আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অশোভন প্রতিবাদ জানান সাকিব।
আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অশোভন প্রতিবাদ জানান সাকিব।

সাকিবের ঘটনাকে ‘নিন্দনীয়’, ‘কলঙ্কময়’ বলছেন সাবেকরা

আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে সাকিব আল হাসানের স্টাম্পে লাথি মারা ও স্টাম্প উপড়ে ফেলার ঘটনায় সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন এটিকে বলছেন নিন্দনীয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক সাকিবের এই কাণ্ডকে দেখছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে কলঙ্কময় ঘটনা হিসেবে।

সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন ঢাকার ক্রিকেটে এমন দৃশ্য কখনো দেখেননি বলে জানিয়েছেন। আবাহনী-মোহামেডানের গতকালের ঘটনাকে তিনি দেখছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের কালো দিন হিসেবে। প্রথম আলোকে মুঠোফোনে তিনি বলছিলেন, ‘ঘটনাটা খুবই নিন্দনীয়। এমন ঘটনা পরপর দুবার ঘটা, ঢাকার ক্রিকেট মনে হয় না কখনো দেখেছি। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। দেখি বোর্ড এখন কীভাবে দেখে বিষয়টিকে। কিন্তু যেভাবে সার্বিকভাবে ক্রিকেট এগোচ্ছে, সেদিক থেকে এটা নিন্দনীয়। এটা সাকিব কেন করল, সেটাও জানার অপেক্ষায় আছি।’

কাল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এভাবেই মেজাজ হারান সাকিব আল হাসান।

আবাহনীর অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের বিপক্ষে এলবিডব্লুর আবেদনে আম্পায়ারের সাড়া না পেয়ে সাকিব স্টাম্পে লাথি মেরে বসেন। পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে সাকিব আরেকটি কাণ্ড ঘটান। বৃষ্টির কারণে আম্পায়ার খেলা বন্ধ করে উইকেট ঢাকার জন্য মাঠকর্মীদের মাঠে আসার নির্দেশ দেন। সাকিব সেটা মেনে নিতে পারেননি। কারণ, তখন যে ওভারটি চলছিল সেটির মাত্র একটি বলই বাকি ছিল। আর বৃষ্টিও তত বেশি হচ্ছিল না। সাকিব আম্পায়ারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে স্টাম্প উপড়ে আছাড় মারেন। এরপর আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কও করেন অনেকক্ষণ ধরে।

সাকিব একই ভুল আবার করায় অবাক হয়েছেন গাজী আশরাফ, ‘পর্দায় যা দেখেছি, সেটা হতে পারে না। পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে পরপর দুটি ঘটনা...এটা আমাকে খুবই ধাক্কা দিয়েছে। একটা ভুল করলে সঙ্গে সঙ্গে উপলব্ধি হয়। কিন্তু পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আরেকটা ভুল। এটার ভেতরে কিছু আছে কি না বোঝা যাবে। তবে যা দেখেছি, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। বাংলাদেশের ক্রিকেটের কালো দিনের মতো।’

মেজাজ হারানোর পর ক্ষমাও চেয়েছেন সাকিব।

গাজী আশরাফ অবশ্য ঘরোয়া ক্রিকেট কীভাবে চলছে, এখানে আম্পায়ারিংয়ের মানই বা কেমন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কী ঘটনা থেকে সাকিব এটা করল সেটাও জানার অপেক্ষায় আছি। আমরাও সার্বিকভাবে দেশের ক্রিকেটের খোঁজখবর রাখি। দেশের ক্রিকেট কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে, আম্পায়ারিং কীভাবে হচ্ছে, কেমন হচ্ছে; সেখান থেকেই সাকিবের এই বিস্ফোরণ কি না সেটা জানতে চাইব।’

সাকিব নিজেই স্টাম্প উপড়ে ফেলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক অধিনায়ক বলছেন এই ঘটনার বৃহৎ প্রভাবের কথা। সাকিবের মতো তারকা ক্রিকেটারের এমন অক্রিকেটীয় আচরণ তিনি মানতেই পারছেন না, ‘এমন চিত্র মাঠে কখনো দেখিনি। খুবই দুঃখজনক, খুবই কলঙ্কময় ঘটনা। আমি খুবই হতাশ হয়েছি সাকিবের এই ঘটনায়। সাকিব তো একজন রোল মডেল। তাকে দেখে তো আগামীর ক্রিকেটারদের শেখার কথা। কী শিখবে বলুন? সে একজন আন্তর্জাতিক তারকা, সে ব্র্যান্ড। তার তো বোঝা উচিত। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

সাকিবের জন্য বড় শাস্তিই অপেক্ষা করছে বলে তাঁর ধারণা, ‘আমি মনে করি কমপক্ষে চার-পাঁচ ম্যাচের জন্য তাকে নিষিদ্ধ করা উচিত। একই সঙ্গে জরিমানা করা উচিত। এখন কোন কোন ধারায় শাস্তি দেওয়া হয়, সেটাই দেখার বিষয়। তবে আমার মনে হয় এমন কিছুই হবে।’