করোনা প্রতিরোধের নিয়মকানুন মানা হচ্ছে না, লাহোর বিমানবন্দরে জনাকীর্ণ একটা ছবি টুইটারে পোস্ট করে এমন বলেছেন ঢাকা রওনা হওয়ার আগে। সোমবার বিকেলে ঢাকায় নেমে কী দেখলেন, সেটি অবশ্য টুইটারে জানাননি।
মোহামেডানের হয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলতে ঢাকায় এসেছেন পাকিস্তানের সদ্য সাবেক হয়ে যাওয়া অলরাউন্ডার। এসেই সংবাদমাধ্যমের সামনে। শুধু মোহামেডান নিয়েই কথা বলতে বলছিলেন ক্লাবটির কর্মকর্তারা। কিন্তু বললেই কি হবে নাকি!
দেড় দশকের বেশি খেলেছেন পাকিস্তান দলে, সেই প্রসঙ্গ কি আর না এসে পারে! এলও, শাহিন শাহ আফ্রিদিকে নিয়ে নিজের ‘শঙ্কার’ কথাও বললেন সেখানেই।
সর্বশেষ পাকিস্তান সুপার লিগে লাহোর কালান্দার্সের হয়ে খেলেছেন ৪১ বছর বয়সী অলরাউন্ডার, যে দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন শাহিন। হাফিজের যখন টেস্ট অভিষেক, শাহিনের জন্ম তার মাত্র বছর তিনেক আগে।
তারপরও তরুণ এই ফাস্ট বোলারের নেতৃত্বগুণে মুগ্ধ হাফিজ, ‘সে উদীয়মান তারকা। নেতৃত্বের দারুণ গুণ আছে ওর মধ্যে। সর্বশেষ পিএসএলে দেখেছি, তরুণ হয়েও অধিনায়কত্বের কত কিছু দারুণভাবে সামলাচ্ছে। চ্যাম্পিয়ন হওয়াটাও তো বিশেষ কিছুই।’
পাকিস্তান ক্রিকেটে শাহিনের দ্রুতগতিতে ছুটে চলারই আরেকটি প্রমাণ সর্বশেষ পিএসএলের শিরোপা জয়। কদিন পর ২২ পূর্ণ করতে চলা এ তরুণই যে এখন দেশটির প্রধান ফাস্ট বোলার! তিন সংস্করণেই নিয়মিতই, ২২টি টেস্টের সঙ্গে খেলেছেন ২৮টি ওয়ানডে ও ৩৯টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি। সঙ্গে পিএসএলের মতো লিগ, কাউন্টি ক্রিকেটও আছে।
এটা নিয়েই হাফিজের ভয়। চাপটা একটু বেশি পড়ে যাচ্ছে না তো? সেই ভয়ের কথা বললেনও, ‘আমার মনে হয়, ফিটনেস নিয়ে ওর আরেকটু ভাবা উচিত। প্রায় সব ম্যাচই খেলছে বলে শরীরে অনেক চাপ পড়ছে। সামনে আসলে তার বেছে বেছে খেলা উচিত। কারণ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে লিগ, কাউন্টি—সবকিছুর চাপে ভেঙে পড়তে পারে। তবে সে অধিনায়ক হিসেবেও যেমন শুরু করেছে, শুভকামনা জানাই তাকে।’
শাহিন অবশ্য হাফিজের কথাকে গুরুত্বসহকারেই নিতে পারেন। শুধু দীর্ঘ ক্যারিয়ার নয়, এ পর্যায়ে এসেও নিজেকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নতুন করে জ্বলে ওঠার উদাহরণ তো হাফিজ তৈরিই করেছেন। এখনো ফুরিয়ে যাননি, সেটি বুঝিয়েছেন মাঠের পারফরম্যান্সেই। লাহোরের প্রথম শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন, ১৩ ম্যাচে করেছেন ৩২৩ রান করে। সঙ্গে নিয়েছেন ৬ উইকেটও। ফাইনালেও হয়েছেন ম্যাচসেরা।
তরুণদের সুযোগ করে দিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেও খেলাটা উপভোগ করছেন এখনো। এখনোই ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের কথা ভাবতে না চাইলেও বললেন, দেশের জন্য যেকোনো দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।
‘সত্যি বলতে কি, আমি নিজেকে আরেকটু সময় দিতে চাই, আসলে কোথায় অবদান রাখতে পারি (সেটা ভাবতে)। আমি কোনো কিছুতে তাড়াহুড়ো করতে চাই না। প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে চাই। ভবিষ্যতে নিজের দেশের জন্য যেকোনো কিছু করার সুযোগ এলে নেব। এখন ক্রিকেট খেলা উপভোগ করছি, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। আমি চাকরির পেছনে ছুটে বেড়ানোর মতো লোক না। যদি পাকিস্তান ক্রিকেটে কিছু অবদান রাখতে পারি, অবশ্যই করব। তবে সেটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, যেমনটি আগেই বললাম।’
লাহোর বিমানবন্দরের ওই অবস্থার আগে হাফিজ টুইট করেছিলেন পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ নিয়েও। তাতে ছিল রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের উইকেটের সমালোচনা। সেটির ব্যাখ্যাও দিলেন মোহামেডানের অনুষ্ঠানে, ‘আসলে পাকিস্তানের চিন্তাটাই ভালো ছিল না। আসলে ক্রিকেট তো বদলে গেছে, এখন এটা ফলনির্ভর। কেউই ড্র দেখতে চায় না। আমরা সবাই টেস্ট ক্রিকেটকে এক নম্বর হিসেবে দেখতে চাই। আমি টেস্ট ক্রিকেটের ভক্ত, এ কারণেই এটা বেশি অনুভব করি। প্রথম দিনই বুঝে গেছি যে এই টেস্ট ড্র হবে। ফলে আর বাকি দিনগুলো দেখার মানে নেই। অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে এখন পর্যন্ত জয়ের তাড়নাটা বেশি।’
হাফিজ যখন এসব বলছিলেন, করাচিতে বাবর আজম ও আবদুল্লাহ শফিকের জুটি শেষ দিনে অসম্ভব এক স্বপ্ন দেখানোর কাজটা করছিলেন দ্বিতীয় টেস্টে। একটু পরই এল হাফিজের টুইটটা, ‘পাকিস্তান দলের দারুণ লড়াই। অভিনন্দন বাবর আজম, চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা তোমার। আবদুল্লাহ শফিককেও অভিনন্দন, ভবিষ্যতের আভাস দিয়ে বিশ্বকে মুগ্ধ করার জন্য। পঞ্চম দিন রোমাঞ্চ ও উত্তেজনায় ঠাসা থাকবে। সব ফলই সম্ভব। পাকিস্তানের জেতা উচিত।’
টেস্ট ক্রিকেটের ‘ভক্ত’ হাফিজ নিশ্চয়ই এমন টেস্টই দেখতে চেয়েছিলেন, যেমন তিনি চান শাহিনের ক্যারিয়ারটাও লম্বা হতে দেখতে।