করোনাকালে বলে লালা মাখানো নিষিদ্ধ। বিকল্প কোনটা বাংলাদেশের বোলারদের জন্য?
করোনাকালে বলে লালা মাখানো নিষিদ্ধ। বিকল্প কোনটা বাংলাদেশের বোলারদের জন্য?

শাস্তির ভয়ে লালার বিকল্পের খোঁজে বাংলাদেশের বোলাররা

মাথায় সাদা কাপড় বা রুমাল। হাতে ঘাম মোছার ব্যান্ড। ঘামটা যেন ক্রিকেট বল পর্যন্ত না আসে, সে জন্যই এসব ব্যবস্থা। করোনার মধ্যে ক্রিকেট খেলার সময় জিমি অ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ট ব্রডরা ছিলেন এতটাই সতর্ক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) ক্রিকেট বলে লালার ব্যবহার নিষেধ করেছে। কিন্তু লালা তো দূরের কথা, ক্রিকেটে ফেরার পর থেকে ইংলিশ পেসাররা বলে কীভাবে ঘামও ব্যবহার না করা যায়, সেই প্রস্তুতি নিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া আবার ইংল্যান্ডের তুলনায় একটু ছাড় দিয়েছে। লালা তো নিষেধই; তাদের খেলোয়াড়দের বলা হয়েছে, অনুশীলনে ঘাম ব্যবহার করলেও সেটি যেন মাথা, মুখ ও ঘাড়ের ঘাম না হয়।

বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা অনুশীলন করছেন এক মাসের বেশি হলো। লালা ব্যবহার না করে কীভাবে বল উজ্জ্বল রাখা যায়, পেসারদের অনুশীলনে থাকছে সেই চেষ্টা। ইংলিশ পেসারদের মতো হয়তো কপালে কাপড় বেঁধে বোলিং করতে দেখা যায়নি কাউকে, তবে প্রতিনিয়ত চলছে লালা এড়িয়ে চলার চেষ্টা। ট্রাউজারে ঘষে বল উজ্জ্বল রাখছেন পেসাররা। তোয়ালে দিয়ে মুছেও কাজ সারার চেষ্টা করছেন। অনেকে আবার ঘামও লাগাচ্ছেন বলে। কেউ কেউ তো ভুল করে বলে লালাও ব্যবহার করে ফেলছেন। এত দিনের অভ্যাস কি আর এত সহজে ছাড়া যায়!

পেসার আবু জায়েদ কাল সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম ১২ ওভার বোলিং করেছেন। একবারের জন্যও লালা ব্যবহার করেননি বলে। তবে গত এক মাসে অনেকবারই ভুলে হাত চলে গিয়েছিল মুখে। মুঠোফোনে জায়েদ বলছিলেন, ‘যতটা পারছি, এটা এড়িয়ে চলছি। তবু মাঝেমধ্যে ভুলে হাত চলে যাচ্ছে। চেষ্টা করছি, যেন এই ভুলটা না হয়।’

নতুন আইন পেসারদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জই।

আইসিসির নতুন নিয়ম, কোনো বোলার এক ইনিংসে ভুল করে দুবারের বেশি বলে লালা লাগালে শাস্তি হিসেবে ব্যাটিং দলকে পাঁচ রান দেওয়া হবে। করোনাকালে ইংল্যান্ডের মাটিতে কিছু দ্বিপক্ষীয় সিরিজ এর মধ্যেই হয়ে গেল। ভুল হয়েছে সেখানেও। ইংলিশ ব্যাটসম্যান ডম সিবলি, পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমিরকে বলে লালা মেশাতে দেখা গেছে। তবে কাউকে এখনো এ জন্য শাস্তি পেতে হয়নি। জায়েদ আশাবাদী, খেলা শুরুর আগে নতুন নিয়মে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন তিনি, ‘একটা ভয়ও কাজ করছে। ম্যাচে প্রথমে সাবধান করবে ভুল করলে। এরপর তো শাস্তি! আশা করি, ম্যাচে ভুল হবে না।’

শ্রীলঙ্কায় তিন টেস্টের সিরিজে খেলা হবে লাল কোকাবুরা বলে। বাংলাদেশ দলের বোলাররাও অনুশীলন করছেন কোকাবুরায়। নতুন কোকাবুরায় সুইং পেতে সমস্যা হচ্ছে না। রিভার্স সুইংয়ের জন্য বল তৈরি হয়ে গেলে তো আর সমস্যাই নেই। সমস্যা হতে পারে অল্প পুরোনো বলে। সুইং বোলার শফিউল ইসলাম বলছিলেন, ‘ম্যাচ না খেললে পরিষ্কার বোঝা যাবে না। ম্যাচে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বল করা লাগবে। তখনই বোঝা যাবে, নতুন নিয়মের প্রভাব কতটা পড়বে। ধরুন, পেসাররা নতুন বলে বল করে গেল। স্পিনাররা এল। এরপর আবার পেসাররা এল বোলিংয়ে। তখন কেমন হয় বোলিং, সেটা দেখতে হবে।’

স্পিনাররাও সমস্যায পড়ছেন আইসিসির নতুন নিয়মে।

সমস্যাটা শুধু পেসারদেরই নয় অবশ্য। বল বাতাসে ঘোরাতে স্পিনারদেরও বলের এক পাশ উজ্জ্বল রাখতে হবে। কিন্তু সে জন্য তাঁদেরও এখন ট্রাউজারে বল ঘষেই চেষ্টাটা করতে হচ্ছে। কারণ, ঘাম ব্যবহারে সমস্যাও দেখছেন তারা। তরুণ অফ স্পিনার নাঈম হাসান বলছিলেন, ড্রিফট পেতে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নেই। ট্রাউজারে ঘষে কতটুকই-বা উজ্জ্বল করা যায় বল! আর ঘাম ব্যবহার করলে বল দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।

লালার ব্যবহার নিষিদ্ধ, ঘাম লাগালেও বল দ্রুত পুরোনো হয়ে যায়। কিন্তু কিছু একটা করে তো বলটা উজ্জ্বল রাখতে হবে বোলারদের। অনেকে বলছেন, সেটা হতে পারে বিশেষ ধরনের কাপড় দিয়ে ট্রাউজার বানিয়েও। এ নিয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষাও নাকি হচ্ছে। জাতীয় দলের দুই বোলার এ ধরনের ট্রাউজার পরে অনুশীলন করে উপকার পেয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে শ্রীলঙ্কা সিরিজে ক্রিকেটারদের এ রকম ট্রাউজার দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।