>এশিয়া কাপ ফাইনাল হারলেও মাথা উঁচু করেই দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ দল। বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা জানালেন, শিরোপা জিততে না পারলেও বেশ কিছু ইতিবাচক প্রাপ্তি রয়েছে দলের
এশিয়া কাপ ফাইনাল হারলেও শেষ বল পর্যন্ত লড়েছে বাংলাদেশ। কাল রাত সাড়ে ১১টায় বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর ক্রিকেটারদের মুখে তাই গ্লানি-হতাশা ছিল না। বরং বেশ কিছু ইতিবাচক দিক দেখছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
দলের ওপেনিংয়ে ধারাবাহিকতার সমস্যা ছিল। তামিম ইকবাল ছিটকে পড়ার পর সমস্যাটা আরও ঘনীভূত হয়। কিন্তু ফাইনালে লিটন দাসের সেঞ্চুরি বুঝিয়ে দিয়েছে, এমন মঞ্চে পারফর্ম করার সামর্থ্য রয়েছে লিটনের। এ ছাড়া মিডল অর্ডারে মোহাম্মদ মিঠুনের দুটো ফিফটি। মাশরাফির মতে, ব্যাটিংয়ের এ দুটি জায়গায় লিটন ও মিঠুনের রান পাওয়া বড় প্রাপ্তি। কাল শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রাপ্তি নিয়েই বললেন মাশরাফি, ‘মিথুন ও লিটনের কথা শুরুতেই বলতে হয়। আমাদের দুটি জায়গা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেই দুই জায়গায় প্লেয়ার পারফর্ম করেছে—এটা খুবই ইতিবাচক। এখন ওরা কতটুকু ওপরে নিয়ে যেতে পারবে, সেটার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। এক দুই ইনিংসে বলা যায় না সে ফর্মে আছে কি না। তবে আশা করি, ওরা বুঝতে পারছে তাদের সামর্থ্য আছে এই ধরনের মঞ্চে পারফর্ম করার।’
মোস্তাফিজুর রহমানের ধীরে ধীরে ছন্দে ফেরাও এবারের এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বড় প্রাপ্তি। রশিদ খানের সঙ্গে যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ ১০টি উইকেট শিকার করেছেন তিনি। এই পেসারের ছন্দে ফেরার কথা মানলেন মাশরাফিও, ‘মোস্তাফিজ আবার আগের মতো ফিরে আসছে ধীরে ধীরে, এটা খুবই পজেটিভ।’ তবে বাংলাদেশ অধিনায়ক পাশাপাশি এটাও মনে করিয়ে দিলেন, ‘দল যেভাবে চেষ্টা করেছে, আশা করি ওরা বুঝতে পারবে, যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে শতভাগ চেষ্টা করলে যেকোনো কিছুই সম্ভব। এখান থেকে শিক্ষা নিতে পারলে খুব ভালো হবে।’
শেষ ওভারের চাপ জিততে পারছে না বাংলাদেশ। সর্বশেষ নিদাহাস ট্রফিতেও শেষ ওভারে ভারতের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার টেন পর্বেও শেষ ওভারে ভারতের কাছে হেরেছে দল। মাশরাফির মতে, শেষ ওভারের বাধাটা টপকে একটি শিরোপা জিততে পারলে কাজটা সহজ হয়ে যেত। বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘হচ্ছে না কোন কারণে। আমার কাছে মনে হয়, একবার পারলে জিনিসটা সহজ হতো।এখানে মানসিক ব্যাপারগুলো কাজ করে। এই বাধা পার করার জন্য একটা টুর্নামেন্ট জেতা খুব জরুরি। তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে বড় বড় টুর্নামেন্ট জেতা সম্ভব হবে।’
ফাইনালের আগে পাঁচ ম্যাচেই ভুগেছে টপ অর্ডার। কিন্তু ফাইনালে দেখা গেল উল্টো চিত্র। ওপেনিং জুটি ভালো করলেও ধস নেমেছে মিডল অর্ডারে। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে মাশরাফি টেনে এনেছেন মানসিক চাপকে; যদিও খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের প্রশংসাও করেছেন তিনি। মুশফিকুর রহিম প্রায় দুটি সেঞ্চুরি পেয়ে গিয়েছিলেন। মাহমুদউল্লাহ, মিঠুন, ইমরুল কায়েস ভালো ব্যাটিং করেছেন বলে জানান মাশরাফি। তবে ফাইনালে মিডল অর্ডারের ধসে পড়ার পেছনে মানসিক চাপকেই টেনে আনলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘সেই সময় আমরা স্বাভাবিক ব্যাটিং করলেই ২৬০-২৭০ রান হতে পারত। আমি আসলে সম্পূর্ণ জবাব দিতে পারব না, এটার কারণ ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন হতে পারে। উইকেটে কে কেমন ফিল করছিল, হয়তো বা চাপ কিংবা স্কিল...কিছু একটা হতে পারে। রিয়াদ-মুশফিককে নিয়ে স্কিলের প্রশ্ন আসে না। মানসিক চাপ হয়ে গিয়েছিল হয়তো, দুটি উইকেট পতনের পর। তবে মিডল অর্ডার প্রতিদিন খেলবে না। যদিও কালকের ম্যাচটা ভালো সুযোগ ছিল পুরো টুর্নামেন্টে আমাদের সর্বোচ্চ রান করার, ২৭০-৮০, আরেকটু ভালো ব্যাট করলে ৩০০ রানও সম্ভব ছিল। সেখান থেকে অন্য দিন দ্রুত উইকেট পড়লেও যেই রান হয়, সেটাও আমরা করতে পারিনি।’
শেষ আট দিনে পাঁচ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ দল। এর সঙ্গে ভ্রমণক্লান্তি তো থাকছেই। স্বাভাবিকভাবেই শরীর ও মনের ওপর দিয়ে ভীষণ চাপ গেছে খেলোয়াড়দের। মাশরাফি জানান, ফাইনালে হেরে দল মোটেও খুশি নয়। জেতার আশা নিয়েই মাঠে নেমেছিল দল। আশা পূরণ না হওয়ায় দল স্বাভাবিকভাবেই হতাশ। এই হতাশার মাঝেই মাশরাফি অবশ্য কৌতুক করতে ছাড়েননি। ফাইনালে লিটন দাসের আউট নিয়ে ভীষণ বিতর্ক হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মাশরাফিকে জিজ্ঞেস করতেই তাঁর সোজাসাপটা জবাব, ‘দেখেন, এমনিতেই ওভাররেটের কারণে ম্যাচ ফির ৪০ শতাংশ জরিমানা দিয়েছি, আর জরিমানা দেওয়ার ইচ্ছে নেই।’