মোস্তাফিজুর রহমান বোল্ড হতেই শেষ, সব শেষ। বার্মিংহামে ভারতীয় সমর্থকদের গর্জনে কান পাতা দায়! এজবাস্টনে তেরঙ্গার সমর্থকদের দাপট থাকবে, সেটি অনুমিতই ছিল। তবে বিপুল ভারতীয় সমর্থকদের প্রায় ‘ঠান্ডা’ই করে দিয়েছিলেন এক সাইফউদ্দিন।
সাইফউদ্দিন যখন নির্বিকার ভঙ্গিতে চালাচ্ছেন, ভারতীয় সমর্থকদের আত্মায় কাঁপনই ধরে গিয়েছিল—ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতে যাবে নাকি! ১, ২, ৩ করে ৯টা চার মারলেন। বাউন্ডারি মারার ভঙ্গিও কী রাজসিক। দুর্দান্ত সব শটে বাউন্ডারি মেরে ফলো থ্রুতে এমনভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন, যেন ভারতীয় বোলারদের ওপর ছড়ি ঘোরাতেই তিনি এসেছেন! সাব্বির রহমানের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে ৬৬ রানের জুটি গড়লেন। দায়িত্ব নিয়ে সিনিয়র সতীর্থ সাব্বিরকে বারবার বোঝালেন মাথা ঠান্ডা রেখে খেলতে। কে শোনে কার কথা! সাব্বির হাঁটু উচ্চতার বল পুল করতে গিয়ে বোল্ড হলেন! পরে পেসার রুবেল হোসেনকে নিয়েও একটা চেষ্টা চালালেন। শেষ উইকেট হিসেবে মোস্তাফিজ বোল্ড হওয়ার পর সাইফউদ্দিনের সব চেষ্টাই বৃথা।
ভারতীয় ক্রিকেটাররা জয়ের আনন্দে যখন ড্রেসিংরুমে ফিরছেন, সাইফউদ্দিন হতবাক, বাক্রুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন উইকেটে। তাঁর পা যেন চলছে না। চোখ ফেটে নেমে আসতে চাইছে জলধারা। এতটা লড়াইয়ের পর যদি সইতে হয় পরাজয়ের যন্ত্রণা, ছিটকে পড়তে হয় টুর্নামেন্ট থেকে—তাহলে লড়াইটা চালিয়ে কী লাভ হলো? সাইফউদ্দিন অনুচ্চারে যেন সতীর্থদের বলতে চাইলেন, ‘তোমরা কেউ একজন শুধু অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকতে, বাকিটা আমি দেখতাম।’
হতাশ, বিষণ্ন, পরাজয়ের বেদনায় নীল সাইফউদ্দিন তাই নির্বাক হয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলেন হারের পর। ম্যাচের পর দলা পাকিয়ে ওঠা কষ্ট সামলে বললেন, ‘লক্ষ্য ছিল ম্যাচটা জেতাব। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো ব্যাপারটা! স্বাভাবিকভাবেই খারাপ লাগার কথা। টুর্নামেন্ট থেকে আমরা ছিটকে পড়েছি। আজ (কাল) পর্যন্তও আমরা আশায় ছিলাম, জিতলে আমাদের সেমিফাইনালের স্বপ্নটা টিকে থাকবে। আমার জায়গায় অন্য খেলোয়াড় থাকলে তারও একই অনুভূতি হতো।’
এজবাস্টনের মিক্সড জোনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলার সময় সাইফউদ্দিনের গলা কেঁপে উঠল। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে এসে খারাপ করেননি। বোলিংয়ে নিয়মিত উইকেট পেয়েছেন। কাল তো ‘লাইফ টাইম’ এক ইনিংসই খেলার পথে ছিলেন। দল সেমিফাইনালে যেতে পারছে না, সাইফউদ্দিনের কাছে ব্যক্তিগত এ পারফরম্যান্সের কোনো মূল্যই নেই, ‘নিজের পারফরম্যান্সের চেয়ে দলের সাফল্য আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। যদি উইকেট না পেতাম, রান না করতাম তবুও ভালো লাগত যদি দল সেমিফাইনালে যেত। দল সেমিফাইনালে গেলে ভীষণ স্মরণীয় হয়ে থাকত টুর্নামেন্টটা। সেটা না হওয়ায় ভীষণ হতাশা কাজ করেছে।’
বড় কোনো সাফল্য না আসা পর্যন্ত এ হতাশা সাইফউদ্দিনকে তাড়িয়ে ফিরবে হয়তো আরও অনেক দিন।