প্রথমবার শ্বশুরবাড়িতে এসেছেন। মঈন আলীর তো এখন জামাই-আদরে থাকার কথা। কিন্তু ইংলিশ অলরাউন্ডারের মন্দ কপাল। শ্বশুরবাড়িতে ঘোরাফেরা বাদ দিয়ে তাঁকে ব্যস্ত থাকতে হবে ক্রিকেট নিয়ে। সিলেটে তো এসেছেন আসলে বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে খেলতে।
মঈনের স্ত্রী ফিরোজা হোসেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। জন্ম-বেড়ে ওঠা দুটিই ইংল্যান্ডে হলেও তাঁর বাবার বাড়ি সিলেটে। ফিরোজার মা–বাবা একসময় থাকতেন সিলেট শহরের পীর মহল্লা এলাকায়। পরে ইংল্যান্ডে গিয়ে থিতু হয়েছেন। ফিরোজার জন্ম সেখানে, মঈনের সঙ্গে পরিচয়-পরিণয়ও।
বিয়ের আগে ও পরেও ফিরোজা বাংলাদেশে এসেছেন। তবে মঈনের কখনো সিলেটে আসা হয়নি আগে। অবশেষে এবার প্রথম শ্বশুরবাড়ি এলেন কিন্তু সেটাও ক্রিকেটের টানেই। তবে এই সুযোগে শ্বশুরবাড়িতে কিছুটা বেড়ানোর ইচ্ছাও আছে ইংলিশ অলরাউন্ডারের।
এখানকার হোটেলের লোকজন আমার সঙ্গে সিলেটি ভাষায় কথা বলে। আমিও চেষ্টা করছি শিখতেমঈন আলী, ইংলিশ অলরাউন্ডার
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে অনুশীলনের ফাঁকেই মঈন সাংবাদিকদের বলছিলেন, ‘আমার স্ত্রী এখানকার (বাংলাদেশি)। তার বোন এখানেই থাকে, তবে ওর শ্বশুরবাড়ি ঢাকায়। দু-এক দিনের মধ্যেই তারা সিলেটে আসছে। আমার শ্বশুরবাড়ি এখানে। সিলেটে প্রথমবার এলাম। আমার পরিবার সব সময়ই বলে, “চলো, সিলেট বেড়িয়ে আসি।” কিন্তু আমি সময় বের করতে পারিনি। এবার এসে ভালো লাগছে।’
সিলেটি পরিবারে বিয়ে যেহেতু করেছেন, সিলেটি ভাষাও নিশ্চয়ই শুনতে হয় মাঝেমধ্যে। তবে এবার সিলেটে এসে সেই ভাষা শুনছেন অনেক বেশি। তাতে তাঁর নিজেরও আরেকটু ভালো করে সিলেটি শেখার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। শ্বশুরবাড়ির লোকদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে তাতে আরেকটু সুবিধা হবে বৈকি!
মঈনই জানালেন, ‘আমি কিছু সিলেটি শব্দ বলতে পারি। আরও কিছু পারলে খুশি হতাম। আশা করছি, এবার নতুন কিছু শব্দ শিখতে পারব। এখানকার হোটেলের লোকজন আমার সঙ্গে সিলেটি ভাষায় কথা বলে। আমিও চেষ্টা করছি শিখতে।’
শুধু পারিবারিক সম্পর্কের কারণে নয়, মঈনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কটা অবশ্য অনেক পুরোনো। ২০০৫ সালে ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশে খেলতে। এরপর ২০১০ সালে মোহামেডান ক্লাবে সাকিব-তামিমদের সতীর্থ হিসেবে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন। ২০১৩ সালে বিপিএলে খেলেছেন দুরন্ত রাজশাহীর হয়ে। ইংল্যান্ডের হয়ে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফর করেছেন ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী এই অলরাউন্ডার।
বাংলাদেশে এতবার আসা-যাওয়ার অভিজ্ঞতা থেকেই এ দেশের মানুষ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন মঈন। ৩৪ বছর বয়সী পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই ক্রিকেটারের কাছে তাই এ দেশ হয়ে উঠেছে বেশ আপন, ‘আমার কাছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইংল্যান্ড ঘরের মতোই। প্রতিটি জায়গা আমি এক করেই দেখি।’
বাংলাদেশে খেলার অভিজ্ঞতা যে ক্রিকেটার হিসেবে তাঁকে বাড়তে সাহায্য করেছে, বললেন সে কথাও, ‘তামিম, সাকিবের সঙ্গে খেলেছি। ওদের আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি। ঢাকায় অনেক ম্যাচ খেলা হয়েছে। দর্শকও দারুণ ছিল। এখানে খেলার অভিজ্ঞতাগুলো আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাজে লাগাতে পেরেছি।’