ক্রিকেটারদের আন্দোলনে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান। ষড়যন্ত্রকারী কে বা কারা, সেটি না
বললেও তিনি জানিয়েছেন, এই রহস্য সহসাই খোলাসা হবে।
নাজমুল হাসানের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কাল বিসিবির সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীও বলেছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটের বিরুদ্ধে কারা ষড়যন্ত্র করছে, ক্রিকেটের স্বার্থে যত দ্রুত সম্ভব তাদের সামনে আনা উচিত। মুঠোফোনে প্রথম আলোকে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘অভিযোগ খুবই গুরুতর। এটাকে হালকাভাবে নেওয়ার উপায় নেই। ষড়যন্ত্র যদি সত্যিই হয়ে থাকে, ওনার (বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান) উচিত দ্রুত তা প্রকাশ করা এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। খেলোয়াড়েরা যদি দেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে থাকেন, প্রয়োজনে তাঁদের শাস্তি দিতে হবে। সভাপতিই বলছেন, এই ষড়যন্ত্রে ক্রিকেটাররাও জড়িত। এ রকম একটা অভিযোগ তুলে দিয়ে বসে থাকলে হবে না।’
বিসিবির সাবেক এই সভাপতির অবশ্য বিশ্বাস, যাঁরা মাঠের পারফরম্যান্স দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বর্তমান অবস্থানে নিয়ে এসেছেন, তাঁরা দেশের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারেন না, ‘আমার মনে হয় না, এটা কেউ বিশ্বাস করবে। উনি যা বললেন এবং বলার যে ভঙ্গি, এ রকম না হলেই ভালো হতো।’
ক্রিকেটের চলমান সংকটে ক্রিকেটাররা এবং বিসিবি-দুই পক্ষই তাদের ‘ইনিংস’ শুরু করেছে সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে। ২১ অক্টোবর প্রথমে ক্রিকেটাররা ১১ দফা দাবি উত্থাপন করে ঘোষণা দেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা সব ধরনের ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকবেন। পরদিন বিসিবি সভাপতি পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন এবং সেখানে খেলোয়াড়দের উদ্দেশে ব্যক্তিগত আক্রমণও করেন। পুরো ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে সাবের হোসেন চৌধুরী মনে করেন, ‘ইনিংস’-এর শুরুটা ভালো হয়নি কারোরই, ‘খেলোয়াড়েরা সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলার প্রক্রিয়াতে না গিয়ে বোর্ডকে চিঠি দিতে পারত। যদিও বলা হচ্ছে, তারা বোর্ডকে এসব দাবির কথা অনেকবার বলেছে, বোর্ড শোনেনি। তারপরও ওরা এই কাজটা করলে সবকিছু অন্য রকম হতে পারত। আবার অভিভাবক হিসেবে ক্রিকেট বোর্ড যে আচরণটা করল, সেটিও প্রত্যাশিত নয়।’
দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা হিসেবে পুরো বিষয়টিতে বিসিবির আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক বোর্ড সভাপতি, ‘খেলোয়াড়দের আচরণ আমরা যেভাবে দেখব, ক্রিকেট বোর্ডের কাছে প্রত্যাশা আরও বেশি থাকবে। ওই জায়গায় ভুলটা বোর্ডও করেছে। সংবাদ সম্মেলনে যেভাবে কথাবার্তা বলা হলো, আমার মনে হয় না একজন বোর্ড সভাপতির সেভাবে বলা উচিত। ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই অনেককে সহায়তা করেন। সেটা যদি আপনি প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন, তাহলে তো তা ঠিক হলো না।’
সংবাদ সম্মেলন ডেকে ক্রিকেটারদের বিপক্ষে অবস্থান না নিয়ে বোর্ডের উচিত ছিল প্রথমেই তাঁদের আলোচনায় ডাকা, বলেছেন সাবের হোসেন চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলন ডেকে সমস্যাটাকে আরও জটিল করে ফেলা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি, ‘বোর্ডের উচিত ছিল সমাধানের দিকে যাওয়া। আন্তর্জাতিকভাবে যে এখন বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে একটা উত্তেজনা, এটাতে আমাদের ক্রিকেট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এভাবে পক্ষে-বিপক্ষে না গিয়ে খেলোয়াড়দের ডেকে ওনারা কথা বলতে পারতেন। সবার সঙ্গে নাকি সভাপতির খুব ভালো সম্পর্ক। এই সম্পর্ক কাজে লাগানো উচিত ছিল।’
বিসিবি ক্রিকেটারদের দাবিগুলো যৌক্তিক বলে মেনে নেওয়ার পরও সভাপতির কড়া প্রতিক্রিয়ার একটিই কারণ দেখেন সাবের হোসেন চৌধুরী, ‘তিনিও (নাজমুল হাসান) বলেছেন, তাঁর কাছে গেলে তিনি দাবিগুলো মেনে নিতেন। তো খেলোয়াড়েরা শুধু তাঁর কাছে যাননি বলে বিষয়টাকে এত বড় করার দরকার ছিল না।’
বিসিবির প্রতি ক্রিকেটারদের যে আস্থার সংকট এই ঘটনায় প্রকাশ পেল, বিসিবি ক্রিকেটারদের সব দাবি মেনে নিলেও সেটি সহজে কাটবে বলে মনে হয় না তাঁর, ‘দাবিদাওয়া মেনে আপনি হয়তো আপাতত দেয়ালের বাইরের ফাটলটাকে ঢেকে রাখবেন; কিন্তু ভেতরের ফাটল তো ঠিকই থেকে যাবে। এটা সারাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আস্থা একবার নষ্ট হয়ে গেলে সেটা ফিরে পাওয়া কঠিন হয়।’