২০০১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। কলম্বোর এসএসসি গ্রাউন্ডে প্রথমবারের মতো টেস্ট ক্রিকেটে মুখোমুখি হলো বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ ছিল সেটি। তিন দিনের মধ্যে হেরে গেলেও ক্রিকেট বিশ্বকে মোহাম্মদ আশরাফুল নামের এক বিস্ময় উপহার দিয়েছিল বাংলাদেশ।
টেস্টের তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে বসেন প্রথম টেস্ট খেলতে নামা আশরাফুল। সেদিন আশরাফুলের বয়স ছিল ১৭ বছর ৬৩ দিন। সবচেয়ে কম বয়সে টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড হিসেবে এখনো টিকে আছে আশরাফুলের সেই কীর্তি। আশরাফুল ভেঙেছিলেন পাকিস্তানের মুশতাক মোহাম্মদের রেকর্ড (১৭ বছর ৮২ দিন)। ১৯৬১ সালে দিল্লি টেস্টে ভারতের বিপক্ষে অভিষেকে ১০১ রান করেছিলেন মোহাম্মদ ভাইদের চতুর্থজন।
কলম্বোর সেই ম্যাচের পরে টেস্টে আরও ২১ বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ২২ টেস্টের দ্বৈরথ আরও অবিশ্বাস্য কিছু রেকর্ড-পরিসংখ্যান উপহার দিয়েছে।
আশরাফুলের রেকর্ডভাঙা সেই সেঞ্চুরির আগেই কলম্বো টেস্টটা শুধু হতাশাই উপহার দিয়েছে বাংলাদেশকে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশকে ৯০ রানে অলআউট করার পর নিজেদের একমাত্র ইনিংসে ৫ উইকেটে ৫৫৫ রান তুলে ইনিংসে ঘোষণা শ্রীলঙ্কা। ৫ উইকেটের দুটি অবশ্য বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছিল লঙ্কানরা। রিটায়ার্ড আউট নামের শব্দযুগল সেই ম্যাচেই প্রথম দেখেছিল টেস্ট ক্রিকেট। লঙ্কান ওপেনার মারভান আতাপাত্তু ২০১ রান করার পর ও চারে নামা মাহেলা জয়াবর্ধনে ঠিক ১৫০ রান করে স্বেচ্ছায় মাঠ ছাড়েন। টেস্ট ইতিহাসে শুধু আতাপাত্তু ও জয়াবর্ধনেই রিটায়ার্ড আউট হয়েছেন। ২০১৯ সালে মালদ্বীপের বিপক্ষে এক টি-টোয়েন্টিতে ভুটানের সোনম টোবগে রিটায়ার্ড আউট হওয়ার আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ‘অনন্য’ হয়ে ছিলেন দুই লঙ্কান।
২০০২ সালে কলম্বোর পি সারায় প্রথম ইনিংসে ৫৪১ রানে ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। এই রানের ৫০৯-ই লঙ্কানরা করেছিল ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে! টেস্টে এক দিনে কোনো একটি দলের সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড হিসেবে এখনো টিকে আছে তা। শ্রীলঙ্কা ভাঙে ১৯২৪ সালে গড়া ইংল্যান্ডের রেকর্ড। লর্ডসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ৫০৩ রান তুলেছিল ইংলিশরা।
টেস্ট ক্রিকেটে এ পর্যন্ত ২০ জন বোলার ক্যারিয়ারের প্রথম বলে উইকেট নিয়েছেন। বাংলাদেশ এ ঘটনার সাক্ষী হয়েছে মাত্র একবারই। ২০০২ সালে কলম্বোয় টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই বাংলাদেশের মোহাম্মদ আশরাফুলকে আউট করেছিলেন শ্রীলঙ্কার চামিলা গামাগে। পরে ২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় শ্রীলঙ্কান হিসেবে প্রথম বলে উইকেট নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করেন শামিন্ডা এরাঙ্গা।
২০১৩ সালে গল টেস্টে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা দুই দল মিলে সেঞ্চুরি করেছিল আটটি। টেস্টে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির যৌথ রেকর্ড এটি। ২০০৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচেও সেঞ্চুরি হয় আটটি।
টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি ও প্রথম জোড়া সেঞ্চুরি, দুটি কীর্তিই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ২০১৩ সালে গল টেস্ট বাংলাদেশকে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি উপহার দেন মুশফিকুর রহিম। টেস্টে পরে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আরও চারটি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। তবে ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে করা মুমিনুল হকের জোড়া সেঞ্চুরি অবশ্য একমাত্রই হয়ে আছে বাংলাদেশের জন্য।
২০১৪ সালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩১৯ রান করেন কুমার সাঙ্গাকারা। বাংলাদেশের বিপক্ষে ও বাংলাদেশের মাটিতে টেস্টে একমাত্র ট্রিপল সেঞ্চুরি হয়ে আছে সেটি। বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডটিও সাঙ্গার।
২০০৪ সালে নিজেদের শততম ওয়ানডেতে ভারতকে হারায় বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ নিজেদের শততম টেস্টেও জেতে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে। শততম টেস্টে জয় পাওয়া চতুর্থ দল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আগে নিজেদের শততম টেস্টে জয় পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান। বাংলাদেশের মতো এই তিনটি দলও নিজেদের শততম ওয়ানডেতেও জয় পেয়েছিল। তবে অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান আগে জিতেছিল শততম টেস্ট, পরে শততম ওয়ানডে।