যেকোনো জয়ই বিশেষ কিছু, টেস্ট জয় তো আরও বিশেষ। আর তা যদি হয় টেস্টের চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ওদেরই মাটিতে, সেটা হয়ে যায় ‘ভেরি ভেরি স্পেশাল’। নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন সব দলের জন্যই কঠিন। ওদের মাটিতে ওরা অনেক ভালো দল। আমার কাছে একটা টেস্ট জেতার মাহাত্ম্যই অনেক, এটা তো আরও বেশি কিছু।
আমরা সাকিব-তামিমের মতো দুজন গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার ছাড়াই নিউজিল্যান্ডে গেছি। মাহমুদউল্লাহও টেস্ট খেলা ছেড়ে দিয়েছে। সে অর্থে দলে অভিজ্ঞতা আছে মুশফিক, মুমিনুল আর লিটনেরই। বাকিরা অনভিজ্ঞ। এর আগে অভিজ্ঞ সবাইকে নিয়েও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে হেরেছি। ভালো খেলেও জিততে পারিনি। এবার প্রত্যাশাটা ছিল ভালো ক্রিকেট খেলার। আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার। পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজটা বেশ হতাশার ছিল। পাকিস্তান ভালো দল হলেও ঘরের মাঠে তো আমরা ভালো খেলি। বিশ্বকাপের পরপর ওই সিরিজের ব্যর্থতা কষ্ট দিয়েছিল।
নিউজিল্যান্ড সিরিজে তাই আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়াটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। জয়টা ভাবনায় তেমন ছিল না। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের উন্নতি, নতুন ছেলেদের একটু থিতু হতে দেওয়া—এ সবই চাওয়া এই সফরে। যা যা চেয়েছি, প্রথম টেস্টে তার প্রায় সবই পেয়ে গেছি। টপ অর্ডারের ব্যাটিং ঠিক করার ব্যাপার ছিল, পেস বোলিংয়ে উন্নতি দরকার ছিল। সব চাহিদাই যেন পূরণ হয়ে গেছে এক টেস্টে।
আবু জায়েদের বদলে ইবাদতকে খেলানো নিয়ে শুরুতে প্রশ্ন উঠে থাকতে পারে। আবু জায়েদ অবশ্যই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, ও সুইং করাতে পারে। তবে নিউজিল্যান্ডে সাফল্য পেতে আমাদের গতি দরকার, যেটা তাসকিন ও ইবাদতের আছে। আমরা এর আগে সেখানে সুইং বোলার, মিডিয়াম পেসার খেলিয়েছি—তবে গতির ঝড়টা ছিল না। টেস্টে ভালো করতে ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বল করার মতো বোলার লাগে। দুই দিকেই সুইং করাতে পারলে গতিতে একটু ছাড় দেওয়া যায়। সেটার জন্যই ইবাদতকে নেওয়া।
শরীফুলের বলে আরও বেশি গতি দেখেছি, সে সুইং করাতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও পরিণত হবে। এ ধরনের বোলিং দেখতে পারাটাও দারুণ। দেশে যখন আমরা উপমহাদেশের বাইরের দলগুলোর সঙ্গে খেলি, তখন স্বাভাবিকভাবেই একটু স্পিন-সহায়ক উইকেটে খেলতে হয়। তবে বাইরে তো পেসারদের ওপরই ভরসা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে খুবই এমন দ্রুতগতির তিনজন পেসার পাওয়া খুবই আশাব্যঞ্জক। এ টেস্টের বড় একটা পাওয়া বলতে পারেন এটাকে।
পেসারদের মতো টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানরাও টেস্টে গুরুত্বপূর্ণ। টপ অর্ডার ভালো করলে সাধারণত মিডল অর্ডারও ভালো করে, তবে ওপরের দিকে ব্যর্থ হলে মিডল অর্ডারে ভালো করাটা কঠিন হয়ে যায়। টপ অর্ডার আমাদের দুশ্চিন্তার কারণ থাকলেও এ টেস্টে ওরা ভালো করেছে। সবাই অবদান রেখেছে। সাদমান রান না করলেও নতুন বলের সময়টা কাটিয়ে দিয়েছে। নতুন বলে উইকেট পড়ে গেলে আমরা ব্যাকফুটে চলে যাই। সাত-আটজন ব্যাটসম্যান খেলানোর পরও যদি টপ অর্ডার রান না পায়, বড় স্কোর হবে না। আমরা যে দুই বিভাগ নিয়ে বেশি কাজ করছি, সেখানে এমন সাফল্য দেখে ভালো লাগছে। এখন ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।
সাকিবের মতো বোলিং অলরাউন্ডার দলে না থাকলে পাঁচজন বোলার নিয়ে খেলাটা মুশকিল, তবে চার বোলার নিয়েও টেস্ট জেতা সম্ভব। মিরাজ দারুণ কাজ করছে। অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করছে সে। ভবিষ্যতে এটা ধরে রাখতে পারলে আমরা বোলার একজন বেশি খেলাতে পারি। ও নিজেকে সেভাবেই তৈরি করছে।
আমরা যখন অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিলাম, আমাদের ক্রিকেটে সেটার বড় প্রভাব পড়েছিল। আমরা ওয়ানডেতে ভালো দল। তবে টেস্ট ব্যাপারটাই ভিন্ন। টেস্ট জয় আপনাকে অনেকটা এগিয়ে দেবে, আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। উপমহাদেশের দল সাধারণত নিউজিল্যান্ডে জেতে না, সে দিক থেকেও বেশ বড় একটা সাফল্য গতকালের জয়।