বিরাট কোহলি, কেইন উইলিয়ামসন, স্টিভেন স্মিথ, জো রুট— এই চারজনকে বলা হয় ক্রিকেটের এ প্রজন্মের ক্রিকেটের ‘ফ্যাবুলাস ফোর’ বা ‘চমৎকার চার’। সম্প্রতি কোহলি-স্মিথদের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম ও আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের এখনকার শীর্ষে থাকা মারনাস লাবুশেনের নামও। তবে এখনো পর্যাপ্ত টেস্ট খেলেননি, এমন এক মানদণ্ডে লাবুশেনকে বাদ দিয়ে বাকি পাঁচ জনের একটা ক্রম করেছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন।
টেস্টে এ সময়ের সেরা এ ব্যাটসম্যানদের নিয়ে করা ওই তালিকায় ওয়াটসন সবার ওপরে রেখেছেন ২০১৯ সালের নভেম্বরের পর থেকে শতক না পাওয়া বিরাট কোহলিকেই। পাকিস্তানের বাবর আজম দ্বিতীয় স্থানে, নিজ দেশের স্টিভ স্মিথকে রেখেছেন বাবরের পর। আবার চোটের কারণে বাইরে থাকা কেইন উইলিয়ামসনকে রেখেছেন গত বছরের সর্বোচ্চ রান-সংগ্রাহক রুটের ওপরে। ‘দ্য আইসিসি রিভিউ’ নামে এক অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ইসা গুহর সঙ্গে কথা বলার সময় এ তালিকা ও এর পেছনে নিজের ব্যাখ্যা দিয়েছেন ওয়াটসন।
এ মুহূর্তে আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা লাবুশেন এখন পর্যন্ত খেলেছেন ২৬টি টেস্ট। তবে ওয়াটসনের তালিকার মানদণ্ড ‘কমপক্ষে ৪০ টেস্ট’। ফলে লাবুশেনকে শীর্ষ ছয়ের এ তালিকায় তিনি রাখেননি।
র্যাঙ্কিংয়ের দশে থাকা কোহলিকেই সবার ওপরে রেখেছেন ওয়াটসন। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, ‘টেস্ট ম্যাচে আমি সবসময়ই বিরাট কোহলির নাম বলব। তার সামর্থ্য প্রায় অতিমানবীয় পর্যায়ের। যখনই খেলতে যায়, তার তীব্রতাই এমন থাকে।’
২০১৯ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের বিপক্ষে কলকাতার ‘গোলাপি টেস্টে’র পর সর্বশেষ ১৭ ম্যাচে এ সংস্করণে কোনো শতক পাননি কোহলি, তিন অঙ্ক পাননি কোনো সংস্করণেই। সম্প্রতি টেস্ট গড়ও ৫০-এর নিচে নেমে গেছে তাঁর। তবে এ সংস্করণে ২৮টি অর্ধশতকের সঙ্গে ২৭টি শতক আছে সম্প্রতি ‘সাবেক’ ভারত অধিনায়কের।
কোহলির পরই ওয়াটসন রেখেছেন ৪০ টেস্টে ৪৫.৯৮ গড়ে ২৮৫১ রান করা বাবরকে। সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে সর্বোচ্চ রান-সংগ্রাহক বাবরে মুগ্ধ হয়েছেন ওয়াটসন। করাচিতে পাকিস্তানের মহাকাব্যিক ড্রয়ের ম্যাচে ১৯৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন বাবর। অবশ্য ওয়াটসন বলছেন, কোহলিকে ধরতে এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দেওয়া বাকি আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে পাঁচে থাকা বাবরের, ‘অসাধারণ খেলছে। এভাবে মানিয়ে নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে তার উন্নতি দেখতে পারা দারুণ।’
স্মিথকে ওয়াটসন রেখেছেন বাবরেরও পর। এর কারণ হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের কথা বলেছেন তিনি, ‘আগের সেই স্টিভ স্মিথ এখন নেই। যখন ফর্মের তুঙ্গে ছিল, তখনকার মতো বোলারদের চাপে রাখতে পারছে না। এ কারণে স্টিভ এ তালিকায় একটু নিচে নেমে গেছে।’
এমনিতে স্মিথ টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের দুইয়ে। এখনকার টেস্ট ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৯.৭৭ গড় তাঁর, আছে কোহলির সমান ২৭টি শতক। অবশ্য ২০১৯ সালের অতিমানবীয় অ্যাশেজের পর মাত্র একবার তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
অন্যদিকে গত এক বছরে মাত্র দুইটি টেস্ট খেলা উইলিয়ামসন আছেন ওয়াটসনের তালিকার চারে। তবে আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে লাবুশেন-স্মিথের পরই তাঁর অবস্থান এখনো। সব মিলিয়ে ২৪টি শতক করা উইলিয়ামসনের অবস্থান নিয়ে বলতে গিয়ে চোটের প্রসঙ্গ টেনেছেন ওয়াটসন, ‘কেইন উইলিয়ামসনের কনুইয়ে একটু সমস্যা আছে। তবে সে তার ব্যাটিংটা খুব ভালোভাবেই জানে। যে কোনো কন্ডিশনেই বোলারকে চাপে ফেলতে পারে।’
ওয়াটসনের তালিকার সবার শেষে আছেন ২০২১ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৮টি শতক করা ইংল্যান্ড অধিনায়ক রুট। ২৫টি শতকের মালিকের টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান চারে। তবে ওয়াটসনের মনে হচ্ছে, স্মিথের মতো রুটও বড় স্কোর গড়তে পারছেন না, ‘জো রুট সম্প্রতি শতক পেয়েছে। তবে স্টিভ স্মিথের মতো তারও একটা পর্যায় যাচ্ছে। আগের মতো বড় বড় স্কোর গড়তে পারছে না।’
ওয়াটসন বলছেন, এখনকার বিশ্বমানের ব্যাটসম্যানরা ধারাবাহিকভাবে বড় ইনিংস খেলতে পারেন না, ‘এটা দেখাটা দারুণ একটা ব্যাপার। বিশ্বমানের ব্যাটসম্যানরা এখন বড় বড় শতক না করে ৭০-৮০ রানের ইনিংস খেলে, কিন্তু তবুও খেলায় প্রভাব রাখতে পারে। তবে অতীতের মতো বড় স্কোরের যে উঁচু মান, সেটি ধরে রাখতে পারে না।’