সাতে নেমে ৭৮ বলে ৮৬ রানের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস। সেটিও দলের দুঃসময়ে, যখন ১১৭ রানে নেই ৫ উইকেট। এরপর বোলিংয়ে ৬২ রানে ৪ উইকেট, যার মধ্যে আছে প্রতিপক্ষ দলের সর্বোচ্চ স্কোরার, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরারের উইকেটে। মুলতানে এমন স্বপ্নের মতো একটা দিনই কাটালেন পাকিস্তান অলরাউন্ডার শাদাব খান। তাতেই ম্লান হয়ে গেলেন হঠাৎ বোলার হয়ে ওঠা নিকোলাস পুরান, ম্লান হয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তৃতীয় ওয়ানডেতে ধূলিঝড়ে ৪৮ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ২৬৯ রানের সম্বল নিয়ে ৫৩ রানের জয় পেল পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ গুটিয়ে গেছে ৩৭.২ ওভারে ২১৬ রান করেই। এ জয় দিয়ে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতল পাকিস্তান।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তানের ইনিংসটা ছিল মূলত চার ভাগের—উদ্বোধনী জুটি, পুরানের বোলার হয়ে ওঠা, ধূলিঝড় আর শাদাবের ব্যাটিং।
আগের দুই ম্যাচের তুলনায় একটু ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ফখর জামান। ইমাম-উল-হক অবশ্য নিজের ফর্মটাই টেনে এনেছেন, পেয়েছেন টানা সপ্তম ৫০ ছাড়ানো ইনিংস। ওয়ানডেতে তাঁর চেয়ে টানা বেশি ‘পঞ্চাশ’ আছে শুধু জাভেদ মিয়াঁদাদের। ১৯৮৭ সালে টানা ৯ ইনিংসে ৫০ ছুঁয়েছিলেন পাকিস্তানি ক্রিকেটের ‘বড়ে মিয়া।’
ফখর-ইমামের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন পুরান। এর আগে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৩ বল করা পুরান বোলিংয়ে এসেছিলেন মূলত ক্রিজে দুই বাঁহাতির উপস্থিতির কারণেই। উইন্ডিজ একাদশের দুই স্পিনার আকিল হোসেইন (বাঁহাতি অর্থোডক্স) ও হেইডেন ওয়ালশ জুনিয়র (লেগ স্পিন) থাকলেও ওই সময় নিজের অফ স্পিন দিয়ে একটা ‘বাজি’ই খেলেছিলেন হয়তো পুরান। সেটিই কাজে লেগে গেল দুর্দান্তভাবে।
প্রথমে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হলেন ৪৮ বলে ৩৫ রান করা ফখর। এরপর একে একে ক্যাচ দিলেন ৬৮ বলে ৬২ রান করা ইমাম, মোহাম্মদ হারিসের পর মোহাম্মদ রিজওয়ান। রিজওয়ান ১১ রান করলেও রানের কলামে কিছুই যোগ করতে পারেননি হারিস। এই ডামাডোলের মধ্যে ৩ বলে ১ রান করে ওয়ালশের বলে এলবিডব্লু বাবর আজম। দুর্দান্ত ধারাবাহিক বাবর অবশেষে ‘ব্যর্থ’ হলেন।
পাকিস্তানও পরিণত হলো বিনা উইকেটে ৮৫ রান থেকে ১১৭ রানে ৫ উইকেটে। খাদের কিনার থেকে তাদের টেনে তোলার চেষ্টা শুরু করেন এরপর শাদাব ও খুশদিল। ৩৩তম ওভার পর মুলতানের ধূলিঝড়ের কারণে খেলা বন্ধ থাকে প্রায় এক ঘণ্টা। সে বিরতির পর যতক্ষণে শাদাব-খুশদিলকে আলাদা করতে পেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দুজন মিলে সপ্তম উইকেটে যোগ করেছেন ৮৪ রান। বিরতির পরপরই রানের গতিও বাড়ান দুজন।
৪৩ বলে ৩৪ রান করে আকিলের বলে খুশদিল বোল্ড হলেও উইন্ডিজকে ভুগিয়েছেন শাদাব। ৫৭ বলে তিনি পান ক্যারিয়ারের চতুর্থ অর্ধশতক। মোহাম্মদ নওয়াজ ও মোহাম্মদ ওয়াসিমকে নিয়ে যোগ করেন আরও ৫৬ রান। এক সময় ৬২ বলে ৫৬ রান ছিল তাঁর, আউট হওয়ার আগে শেষ ১৬ বলে তোলেন ৩০ রান। ৫ বল বাকি থাকতে জেইডেন সিলসের প্রথম শিকারে পরিণত হওয়ার আগে নিশ্চিত করেন পাকিস্তানকে লড়াই করার মতো স্কোর এনে দেওয়া।
শাহিন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফকে বিশ্রাম দিয়ে পাকিস্তান এদিন পেস আক্রমণে ফেরায় হাসান আলীকে, অভিষেক হয় শাহনওয়াজ দাহানির। চতুর্থ ওভারে পাকিস্তানকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন দাহানি, কাইল মেয়ার্সকে ফিরিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এরপর প্রথম সাত উইকেটে জুটি বড় করতে পারেনি।
শাই হোপ, কিসি কার্টি, শামার ব্রুকস শুরু করলেও টানতে পারেননি, ব্যর্থ হয়েছেন নিকোলাস পুরান ও রভম্যান পাওয়েলও। পাকিস্তানের সব বোলারই পেয়েছেন উইকেটের দেখা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯৩ রান তুলতেই হারায় ৫ উইকেট। অবশ্য তাদের আশা হয়ে ছিলেন আকিল।
সাতে নামা আকিল মুখোমুখি দ্বিতীয় বলেই নওয়াজকে মারেন ছয়, এরপর দ্রুতই থামেননি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাতে পর্যাপ্ত বল ছিল, যা চিন্তা ছিল রান করা নিয়েই। সেটিই দ্রুতগতিতে তুলতে থাকেন আকিল। অন্যদিকে কার্টি ও কিমো পল ফিরে গেলেও মাত্র ৩৪ বলেই অর্ধশতক পূর্ণ করেন, সেটি আসে নওয়াজকে তিন বলের মধ্যে মারা দুই ছয়ে।
বিপজ্জনক হয়ে ওঠা আকিলকে ফেরান শাদাবই। একটা ছয় মারার ঠিক পরের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে লাইন মিস করে যান আকিল, হন স্টাম্পড। এরপর হেইডেন ওয়ালশকে এলবিডব্লু করে শাদাব পান চতুর্থটি। পরের ওভারে হাসান আলী এসে রোমারিও শেফার্ডকে ক্যাচ বানিয়ে শেষ করেন ম্যাচ, সঙ্গে শাদাবের ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ উইকেট পাওয়ার সম্ভাবনাও।
শাদাবের তাতে আপত্তি করার কথা নয় মোটেও। যা পেয়েছেন, সেটিই বা কম কিসে!