মিরপুর টেস্টে 'পেয়ার' পেয়েছেন তামিম ইকবাল
মিরপুর টেস্টে 'পেয়ার' পেয়েছেন তামিম ইকবাল

সাকিবের চোখে ব্যাটিং ধসের কারণ ও সমাধান

টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাটিং ধসের আরেক নাম যেন বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ, কন্ডিশন যেমনই হোক; নিয়মিত বিরতিতেও দেখা মেলে ব্যাটিং ধসের। কখনো বা মাঝখানে বিরতিও পড়ে না। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ডারবান ও পোর্ট এলিজাবেথে পরপর দুই টেস্টে ৫৩ ও ৮০ রানে অলআউট হওয়ার স্মৃতি তো এখনো টাটকাই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে প্রথম ইনিংসে ২৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর আবারও এক শর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা জেগেছিল। মুশফিক আর লিটনের বীরত্বে যা এড়িয়ে উল্টো বিশ্ব রেকর্ড গড়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। আজ চতুর্থ দিন বিকেলে অন্তত প্রথম অংশটার পুনরাবৃত্তি হয়ে গেছে। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩ রানেই পড়ে গেছে ৪ উইকেট।

২৩ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ

কেন টপ অর্ডার বারবার এভাবে ভেঙে পড়ছে? চতুর্থ দিন বিকেলে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা সাকিব আল হাসানের কাছে সেটিরই উত্তর জানতে চাইলেন সাংবাদিকেরা। ১৮ মিনিট দীর্ঘ সংবাদ সম্মেলনে বেশ কয়েকবার ফিরে ফিরে এসেছে এই প্রসঙ্গ। সাকিবও এই একই প্রশ্নের উত্তর নানাভাবে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাতে বেরিয়ে এসেছে ধসের নানা কারণ। সমাধানের উপায়ও বলেছেন সাকিব।

সাকিব প্রথমেই যা বললেন, তাতে টানা খেলার ক্লান্তির দিকেই ইঙ্গিত, ‘এই অবস্থায় ব্যাটিং করা কঠিন। বিশেষ করে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের জন্য। দুটি টেস্টই পাঁচ দিনে গিয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই এই সমস্যাটা হচ্ছে। আমি যখন দলে ছিলাম না, তখনো এটা হয়েছে। এখনো হচ্ছে। আমরা সম্প্রতি অনেকবারই ব্যর্থ হয়েছি। এই জায়গায় উন্নতির সুযোগ আছে।’

বাজে ফর্ম থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না মুমিনুল

সমস্যাটা যে শারীরিক ফিটনেস সম্পর্কিত নয়, সেটিও পরিষ্কার করেছেন সাকিব। তাঁর কথা, ‘এটা হয়তো মানসিক ব্যাপার। এমন অবস্থাটা সবসময়ই কঠিন। চতুর্থ ইনিংস যে কোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই কঠিন। তখন মাথার ভেতর অনেক কিছুই কাজ করে। ম্যাচের অনেক দিক মাথায় থাকে। ওই চাপটা সামলানো গুরুত্বপূর্ণ। যেটা আমরা করতে পারছি না। এটা আসলে ওই ক্রিকেটারই বলতে পারবে তাঁরা কী অনুভব করছে।’

শারীরিক ফিটনেস নিয়ে বলতে গিয়ে সাকিব রসিকতার ঢঙে উল্টো দাবি করলেন, বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে ফিট দল। কেন, কেন এমন বলছেন? মুখে হাসি ফুটিয়ে সাকিব বললেন, ‘আমরা টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে ফিট দল। কারণ সবচেয়ে বেশি ফিল্ডিং তো আমরা করি। শারীরিকভাবে আমরা ফিট। মানসিক জায়গায় হয়তো পিছিয়ে। এই জায়গায় অনেক বেশি কাজ করার আছে। আপনি দেখুন, সব মিলিয়ে তিন ইনিংসে চার শ-সাড়ে চার শ ওভার ফিল্ডিং করেছে। এরপর লিটন- মুশফিকের একজন ১৪০ করেছে, আরেকজন ১৫০–এর বেশি করেছে। তো শারীরিকভাবে সবাই ফিট। এটা মানসিক সমস্যা।’

মানসিক সমস্যার একটি উদাহরণও দিয়েছেন সাকিব, ‘আমরা হয়তো ব্যর্থতায় ভয়টা বেশি করি। যদি ভুল করি, তাহলে এই খারাপ ফলটা হবে, এটা হয়তো ভাবি। উল্টোভাবে যদি চিন্তা করি, তাহলে অনেক সময় অনেক ভালো কিছুও আসতে পারে।’

দিন শেষে অপরাজিত লিটন ও মুশফিক

শুধু যে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদেরই এই সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। বাংলাদেশ দলের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ধসের কতো স্মৃতিও তো এখনো তরতাজা। ভালো শুরুর পর সেটি কাজে লাগাতে না পেরে উল্টো বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং অর্ডার তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে অনেকবারই।

তাহলে সমস্যার সমাধান কী? এই প্রশ্নের উত্তরে সাকিবের সহজ উত্তর, ‘এসব অবস্থায় আমাদের সবারই কম–বেশি সমস্যা আছে। আমার সবাই যে ব্যর্থ হয়, তা–ও না। ক্ষেত্র বিশেষে সবাই ভুল হয়েছে, আবার সফলও হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যখন সফল হয়েছি, কী ফর্মুলাটা ফলো করেছি সেটা বোঝা, মনে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু আমরা এটা করে অভ্যস্ত না, আমাদের ভুলে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। এটা মনে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।’