পাল্লেকেলেতে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ খারাপ খেলছে না মোটেও। যে উইকেটে স্বাগতিক দল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ১৯৪ রান তুলেছে, যে উইকেটে স্পিনারদের বল মাঝেমধ্যেই ফণা তুলছে, সে উইকেটে ৪৩৭ রানের লক্ষ্যে নামা বাংলাদেশ ‘মাত্র’ ৫ উইকেট হারিয়েই তুলেছে ১৭৭ রান। ‘মোরাল ভিক্টরি’ বলে যদি কিছু থেকে থাকে, সেটা তো পেয়েই গেছে বাংলাদেশ।
‘মোরাল ভিক্টরি’র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভাষ্য হলো, ‘মন জিতে নেওয়া’। সেদিক থেকে বাংলাদেশ তাহলে মন জিতে নিয়েছে আজ। এখনো জয়ের জন্য ২৬০ রান দরকার ঠিকই; সে রান পঞ্চম দিনে বাংলাদেশ তুলে নিতে পারবে, এমন আশা করার লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ঠিকই, তবু চতুর্থ দিন থেকেও চাইলে ইতিবাচক কিছু খুঁজে নেওয়া যায়।
প্রথম টেস্টের ব্যাটিং–বান্ধব উইকেট পেয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বেশ দাপট দেখিয়েছেন। খুঁজে পেয়েছিলেন অনেক আত্মবিশ্বাস। সে আত্মবিশ্বাস টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের জন্য নতুন দুয়ার খোলার স্বপ্নও দেখাচ্ছিল অনেককে। দ্বিতীয় টেস্টের আপাতকঠিন উইকেটেও সে স্বপ্ন একটু ধাক্কা খেল বটে। তবু এর মাঝেও ইতিবাচক কিছু খুঁজে নেওয়া যায়।
দিনের শুরুতেই বাংলাদেশের স্পিনাররা দাপট দেখিয়েছেন, তাইজুল পেয়েছেন পাঁচ উইকেট। এমনই সে দাপট যে আবু জায়েদ ও শরীফুল ইসলামের মতো দুই পেসারের কপালে সাকল্যে জুটল এক ওভার। যে উইকেটে তৃতীয় দিন থেকেই পেসাররা ‘দুধভাত’ হয়ে উঠবেন বলে আভাস মিলছিল, সে উইকেটে কেন তিন পেসার, সে প্রশ্ন তোলা যায়। তবে চাইলে একেও ইতিবাচক ভাবনা বলেই মনে করে নেওয়া যায়। ঘরের মাঠে একজন পেসার নিয়ে নামার অভ্যাস করে সমালোচনা শোনা টিম ম্যানেজমেন্ট এখন উইকেট স্পিন–সহায়ক, এটা বুঝেও বাড়তি পেসার নিয়ে নামছে; একে চাইলেই ‘ইতিবাচক ক্রিকেট’ বলে ভেবে নেওয়া যায়।
সেই ইতিবাচকতা টের পাওয়া গেল বাংলাদেশের ব্যাটিংয়েও। তামিম ইকবাল (২৪ রান) দুর্দান্ত এক বলে আউট হওয়ার আগে ওয়ানডে ছন্দে খেলেছেন। অন্য ওপেনার সাইফ হাসানও (৩৪) ‘চার-ছক্কা থাকতে দৌড়ে রান কেন’ মন্ত্র জপে খেলেছেন। আউটও হয়েছেন আগ্রাসী শট খেলে।
নাজমুল হোসেন (২৬) ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক দিয়ে জয়াবিক্রমার দুর্দান্ত বাঁক খাওয়া বলটার সম্মান দিলেন। মুমিনুল হক (৩২) করলেন উল্টোটা। মেন্ডিসের নিরীহ এক বল থার্ডম্যানে পাঠাতে গিয়ে স্টাম্পে টানলেন। মুশফিকুর রহিম (৪০) চেষ্টা করলেন সুইপ-রিভার্স সুইপ খেলে প্রতিপক্ষকে ভড়কে দিতে। এগিয়ে এসে তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে দুই পায়ের মাঝ দিয়ে বল যেতেও দিলেন একবার। যদিও মেন্ডিসের বাড়তি বাউন্সে উল্টো ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন।
ড্রেসিংরুমে ফেরা পাঁচ ব্যাটসম্যানই বিশের কোটা পেরিয়েছেন, এটাও চাইলে ইতিবাচকের তালিকায় যোগ করা যায়। সবাই থিতু হয়ে ফিরে গেছেন গুরুত্বপূর্ণ সব সময়ে, এটুকু ভুল চাইলে উপেক্ষা করা যায়। আলোকস্বল্পতার কারণে দিনের খেলা শেষ হওয়ায় উইকেট অক্ষুণ্ন রেখেই মাঠ ছেড়েছেন লিটন দাস (১৪*) ও মেহেদি হাসান মিরাজ (৪*)।
আগামীকাল সকালে কঠিন এক দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নামবেন লিটন-মিরাজ। প্রতিপক্ষের মাঠে ৫০তম হার এড়ানোর সে লক্ষ্য পূরণ হবে কি? না হলেও ক্ষতি নেই, কোচ-অধিনায়ক ও দলের সবাই নিশ্চয়ই এ হার থেকেও শিক্ষণীয় কিছু খুঁজে পাবেন। সেটাও তো কম ইতিবাচক কিছু নয়।