সাকিবের এ ছবি আফসোস জাগায়

আইসিসির ফেসবুক পেজে সাকিবের এ ছবিটি পোস্ট করা হয়। ছবি: আইসিসি
আইসিসির ফেসবুক পেজে সাকিবের এ ছবিটি পোস্ট করা হয়। ছবি: আইসিসি
বিশ্বকাপ অভিযান কালই শেষ হয়েছে বাংলাদেশের। দলের হয়ে অবিশ্বাস্য ধারাবাহিক ছিলেন সাকিব আল হাসান। সেটি সতীর্থদের তুলনায় কতটা?

আইসিসির ফেসবুক পেজে কাল সাকিব আল হাসানের একটি ছবি পোস্ট করা হয়। সে ছবি ও ক্যাপশন দেখলেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের সারাংশটুকু বোঝা যায়। চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে বসে হাসছেন সাকিব। তাঁর আশপাশে কেউ নেই। পেছনে একটু দূরেই টিম ম্যানেজমেন্টের দু-একজন আর বাদবাকি ক্রিকেটাররা। কিন্তু ছবিটির মূল ফোকাস সাকিব। আর ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘২০১৯ বিশ্বকাপে যাঁরা তাঁর চেয়ে ভালো খেলেছেন, সেসব খেলোয়াড়ের সঙ্গে বসে আছেন সাকিব।’ 

ছবিতে সাকিবের সঙ্গে চেয়ারে কেউ বসে নেই। ক্যাপশনটা তাই আফসোসের। এবার ক্রিকেট বিশ্বকাপে সাকিব যেন বাংলাদেশ দলের ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’। বাংলাদেশ যে তিন ম্যাচ জিতেছে কিংবা যতটুকু ভালো খেলেছে, তার বেশির ভাগেই সাকিবের অবদান। একা টেনেছেন দলকে। দলের আর দু-একজন সাকিবের অর্ধেক ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেও বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান সম্ভবত এভাবে শেষ হতো না। কিন্তু তা না ঘটায় ক্যাপশনটা সাকিবভক্তদের যেমন মন ভরিয়ে দেবে, তেমনি একধরনের নির্মম রসিকতাও।

সাকিব আর দলের বাকিদের পারফরম্যান্স রসিকতার ভেতরটা দেখিয়ে দেয়। ৮ ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ ৬০৬ রান। দলের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের সঙ্গে তাঁর প্রায় আড়াই শ রানের ব্যবধান। ৮ ম্যাচে ৩৬৭ রান করেছেন মুশফিক। তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের সঙ্গে সে ব্যবধানটাই সাড়ে তিন শ রানের বেশি। সবার পারফরম্যান্স একরকম হবে না, তা সত্য। কিন্তু রানের এ পার্থক্যটুকুও চোখে লাগার মতো। সাকিবের ফিফটি যেখানে পাঁচটি, সেখানে দলের বাকিদের মধ্যে সর্বোচ্চ ফিফটি দুটি। সেঞ্চুরি, স্ট্রাইকরেট, গড়—এসব প্রসঙ্গ না তোলাই ভালো।

শুধু এতটুকু জানিয়ে রাখলেই চলে, এবার বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে (বাকি ম্যাচটি বৃষ্টিতে পণ্ড হয়েছে) মোট ২২৭৮ রান তুলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ২৬.৬০ শতাংশ রানই সাকিবের একার অবদান। আর তা করতে গিয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে মাত্র তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ছয় শতাধিক রান করেছেন সাকিব। বাকি দুজন শচীন টেন্ডুলকার ও ম্যাথু হেইডেন। তাঁদের সঙ্গে একটি জায়গায় পার্থক্য রয়েছে এ অলরাউন্ডারের। টেন্ডুলকার ও হেইডেন এ কীর্তি গড়েছেন ওপেনার হিসেবে। সাকিব একমাত্র নন-ওপেনার, বিশ্বকাপের এক টুর্নামেন্টে যাঁর ন্যূনতম ছয় শ রান আছে।

আরেকটি জায়গাতেও তাঁর কোনো জুড়ি নেই। সেটি সাকিবের ৮ ম্যাচের স্কোরকার্ড—সব ম্যাচেই ন্যূনতম চল্লিশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেছেন। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা আট ম্যাচে এ কীর্তি গড়েছেন সাকিব। ভারতের ক্রিকেটার রবিন উথাপ্পা এমনি এমনি বলেননি, ‘ভারতে শচীন যা, বাংলাদেশে সাকিব তা–ই।’

ব্যাটিংয়ে সাকিবকে কেউ সেভাবে সঙ্গ দিতে পারেননি। ছবি: প্রথম আলো

মোস্তাফিজুর রহমান ২০ উইকেট নিতে পারেন, কিন্তু বিশ্বকাপে এবার এক ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে সেরা বোলিং ফিগার সাকিবের (৫/২৯)। বোলাররা বাংলাদেশের এ ৮ ম্যাচে যে ৫৯ উইকেট নিয়েছেন, তার মধ্যে ১৮.৬৪ শতাংশ অবদান সাকিবের (১১)। বিশ্বকাপে দেশকে ভালো অবস্থানে রাখতে ব্যাটে-বলে নিজেকে আর কতটা নিংড়ে দেওয়া সম্ভব? কিন্তু তারপরও ১০ দলের বিশ্বকাপে সেমিতে খেলার স্বপ্ন নিয়ে গিয়ে টেবিলের সপ্তম স্থান নিয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা জিতলে সাতেও থাকা যাবে না। নেমে আসতে হবে একধাপ নিচে।

অথচ সাকিব দলকে আরও ওপরে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। সেটি কেন হলো না, তা মোটামুটি সবারই জানা। কাল ম্যাচ শেষে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা নিজেই বলেছেন, ‘সাকিবের জন্য ভীষণ খারাপ লাগছে আমার। আমরা বাকি যারা আছি, তারাও যদি এগিয়ে আসতে পারতাম, তাহলে হয়তো চিত্রটা ভিন্ন রকম হতো।’

হ্যাঁ, তাহলে ছবির চেয়ারে সাকিবের পাশে বাকিদেরও দেখা যেত।