ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসেই বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন তাইজুল ইসলাম। এবার তাঁর সামনে সব দলের বোলার মিলিয়েই এ বছরের সেরা হওয়ার হাতছানি
‘আনসাং হিরো’ তিনি বেশ আগে থেকেই। পাদপ্রদীপের আড়ালেই থেকে যান সব সময়। তবে তাইজুল ইসলাম যেন এবার সব আলো কেড়ে নেবেন বলেই পণ করেছেন! শুধু বাংলাদেশ সতীর্থদের ম্লান করছেন বলে নয়, তাইজুল হয়ে যেতে পারেন এ বছরের সেরা টেস্ট বোলার! সেটি বিশ্বের সবাইকে ছাড়িয়েই!
চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে এ বছর মাত্র ৬ টেস্টে তাইজুলের উইকেটসংখ্যা হয়ে গেল ৪০। তাতেই বছরের সেরা চার টেস্ট বোলারের একজন হয়ে গেলেন। অবশ্য লড়াইটা হচ্ছে তীব্র। সেই লড়াইয়ে তাইজুল কি বছরের সেরা হতে পারবেন? হলে তা হবে বাংলাদেশের কোনো বোলারের টেস্টে এক বর্ষপঞ্জিতে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার প্রথম কীর্তি। এর আগে ২০০৬ সালে ওয়ানডেতে ৪৯ উইকেট নিয়ে সারা বিশ্বের মধ্যেই বছরের সেরা বোলার হয়েছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।
এ বছর টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেট
বোলার | ইনিংস | উইকেট | সেরা বোলিং |
কাগিসো রাবাদা | ১৮ | ৪৬ | ৬/৫৪ |
জেমস অ্যান্ডারসন | ২২ | ৪৩ | ৫/২০ |
দিলরুয়ান পেরেরা | ১৭ | ৪১ | ৬/২০ |
তাইজুল ইসলাম | ১১ | ৪০ | ৬/৩৩ |
মোহাম্মদ আব্বাস | ১১ | ৩৮ | ৫/৩৩ |
তাইজুলের লড়াইটা চলছে কাগিসো রাবাদা (৪৬ উইকেট), জেমস অ্যান্ডারসন (৪৩) ও দিলরুয়ান পেরেরার (৪১) সঙ্গে। ব্যবধানটা খুব বেশি নয়। এর মধ্যে অ্যান্ডারসনের উইকেট সংখ্যা আর বাড়ছে না, এ বছর আর তাঁর ম্যাচ নেই। রাবাদা একটি টেস্ট খেলার সুযোগ পাবেন। পেরেরা পেতে পারেন আরও দুই টেস্ট খেলার সুযোগ। সেখানে তাইজুল পাবেন এক টেস্ট। ফলে বছরের সেরা হওয়া তাইজুলের জন্য কঠিন, আবার যে ফর্মে আছেন, ভালো সম্ভাবনাও আছে তাঁর সামনে। তাইজুল অবশ্য একটা দুঃখ করতেই পারেন। এ বছর তাঁর ৪০ উইকেট এসেছে ৬ টেস্টে, যেখানে অ্যান্ডারসনের ৪৩ উইকেট এসেছে ১২ ম্যাচে। তাইজুল এ বছর যেখানে ৭ টেস্ট খেলবেন, সেখানে পেরেরা খেলবেন ১১ টেস্ট, রাবাদা ১০টি। ফলে তাইজুলদের জন্য লড়াইটা অসম।
বাংলাদেশের কোনো বোলারের তাই বছরের সর্বোচ্চ টেস্ট উইকেটশিকারি হয়ে যাওয়া যতটা দেখায়, তার চেয়ে বড় অর্জন। একটা রেকর্ড অবশ্য হয়েই গেল তাইজুলের। ১৫ বছর ধরে যে রেকর্ডটা ছিল মোহাম্মদ রফিকের দখলে। টেস্টে রফিকের সেরা সময় কেটেছে ২০০৩ সালে। সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশনের অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু সেই বছরের মে মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৭ রানে ৬ উইকেট নিয়ে দারুণ প্রত্যাবর্তন ঘটিয়েছিলেন এই বাঁহাতি স্পিনার। তখন পর্যন্ত মাত্র ১৯ টেস্ট খেলা বাংলাদেশের দলের হয়ে সেটাই ছিল এক ইনিংসে সেরা বোলিং ফিগার।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে টেস্টে এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ডটি এত দিন রফিকের দখলে ছিল। সেটি ওই ২০০৩ সালেই, ৬ ম্যাচে ৩৩ উইকেট। ‘ছিল’ কেন বলা হলো—সেটি তো বোঝাই যাচ্ছে। রফিকের কাছ থেকে রেকর্ডটি এই টেস্টে নিজের করে নিয়েছেন তাইজুল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই রেকর্ডটি ছুঁয়েছিলেন। সেটি এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ভেঙে দিয়েছেন।
বাংলাদেশের পক্ষে এক বছরে সবচেয়ে বেশি উইকেট
খেলোয়াড় | ম্যাচ | উইকেটসংখ্যা | বছর |
তাইজুল ইসলাম | ৬ | ৪০ | ২০১৮ |
মোহাম্মদ রফিক | ৬ | ৩৩ | ২০০৩ |