সাকিব আল হাসান আর মোস্তাফিজুর রহমানের আইপিএলে সুযোগ পাওয়া, আইপিএলের সময়ে বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটি সিরিজ থেকে সাকিবের ছুটি চাওয়া...বাংলাদেশের ক্রিকেট গত কিছুদিন সরগরম এ নিয়েই। ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত দিক ভেবে এভাবে জাতীয় দলের খেলা বাদ দিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি খেলতে ছুটি দেওয়া উচিত কি না, নাকি জাতীয় দলে খেলতে তাঁদের বাধ্য করা উচিত—এসব নিয়েও আলোচনা চলছিল।
এর মধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভা হলো আজ। সভা শেষে সংবাদমাধ্যমে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান কথা বলেছেন। কথা তো নয়, যেন বোমা ফাটিয়েছেন। খেলোয়াড়দের ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগগুলোতে খেলার জন্য ছুটি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঠিকই, সে জন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে বিসিবির চুক্তিতেও বদল আনা হবে। তবে এর মধ্যেই সাকিবের টেস্ট খেলার ইচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন নাজমুল হাসান। বিসিবি সভাপতি বলছেন, সাকিব আরও তিন বছর আগ থেকেই বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট খেলতে অনাগ্রহী!
সাকিবের টেস্ট খেলার ইচ্ছা-অনিচ্ছা নিয়ে কথাগুলো এমন সময়ে হচ্ছে, যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের আনকোরাদের নিয়ে গড়া ভাঙাচোরা এক দলের কাছে বাংলাদেশ নিজেদের মাটিতে দুই টেস্টের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর ধাক্কা সামলাচ্ছে। এর মধ্যেই খবর আসে, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সিরিজে তো ব্যক্তিগত কারণে যাচ্ছেনই না, এরপর আইপিএলে খেলার জন্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম ও অ্যাওয়ে দুটি সিরিজেই খেলতে চান না সাকিব। ছুটি চেয়েছেন বিসিবির কাছে, বিসিবি সে ছুটি মঞ্জুরও করেছে।
এ পর্যন্ত বেশ শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়েছে। কিন্তু আজ সংবাদ সম্মেলনে বোমা ফাটালেন নাজমুল হাসান। খেলোয়াড়দের সঙ্গে চুক্তিতে বদল আনার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি—খেলোয়াড়েরা কে কোন ফরম্যাটে খেলতে চান, সেটি আগেই জানিয়ে দিলে সেই হিসেবে চুক্তি হবে। পাশাপাশি কোন কোন ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেলতে যাবেন, সেটিও আগেই জানিয়ে দেওয়ার কথা বললেন নাজমুল হাসান। সেটির ব্যাখ্যাতেই এল সাকিবের প্রসঙ্গ আর বিসিবি সভাপতির বোমা।
চুক্তির ধরন নিয়ে নাজমুল হাসানের ব্যাখ্যা, ‘যারা ওয়ানডে খেলবে, টি-টোয়েন্টি খেলবে, তারা বলে দেবে আমরা টেস্ট খেলব না। কোথায় কোথায় টুর্নামেন্ট হবে, ফ্র্যাঞ্চাইজি হবে, সেগুলো খেললে আমরা টেস্ট খেলব না...এটা (ক্রিকেটাররা বোর্ডকে) বলে দিক। আমরা তো লিখিত নিয়ে নিচ্ছি। কিন্তু জাতীয় দলে খেলার ক্ষেত্রে যে বলবে খেলব, তাকে খেলতেই হবে।’
এরপরই নাজমুল হাসান চলে গেলেন সাকিবের প্রসঙ্গে, ‘আমার কথা হচ্ছে, এগুলো (চুক্তির ধরন বদল) হলো কথার কথা। মূল জিনিস হলো, সাকিবকে কি খেলানো যাবে না জোর করে? ওকে ছুটি না দিলে কী করত? হয়তো খেলত। কিন্তু আমরা এটা চাই না। আমরা চাই, যারা খেলাটাকে ভালোবাসে, তারাই খেলুক। জোর করে আমি খেলাতে চাই না। সাকিব তো আরও তিন বছর আগেই খেলতে চায়নি টেস্টে।’
আমি এখন পর্যন্ত ধরে নিচ্ছি, হয়তো এই ফরম্যাটটা ওর পছন্দ না। সব ফরম্যাট সবার পছন্দ না হতেই পারে। এটা যৌক্তিক ব্যাপারই।সাকিবের টেস্ট খেলা পছন্দ নয় জানিয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান
সাকিবকে টেস্টে আগ্রহী করতে তখন বিসিবির জোর করে নেওয়া পদক্ষেপগুলোরও ফিরিস্তি দিলেন বিসিবি সভাপতি, ‘ও (সাকিব) তো এমনিতেই টেস্টের প্রতি অত আগ্রহ দেখায়নি। চাচ্ছিল না খেলতে। তখন তো ওকে টেস্ট অধিনায়ক করে দেওয়া হলো। জোর করে চেষ্টা করলাম তো! কিন্তু আসলে জোর করে খেলানোর মানে হয় না। আমার মনে হয়, তাতে করে আমরা সামনের দিকে এগোতে পারছি না, পেছনের দিকে যাচ্ছি।’
সেসব দিক মাথায় রেখেই চুক্তির প্রস্তাবিত বদলে সুবিধা খুঁজে নিচ্ছেন নাজমুল হাসান, ‘এখন সবার জন্য যদি সুযোগ খোলা থাকে (চাইলে আগে থেকেই জানিয়ে জাতীয় দলের খেলা বাদ দিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার), কাউকে জোর করব না। আমরা যখন জানব এই কয়জন খেলোয়াড় চায় না টেস্ট খেলতে, তখন তো তাদের বিকল্প নিয়ে চিন্তা করতে হবে আমাদের। হয়তো এক বছর বা দেড় বছর সময় লাগবে, লাগুক। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য আমরা খেলোয়াড় পাব।’
সাকিবের টেস্ট খেলা পছন্দ নয় বলে বিসিবি সভাপতির অনুমান, নাকি সত্যি, সেটা সাকিব বলতে পারবেন। তবে সাকিবের টেস্ট পছন্দ না হলেও সেটিতে বিস্ময়ের কিছু দেখছেন না নাজমুল হাসান, ‘আমি এখন পর্যন্ত ধরে নিচ্ছি, হয়তো এই ফরম্যাটটা ওর পছন্দ না। এটা ভেবে নেওয়াটাই আমার জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে অনেক বেশি ভালো ব্যাপার। সব ফরম্যাট সবার পছন্দ না হতেই পারে। এটা যৌক্তিক ব্যাপারই।’
নতুন চুক্তির ধরনে ক্রিকেটাররা আগে থেকে বলে রাখলে যেকোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলতে যেতে তো পারবেন ঠিকই, কিন্তু ছুটি চাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশের কোনো নেতিবাচক প্রভাব কি পড়বে? বিসিবি সভাপতির উত্তর, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, (চাইলেই ছুটি নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ) করতে পারে। ওরা সবাই যদি লিখে দেয়, আমরা কেউ জাতীয় দলের হয়ে খেলতে চাই না, আমি এখনই রাজি। তবে আমাকে অবশ্যই (আগে থেকে) জানতে হবে। কোনো ট্যুরের আগে এসে বললে হবে না। হঠাৎ করে সিরিজের আগে আওয়াজ শুনি একটা, এগুলো চাচ্ছি না।’
এভাবে এগোলে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্সে সাময়িক একটা প্রভাব যে পড়বে, সেটিও বুঝতে পারছেন নাজমুল হাসান। সে জন্য এক বছর সময় চাইছেন তিনি, ‘যে খুশি বলে দিক, কে কে খেলতে চায় না। কোনো অসুবিধা নেই। তবে সিরিজের আগে বলা যাবে না। আমাদের সময় লাগবে, আমি একটা বছর সময় চাই। এক বছর পরে কাউকে লাগবেও না, কোনো অসুবিধা নেই।’