যান্স দিয়েই নয়, যেহেতু বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক, নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে হায়দরাবাদ অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে (এবারও তিনিই অধিনায়ক) নানাভাবে সহায়তা করছিলেন। বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিং, দলের থিঙ্ক ট্যাংক—একের ভেতর তিন নয়, সাকিব যেন চার! এ কারণে বাংলাদেশ অলরাউন্ডারকে এক ম্যাচেও বসিয়ে রাখেনি হায়দরাবাদ টিম ম্যানেজমেন্ট।
সাকিব যে হায়দরাবাদের কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, সেটি শুধু টুর্নামেন্টে নয়; অন্য সময়েও বুঝিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। সাকিবকে যেমন এবার আইপিএল নিলামে উঠতেই দেয়নি ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। আজ কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছানো মাত্র সাকিব নিজের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন তাঁর দল হায়দরাবাদের পেজে। বাঁহাতি অলরাউন্ডারের কলকাতায় পা রেখেই মনে পড়ে গেছে পুরোনো স্মৃতি, ‘কলকাতায় আসা ও কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে বিপুল দর্শকের সামনে খেলা—এই স্টেডিয়ামে অনেক স্মৃতি আছে আমার। পরশু ম্যাচের দিকে তাকিয়ে আছি। আমাদের সমর্থন করুন, আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। আশা করি আপনাদের আস্থার প্রতিদান দিতে পারব।’
শুধু আজই নয়, সাকিবের বিশেষ কোনো অর্জন বেশ ফলাও করে প্রকাশ-প্রচার করে থাকে হায়দরাবাদ। এমনকি তাঁর বিবাহবার্ষিকীতে পর্যন্ত শুভেচ্ছা জানায় ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। অবশ্য এর সঙ্গে একটি বাণিজ্যিক উদ্দেশে আছে, সেটিও এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। হায়দরাবাদ খুব ভালো করেই জানে, সাকিব এই দলে খেলেন বলেই বাংলাদেশের দর্শকদের বিপুল আগ্রহ কিংবা সমর্থন তাদের প্রতি। সাকিবের ছবি বা কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা মানেই বাংলাদেশের দর্শকেরা সেটি বিপুল উৎসাহ নিয়ে দেখবেন। কিন্তু শুধু দর্শকদের আগ্রহের কথা চিন্তা করেই যে সাকিবকে হায়দরাবাদ ভীষণ গুরুত্ব দেয়, মোটেও তা নয়। মাঠে তিনি দুর্দান্ত পারফরমার, ধারাবাহিক ভালো খেলেন, হায়দরাবাদের কাছে এটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কাল চেন্নাইয়ে বিরাট কোহলির বেঙ্গালুরুর সঙ্গে ধোনির চেন্নাইয়ের ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে আইপিএল। তবে বাংলাদেশের দর্শকদের আইপিএল শুরু রোববারে। ইডেন গার্ডেনসে কলকাতার বিপক্ষে নামবে সাকিবের হায়দরাবাদ। মাঝে তিনটা মৌসুম বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে আইপিএল মানে ছিল সাকিব-মোস্তাফিজ। এবার সেটি নেমে এসেছে শুধু সাকিবে। বাংলাদেশের দর্শকদের উচ্ছ্বাস-হতাশা নির্ভর করছে ‘ব্যাগ করে নিয়ে যাওয়া’ এ অলরাউন্ডারের ‘ট্রিকসের’ সাফল্য-ব্যর্থতার ওপর!