>জুয়াড়ি দীপক আগারওয়াল কোন কৌশলে ক্রিকেটারদের ফাঁদে ফেলেন, অনুসন্ধান চালিয়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পেয়েছে ভারতীয় পত্রিকা ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’।
সাকিব আল হাসান নিষিদ্ধ হওয়ার পর দীপক আগারওয়াল নামটা পরিচিত হয়ে গেছে পুরো ক্রিকেট বিশ্বে। বাংলাদেশ অলরাউন্ডারের বড় সর্বনাশ হয়েছে এই জুয়াড়ির ফাঁদে পড়ে। ভারতীয় পত্রিকা ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ অনুসন্ধান চালিয়ে আগারওয়ালের কিছু অজানা তথ্য প্রকাশ করেছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, আগারওয়ালের বাড়ি ভারতের হরিয়ানায়। তবে এখন ভারতে থাকেন না, থাকেন দুবাইয়ে। হরিয়ানায় থাকতে বিরাট আর্থিক ক্ষতি হওয়ায় আগারওয়াল পাড়ি জমান মরুর দেশে। শুধু ম্যাচ পাতানো কিংবা জুয়াড়ি হিসেবে তিনি পরিচিত নন, ভারতের ন্যাশনাল ক্যাপিটাল রিজিওনে ক্রিকেট একাডেমিও আছে আগারওয়ালের। তার মানে এই জুয়াড়ি ক্রিকেটার তৈরিতেও যুক্ত!
আবুধাবিতে একটি ম্যাচে সন্দেহজনক চালচলনে আগারওয়াল প্রথম আইসিসির রাডারে আসেন। তাঁকে নিয়ে আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিট নিবিড় তদন্ত শুরু করে সাকিবের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথোপকথনের প্রমাণ পাওয়ার পরে।
ম্যাচ পাতানোর বিশাল সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত নন আগারওয়াল। তবে গোয়ালিয়রভিত্তিক জুয়াড়িদের সঙ্গে তিনি কাজ করেন। গোয়ালিয়রের জুয়াড়িও আইসিসির নজরদারিতে আছে।
আগারওয়ালের প্রধান কাজ খেলোয়াড়দের কাছাকাছি যাওয়া। এরপর টোপ দিয়ে দলের ভেতরের খবর বের করা।
এখন খুব ছোট লিগেও সক্রিয় হয়ে ওঠে হাজার হাজার জুয়াড়ি। ভেতরের সামান্য খবরও তাদের অনেক কাজে দেয়।
আগারওয়ালের কাজের ধরনটা এমন—প্রথমে সে খেলোয়াড়কে খুব ভালোভাবে অনুসরণ করতে শুরু করেন, যে লিগ বা টুর্নামেন্টই ওই ক্রিকেটার খেলুন না কেন। আলোচনার প্রথম ধাপে নিজেকে এজেন্ট হিসেবে পরিচয় দেন। খেলোয়াড়কে প্রস্তাব দেন, তিনি অমুক লিগ বা টুর্নামেন্টের সঙ্গে আছেন। এই লিগ বা টুর্নামেন্ট খেললে বড় অঙ্কের পারিশ্রমিক মিলবে।
আগারওয়ালের এই টোপটা ভীষণ কাজে দেয় অনেক সময়। খেলার জন্য বড় অঙ্কের প্রস্তাব পেলে যেকোনো ক্রিকেটার আলাপ এগিয়ে নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
একবার খেলোয়াড়ের আস্থা অর্জন করতে পারলে আগারওয়াল তাঁর পরের চালটা দেন—জানতে চান দলের ভেতরের খবর। জানতে চান দলের সমন্বয়, একাদশ, সম্ভাব্য স্কোর নিয়ে।
আগারওয়াল কীভাবে এসেছিলেন সাকিবের কাছে? আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিটকে বাঁহাতি অলরাউন্ডার জানিয়েছেন, তাঁরই পরিচিত একজন নাম্বারটা ওই জুয়াড়িকে দিয়েছেন।
সাকিব অনৈতিক কোনো সুবিধা জুয়াড়ির কাছ থেকে নেননি। ম্যাচ পাতাননি। দলের ভেতরের কোনো তথ্যও দেননি। তবে জুয়াড়ির প্রস্তাব তিনি কেন সময়মতো দুর্নীতি দমন ইউনিটকে জানাননি, সেটিই হয়েছে তাঁর ভুল। সেটিই তাঁর অপরাধ। সে অপরাধে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তারকা শাস্তিও পেয়েছেন।
কিন্তু সাকিবের ঘটনা বিরাট শিক্ষা বাকি ক্রিকেটারদের। আগারওয়ালের মতো জুয়াড়িরা নানা রূপ ধরে আসেন ক্রিকেটারদের কাছে। খেলোয়াড়দের এখন চ্যালেঞ্জ এটাই, বহুরূপী এই সর্বনাশা জুয়াড়িদের চেনা এবং তাঁদের থেকে এক শ হাত দূরে থাকা।