বাংলাদেশ টি–টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ।
বাংলাদেশ টি–টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ।

সবাইকে ‘বোকা’ বানিয়ে অবসরে মাহমুদউল্লাহ

সবাইকে আরও একবার বোকা বানালেন মাহমুদউল্লাহ। এমনকি হারারেতে যাদের সঙ্গে আছেন, সেই টিম ম্যানেজমেন্টকেও!

টিম ম্যানেজমেন্টের একাধিক সদস্য কাল রাতেও এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন, মাহমুদউল্লাহর অবসরের আলোচনার আপাতত এখানেই ইতি। অন্তত এই জিম্বাবুয়ে সফরে এ নিয়ে আর কিছু হচ্ছে না। যা হওয়ার ঢাকায় গিয়ে হবে। অথচ আজ টেস্টের শেষ দিন সকালে হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে নামার সময় মাহমুদউল্লাহ পেলেন সতীর্থদের গার্ড অব অনার। টেস্ট ক্রিকেটে আজই হতে যাচ্ছে তাঁর শেষ দিন। ৫০তম টেস্ট খেলেই মাহমুদউল্লাহ বিদায় জানাতে যাচ্ছেন টেস্ট ক্রিকেটকে।

মাঠে থাকা সবার জন্যই বড় চমক হয়ে এসেছে দৃশ্যটা। দল মাঠে নামার আগে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা মাঠের পাশে সারি বেঁধে মুখোমুখি দাঁড়ালেন। তাঁদের করতালির মধ্য দিয়ে হেঁটে মাঠে ঢুকলেন মাহমুদউল্লাহ। এরপর তাঁর পিছু পিছু অন্যরা।

এর আগে টেস্টের তৃতীয় দিনে দলের বা বোর্ডের কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই ড্রেসিংরুমে সতীর্থ খেলোয়াড়, কোচ ও দলের সঙ্গে থাকা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে মাহমুদউল্লাহ জানিয়ে দেন, চলতি হারারে টেস্টের পর আর সাদা পোশাকের ক্রিকেট খেলবেন না তিনি। টেস্টে নিজের আরও একবার নিজের সামর্থ্য দেখানোর ছিল তাঁর। সেঞ্চুরি করে সেটি দেখিয়ে দিয়েছেন। কাজেই এবার বিদায়ের পালা। এ বিষয়ে দলের কেউ পরে মুখ না খুললেও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান প্রথম আলোকে সে রাতেই বলেছিলেন, ঢাকা থেকে তিনিও এ রকম একটা কিছু শুনেছেন।

মনে রাখার মতো এক ইনিংস খেলেই অবসর নিলেন মাহমুদউল্লাহ।

মাহমুদউল্লাহর এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভও প্রকাশ করেছিলেন নাজমুল হাসান। জিম্বাবুয়ে আসার আগে অন্য ক্রিকেটারদের মতো মাহমুদউল্লাহও নাকি বোর্ডকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। জাতীয় দলের টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক নাকি সেখানে লিখেছেন, ভবিষ্যতে তিনি তিন সংস্করণের ক্রিকেটই খেলতে চান। সে জন্যই তাঁকে জিম্বাবুয়ের টেস্ট দলে নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া একটা টেস্টের মাঝখানে অবসরের কথা বলে মাহমুদউল্লাহ ঠিক করেননি বলেও মন্তব্য করেন বিসিবি সভাপতি।

এরপর গতকাল বেশ কয়েকবারই মাহমুদউল্লাহর সিদ্ধান্তের ব্যাপার দলের ভেতর খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। খেলোয়াড়েরা এ নিয়ে কোনো কথা বলতে না চাইলেও দলের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, বিষয়টি নিয়ে আর কোনো আলোচনা নেই। মাহমুদউল্লাহও কিছু বলছেন না, দল থেকেও তাঁকে আর এ নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করা হচ্ছে না। অবসরের গুঞ্জন নিয়ে মাহমুদউল্লাহ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন না, জানানো হয়েছিল তেমনটাও। এ নিয়ে যদি তাঁর কোনো কিছু বলার থাকে, সেটা নাকি ঢাকা গিয়ে বোর্ডের সঙ্গেই বলবেন। কাজেই অন্তত হারারেতে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানাচ্ছেন না মাহমুদউল্লাহ, জানিয়েছিল দলের একাধিক সূত্র।

সবাইকে ‘বোকা’ বানালেন মাহমুদউল্লাহ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি ওকে (মাহমুদউল্লাহ) জিজ্ঞেস করেছি এ নিয়ে, বুঝিয়েছি। এত ভালো একটা ইনিংস খেলার পর এ রকম সিদ্ধান্ত সে কেন নিল? তার রাগটা কার ওপর? কোনো এক–দুইজনের আচরণে অসন্তুষ্ট হয়ে তো সে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ওপর রাগ দেখাতে পারে না! আশা করি, এ নিয়ে অন্তত এই সিরিজের মধ্যে আর কিছু হবে না।’

কিন্তু সবাইকে ভুল প্রমাণ করে মাহমুদউল্লাহ নিজের সিদ্ধান্তেই অটল থাকলেন। তবে জানা গেছে, টিম ম্যানেজমেন্ট সদস্যরা না জানলেও মাহমুদউল্লাহর সতীর্থদের অনেকেই জানতেন, তিনি তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকছেন। আজ তাঁরাই তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়ার আয়োজন করে। এর সঙ্গে টিম ম্যানেজমেন্ট বা বোর্ডের কোনো সম্পর্ক ছিল না।

৫০ টেস্টের ক্যারিয়ারে (চলতি হারারে টেস্টসহ) ৩৩.৪৯ গড়ে মাহমুদউল্লাহ রান করেছেন ২৯১৪। সেঞ্চুরি ৫টি ও ফিফটি ১৬টি। বল হাতে নিয়েছেন ৪৩ উইকেট।

হারারে টেস্টের আগে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে রাওয়ালপিন্ডিতে সর্বশেষ টেস্ট খেলেন মাহমুদউল্লাহ। জাতীয় দলের কোচ রাসেল ডমিঙ্গো এরপরই তাঁকে জানিয়ে দেন, মাহমুদউল্লাহ যেন টেস্ট খেলার চিন্তা বাদ দিয়ে শুধু সাদা বলের ক্রিকেটেই মনোযোগ দেন। এরপর বাংলাদেশ দলের টানা পাঁচটি টেস্টে মাহমুদউল্লাহ ছিলেন না। প্রথমে ছিলেন না জিম্বাবুয়ে সিরিজের দলেও। তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের চোটের কারণে পরে তাঁকে দলভুক্ত করা হয়।

ব্যাট হাতে বঞ্চনার জবাবটা ভালোভাবেই দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। হারার টেস্টের প্রথম ইনিংসে দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে বাঁধ দিয়ে খেলেছেন ক্যারিয়ারসেরা অপরাজিত ১৫০ রানের ইনিংস। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে সাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেনের সেঞ্চুরি আজ শেষ দিনে জয়ের স্বপ্নই দেখাচ্ছে বাংলাদেশকে।

কিন্তু মুমিনুল হকের দলের জন্য জয়টা এখন আরও বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে। মাহমুদউল্লাহকে বিদায়ী উপহার যে দিতে হবে!