টেলিভিশন খুললেই ইদানীং চোখে পড়বে একটা বিজ্ঞাপন—নেটে ব্যাটিং করতে নামা সাকিব আল হাসানকে পেছন থেকে ডাকছে ছোট্ট এক বাঘ। আসলে ছেলেটার সারা গায়ে বাঘের সাজ আর বুকে আঁকা দেশের পতাকা। বাঁ হাত বুকে চেপে ডান হাতের মুঠি ওপরে তুলে চিৎকার করে বলছে, ‘সা-কি-ব। খেলবে টাইগার, জিতবে টাইগার।’ বিজ্ঞাপনচিত্রে সাকিব ছাড়াও রয়েছেন পেসার তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেন ও ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান। তারকায় ঠাসা লাইফবয় সাবানের বিজ্ঞাপনটিতে আলাদা করে সবার নজর কেড়েছে আয়াজ।
আয়াজের বয়স ৫ বছর। পড়ছে বাড্ডার ন্যাশনাল স্কুলে নার্সারিতে। বাবা আশরাফুল আলম স্কুলশিক্ষক। মা সালমা আলী গৃহিণী। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান আয়াজ। বন্ধুরা ডাকে টাইগার আয়াজ বলে। ক্লাসে ঢুকলেই সবাই বলে, ‘ওই যে টাইগার আসছে।’ যেখানেই যাক না কেন, সবাই তার সঙ্গে সেলফি তুলতে চায়। টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে আয়াজ এর আগে অনেকবার দাঁড়ালেও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের সঙ্গে কাজ করেই বেশি রোমাঞ্চিত। এ পর্যন্ত টেলিভিশন ও অনলাইন মিলিয়ে ১৮টি বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছে খুদে আয়াজ।
সালমা আলী বলছিলেন, ‘ও প্রথম বিজ্ঞাপনের মডেল হয় ৩ বছর বয়সে, কিন্তু এই একটা বিজ্ঞাপনের কারণেই সবাই ওকে বেশি করে চিনেছে।’
গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অফিশিয়াল স্পনসর হয়েছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের আগে ইউনিলিভারের পক্ষ থেকে জাতীয় ক্রিকেট দলকে নিয়ে একটা বিজ্ঞাপন বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই বিজ্ঞাপনে অংশ নিতে অডিশনে বাছাইয়ের পর টেকে আয়াজ। গত মাসে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এবং কোকাকোলা স্টুডিওতে হয় শুটিং।
এর আগে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে একবার দেখা হয়েছিল তার বিপিএল চলার সময়। সারা দিন সাকিবের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে, সেটা প্রথমে বিশ্বাসই হতে চাইছিল না আয়াজের। শুটিংয়ে কেমন মজা করলে? প্রশ্ন করতেই হেসে ছোট্ট আয়াজের উত্তর, ‘আমার হাঁচির দৃশ্যটা ১০ বার দিতে হয়েছে। যখন হাঁচি আসছিল না, সাকিব ভাইয়া মজা করে নাকে সুড়সুড়ি দিচ্ছিলেন।’
ক্রিকেট বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত ৫ ম্যাচে ৪২৫ রান করেছেন সাকিব। বল হাতে নিয়েছেন ৫ উইকেট। যখনই সাকিব ব্যাট করতে নামেন, টিভির সামনে থেকে উঠতেই চায় না আয়াজ। খেলার বিরতিতে নিজের বিজ্ঞাপনটা শুরু হতেই বাবাকে ডেকে বলে, ‘দেখো বাবা, আমাকে দেখাচ্ছে।’
ইউনিলিভার বাংলাদেশের মার্কেটিং ডিরেক্টর (পারসোনাল কেয়ার) নাফিস আনোয়ার বিজ্ঞাপনটা তৈরি করতে পেরে ভীষণ খুশি, ‘আমরা এটা এমনভাবে তৈরি করতে চেয়েছি যেন এটা মনে না হয় লাইফবয়ের বিজ্ঞাপন। চেয়েছি, এটা যতটা না লাইফবয়ের বিজ্ঞাপন হোক, তার চেয়েও বেশি হোক বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপার। হারুক বা জিতুক, দলের জন্য আমাদের থাকবে নিঃশর্ত সমর্থন।’
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল যখন হারিয়ে দেয় প্রতিপক্ষকে, ঠিক ওই মুহূর্তে টেলিভিশনের পর্দায় বিজ্ঞাপনে ভেসে ওঠে আয়াজের মুখ। যেন পুরো দেশবাসীর হয়েই ছোট্ট আয়াজ বলছে, ‘খেলবে টাইগার, জিতবে টাইগার।’