২০০৫ সালের ইংল্যান্ড সফরে ১৮ বছর ১৭ দিন বয়সী মুশফিকুর রহিমের টেস্ট অভিষেক হয়। ৩৩ বছর বয়সী মুশফিক এখন তিন সংস্করণের ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের অন্যতম ভরসার নাম। এই বিচারেই মুশফিক জায়গা করে নিয়েছেন উইজডেনের বিশেষ একাদশে। যেই দলে মুশফিক ছাড়াও আছেন একঝাঁক ক্রিকেট কিংবদন্তি।
শচীন টেন্ডুলকার, মার্টিন ক্রো, গ্রায়েম পোলক, গ্যারি সোবার্স, ইমরান খান, অনিল কুম্বলে, ওয়াসিম আকরামরা আছেন ‘উইজডেন টিনএজ রায়ট ইলেভেন’ নামের এই বিশেষ একাদশে। হালের অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলার প্যাট কামিন্সও আছেন এই দলে। মুশফিকের মতো এই দলের বাকি কিংবদন্তিদের টেস্ট অভিষেক হয় কিশোর বয়সে। এরপর নিজ দেশের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে।
ওপেনার হিসেবে টেন্ডুলকারের সঙ্গে থাকছেন অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার নিল হার্ভি। হার্ভি তাঁর ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন তিন নম্বরে। কিন্তু তরুণ বয়সে শুরু করে তারকা হওয়া ওপেনার কম থাকায় উইজডেন হার্ভিকে ওপেনার হিসেবে বেছে নেয়।
তিন নম্বরে জায়গা পেয়েছেন ইংল্যান্ডের ডেনিস কম্পটন। ১৯ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেক হয় এই ইংলিশ কিংবদন্তির। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ফিফটি করেন। ১০ মাস পর দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নেমে করেন সেঞ্চুরি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কম্পটনের ক্যারিয়ার থেমে যায়। না হলে কম্পটন নাকি তাঁর সময়ে রানবন্যা বইয়ে দিতেন।
নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বদলে ফেরার রূপকার মার্টিন ক্রোর জায়গা চার নম্বরে। তাঁর ক্যারিয়ারের শুরুটা অবশ্য ওপরের সারির তিন ব্যাটসম্যানের মতো জ্বলজ্বলে ছিল না। তবে শুরুর ব্যর্থতার পর ক্রোই নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি গ্রায়েম পোলক ও ক্যারিবীয় কিংবদন্তি গ্যারি সোবার্সের পর উইকেটকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন মুশফিক।
পোলকের সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছিল নিষিদ্ধ। তিনি টেস্ট খেলেছেন মাত্র ২৩টি। পোলকের জন্য ইতিহাসে জায়গা করে নিতে ২৩ টেস্টই যথেষ্ট ছিল। সোবার্স আবার উল্টো। শুরুতে ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি খুব সফল ছিলেন না। অভিষেকের ২৮ ইনিংস পর টেস্ট সেঞ্চুরি পান সোবার্স। প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল আবার সেই ঐতিহাসিক ৩৬৫*। এরপর বাকিটা ইতিহাস। মুশফিকের টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুটাও খুব উজ্জ্বল ছিল না। তবে টেস্ট অভিষেকের ষষ্ঠ ইনিংসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৮০ রানের ইনিংসটি মুশফিকের সামর্থ্য প্রমাণ করে।
উইজডেন দলটির অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তানি অধিনায়ক ইমরান খানকে বেছে নিয়েছেন। টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুতে ইমরান ছিলেন গতিময় ফাস্ট বোলার, যিনি কিনা টুকটাক ব্যাটিং করতেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে ইমরান নিজেকে গড়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা দক্ষতাসম্পন্ন বোলার হিসেবে। ব্যাটসম্যান হিসেবেও করেছেন অবিশ্বাস্য উন্নতি। সঙ্গে অধিনায়কত্ব তো আছেই।
ভারতের কিংবদন্তি লেগ স্পিনার অনিল কুম্বলে দলের একমাত্র স্পিনার। ওয়াসিম আকরামও কিশোর বয়সে টেস্ট ক্রিকেট কাঁপিয়েছেন। তিনিও থাকছেন এই একাদশে। তরুণ অস্ট্রেলীয় পেসার প্যাট কামিন্সের বয়স বর্তমানে ২৭। কিন্তু ১৮ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেকেই তাক লাগিয়ে দেন এই তরুণ পেসার।
ক্রিকেট ইতিহাসের কিংবদন্তিদের নামের সঙ্গে নিজের নাম দেখে বেশ গর্ব অনুভব করছেন মুশফিক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, ‘এত কিংবদন্তির সঙ্গে একটা দলে নিজের নাম দেখা অসাধারণ অনুভূতি। আমি সত্যিই উইজডেন টিনএজ রায়ট একাদশে জায়গা পেয়ে গর্বিত।’
উইজডেন টিনএজ রায়ট একাদশ: নিল হার্ভি, শচীন টেন্ডুলকার, ডেনিস কম্পটন, মার্টিন ক্রো, গ্রায়েম পোলক, গ্যারি সোবার্স, মুশফিকুর রহিম, ইমরান খান (অধিনায়ক), অনিল কুম্বলে, ওয়াসিম আকরাম, প্যাট কামিন্স।