মাখায়া এনটিনি নিজে ছিলেন বিনোদনের ফেরিওয়ালা। এবার সেই এনটিনি নিজেই বিনোদিত হলেন এবং তাঁকে বিনোদনটা দিলেন সাকিব আল হাসান।
সেঞ্চুরিয়নে কাল সাকিবের ৬৪ বলে ৭৭ রানের ইনিংসটি দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক এই ফাস্ট বোলারকে এতটাই মুগ্ধ করেছে যে বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় জয়ের সব কৃতিত্বই যেন ঢেলে দিলেন সাকিবের ঝুড়িতে।
১৯৯৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এনটিনি দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্ট খেলেছেন ১০১টি, ওয়ানডে ১৭৩টি ও টি-টোয়েন্টি ১০টি। ১৩ বছরের ক্যারিয়ার, স্বাভাবিকভাবেই সেটি গেছে অনেক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে।
দীর্ঘ ক্যারিয়ার তাঁকে খেলোয়াড় চিনতেও শিখিয়েছে। মাঠে গতকালের উপস্থিতি দেখেই যেমন সাকিবের পুরো ক্রিকেটার সত্তারই বিশ্লেষণ করে ফেললেন তিনি।
কাল ম্যাচ চলাকালেই সুপার স্পোর্ট পার্কের প্রেসবক্সের বাইরে এনটিনি কথা বলছিলেন বাংলাদেশ থেকে আসা সাংবাদিকদের সঙ্গে। সাকিবের প্রসঙ্গ টেনে আনলেন তিনি সেখানেই, ‘খুবই ভালো, খুবই বিনোদনদায়ী ওদের ব্যাটিং। ইয়াসির আলীকে সঙ্গে নিয়ে সাকিব তো দারুণ খেলল। ১০০ রানের ওপর জুটি গড়েছে ওরা। আমাকে বলতেই হবে, সাকিবের ব্যাটিংটা দেখার জন্য দারুণ ছিল!’
এনটিনির চোখে বাংলাদেশের জয়ে সাকিবের অবদান শুধু ৭৭ রানের ঝলমলে ইনিংসটিই নয়, মাঠে তাঁর শরীরী ভাষা আর আক্রমণাত্মক মানসিকতাও দলের মধ্যে বাড়তি আত্মবিশ্বাস সঞ্চার করেছে, ‘আমরা দেখলাম সাকিব দলটাকে একসঙ্গে করে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে গেল। খুব দ্রুত রান তুলেছে সে। এই কন্ডিশনে এটা জরুরি ছিল এবং দলকে মানসিকভাবে উজ্জীবিত করতেও এর দরকার ছিল।’
মাঠে সাকিবের এমন উপস্থিতি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার প্রতিফলন বলেই মনে করেন এনটিনি, ‘দুই শতাধিক (২১৯টি) ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে সে। এটা সেই অভিজ্ঞতারই প্রতিফলন। আতঙ্কিত না হয়ে নিজের শট খেলায় মনোযোগী হয়েছে সাকিব। নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলেছে আর সেটাই বাংলাদেশের জন্য দরকার ছিল।’
এনটিনির বিশ্বাস, দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটে সামনের ম্যাচগুলোয় বল হাতেও কার্যকর হয়ে উঠবেন সাকিব, ‘সামনের ম্যাচগুলোয় স্পিনারদের মধ্যে সাকিবের বোলিংটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে এখানকার উইকেটে। পেসাররা অপেক্ষাকৃত তরুণ, তবে তাদের সঙ্গে অ্যালান ডোনাল্ড আছে। তার কাছে থেকে ওরা অনেক কিছু শিখবে এই সিরিজ থেকে।’
ডোনাল্ডের ব্যাপারে এনটিনি স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি উচ্ছ্বসিত। সেটা দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সিতে দুজন একসঙ্গে খেলেছেন বলেই। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশ দলের বোলিং কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন সাবেক প্রোটিয়া ফাস্ট বোলার ডোনাল্ড। আরেক দক্ষিণ আফ্রিকান রাসেল ডমিঙ্গো তো প্রধান কোচই।
দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে দক্ষিণ আফ্রিকান কোচদের সহায়তা বাংলাদেশকে বিশেষভাবে সাহায্য করবে বলে ধারণা এনটিনির, ‘বাংলাদেশ দলে এই দেশের ঘরের ছেলেরা আছে। তাদের কাছ থেকে দল অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট কেমন, এখানে কী ধরনের শট খেলতে হবে...এগুলো তারা বলতে পারে।’
ডোনাল্ডের কথাটা বললেন আলাদা করেই, ‘বোলারদের কথা যদি বলি, তাদের সঙ্গে অ্যালান ডোনাল্ড আছে। সে এখানে থেকেছে, খেলেছে, এখানকার মাঠে অনেক উইকেট নিয়েছে। এই সিরিজে ভালো করার জন্য তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।’
যেকোনো দলের কোচিং স্টাফেই ডোনাল্ডের উপস্থিতিটাকে অভিজ্ঞতার বিশাল এক ভান্ডার বলে মনে করেন এনটিনি, ‘ডোনাল্ড আছে মানে দলের সঙ্গে অভিজ্ঞতা আছে, এটা নিশ্চিত। সে তিন শতাধিক টেস্ট উইকেট নিয়েছে। বিশ্বকাপের মতো বড় বড় টুর্নামেন্টে খেলেছে। কোচিং দলে তাকে পাওয়া মানে বড় একটা পরিবর্তন আসা। বাংলাদেশের ফাস্ট বোলারদের বোলিংয়ে নিশ্চয়ই তার জ্ঞানটা যোগ হবে।’