ঢাকা টেস্টে সাকিবকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ।
ঢাকা টেস্টে সাকিবকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ।

সাকিব নেই, বাড়তি সুবিধা মনে করেন না উইন্ডিজ কোচ

চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনেই আভাস মিলেছিল, সেটি টেস্ট শেষ হওয়ার আগেই প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেল। গতকাল এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ক্রিকেট বোর্ড থেকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুরে সাকিবকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ।

বহুদিন পর টেস্ট খেলতে নামা বাংলাদেশের জন্য বড় এক ধাক্কা এটি। সাকিবকে ছাড়া বাংলাদেশ কতটা দিগভ্রান্ত হয়ে পড়ে, সেটা চট্টগ্রামেই টের পাওয়া গেছে। পঞ্চম দিনের উইকেটেও ৩৯৫ রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার রেকর্ড গড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এমন অবস্থায় সাকিবকে ছাড়াই আরেকটি পূর্ণাঙ্গ টেস্ট খেলতে হবে দলকে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য নিশ্চিতভাবেই বড় সুযোগ এটি। বাংলাদেশের মাটিতে বহুদিন পর টেস্ট সিরিজ জয়ের পথে সাকিবের অনুপস্থিতি বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করার কথা। যদিও উইন্ডিজ কোচ ফিল সিমন্সের চোখে সাকিবহীন বাংলাদেশও বড় প্রতিপক্ষ।

চট্টগ্রামে সাকিবকে খুব বেশিক্ষণের জন্য পায়নি বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসেও মাত্র ছয় ওভার বল করেছিলেন। কিন্তু যতক্ষণ ছিলেন, ততক্ষণেই পার্থক্য গড়ে দিচ্ছিলেন। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে টপ অর্ডারে তিনিই বড় ইনিংস গড়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। টেস্ট প্রত্যাবর্তনটা একটুর জন্য সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারেননি।

ঢাকা টেস্টে সাকিবের না থাকাটাকে নিজেদের জন্য খুব বড় সুবিধা মনে করেন না ফিল সিমন্স

সাকিবের অনুপস্থিতি বেশি টের পাওয়া গেছে বোলিংয়ে। কাইল মেয়ার্স ও এনক্রুমা বোনার যখন থিতু হয়ে গিয়েছিলেন পঞ্চম দিনে, তখন সাকিবের মতো চাপের মুখে পরীক্ষিত কাউকে খুব দরকার ছিল বাংলাদেশের। মাঠের বাইরে দাঁড়িয়েই সতীর্থদের সাহস দিচ্ছিলেন, উপদেশ দিচ্ছিলেন। কিন্তু সেটা কাজে লাগাতে পারেননি মিরাজ, তাইজুলরা। সুস্থ থাকলে হয়তো নিজেই কাজটা করে দেখাতে পারতেন।

বাঁ ঊরুর চোটে সাকিবের এভাবে ছিটকে পড়া নিঃসন্দেহে বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেবে। কারণ, সাকিবের অনুপস্থিতি মানেই একই সঙ্গে একজন ব্যাটসম্যান ও বোলার হারানো। সেই সঙ্গে সহজাত নেতৃত্বগুণ ও অভিজ্ঞতা তো আছেই। কিন্তু উইন্ডিজ কোচ সিমন্স সেটা মানতে চাননি। গতকাল এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘না, এটা আমাদের কোনো সুবিধা দিচ্ছে না। সে বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন। কিন্তু ওদের অনেক স্পিনার ও ব্যাটসম্যান আছে, যারা স্পিন করতে পারে, ঠিকই কাউকে না কাউকে খুঁজে নেবে।’

বহুদিন পর বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা জেগেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। এমন অবস্থায় সবার আশার বেলুন ফুলতেই পারে। সিমন্স হয়তো এ কারণেই বাড়তি সতর্ক। সাকিবের মতো অলরাউন্ডার বিশ্ব ক্রিকেটেই বিরল। সেখানে সিমন্স বলছেন, বাংলাদেশ মিরপুর টেস্টে ঠিকই একটা বিকল্প খুঁজে নেবে! সিমন্সের দাবি, বাংলাদেশে সাকিবের জায়গায় খেলার মতো খেলোয়াড় আছে, ‘সাকিবের মতো ভালো হয়তো নেই, কিন্তু এক টেস্টের জন্য যথেষ্ট ভালো কাউকে পাবে তারা। ওর অনুপস্থিতিতে সুবিধা হবে, এটা ধরে নিতে পারি না। আমাদের জন্য মোটেও সহজ হবে না।’

সাকিবের অনুপস্থিতিতে চট্টগ্রামে টের পেয়েছে বাংলাদেশ।

চট্টগ্রাম টেস্ট জিতলেও মিরপুরে কঠিন পরীক্ষা হবে বলেই মনে করেন সিমন্স। বরাবরই মিরপুরে স্পিনাররা বেশি ভালো করেছেন। এ কারণেই সাকিবের অনুপস্থিতি বাংলাদেশের বোলাররা ঢেকে দিতে পারবেন বলে ধারণা সিমন্সের। এমন অবস্থায় পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য নিজের দুই স্পিনারের দিকে তাকিয়ে সিমন্স। সিরিজের প্রথম টেস্টে দারুণ করেছেন রাহকিম কর্নওয়াল ও জোমেল ওয়ারিক্যান। বাংলাদেশের ১৮ উইকেটের ১২টি এ দুই স্পিনার পেয়েছেন।

এতেও সন্তুষ্ট নন সিমন্স। তাঁর ধারণা, আরও ভালো করার সামর্থ্য রাখেন দুজন। আর মিরপুরের উইকেট তাঁদের সাহায্য করবে বলে ধারণা কোচের, ‘আমার মনে হয় না স্পিনাররা যতটা সম্ভব ততটা ভালো করেছে। ওরা ভালোই করেছে কিন্তু আমাদের আরও উন্নতির জায়গা আছে। ভিন্ন ব্যাটসম্যানের জন্য আমাদের কী ধরনের ফিল্ডিং সাজাতে হবে, তার ৯০ ভাগ ঠিক করতে পেরেছি। কিন্তু আমাদের এটা ধরে রাখতে হবে। আর চট্টগ্রামের চেয়ে ঢাকায় স্পিন বেশি হবে, এটা প্রায় নিশ্চিত।’

মিরপুরে যা-ই হোক না কেন, চট্টগ্রামের টেস্টটি যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য বড় পাওয়া, সেটা স্বীকার করেছেন কোচ। নিয়মিত একাদশের অর্ধেক খেলোয়াড় ছাড়াই আসা এক দল এশিয়ার মাটিতে সর্বোচ্চ রান তাড়া করার রেকর্ড গড়বে , কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। দলের এ সাফল্য শুধু মাঠ নয়, মাঠের বাইরেও প্রভাব ফেলেছে বলে ধারণা সিমন্সের, ‘আমার ধারণা এটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের সব মানুষের জন্য অনেক বড় ঘটনা। এমন সময়ে এত দারুণ এক জয়ে বিশ্বজুড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মানুষের মন ভালো করে দিয়েছে। এই অন্ধকার সময়ে আলো এনে দিয়েছি। কিছু কিছু দ্বীপে অনেক সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।’

১১ ফেব্রুয়ারি থেকে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। ২০১৮ সালে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলেও এবার আর সিরিজ হারছে না ক্যারিবীয়রা।