ক্যাসিনো-কাণ্ডে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে র্যাব গ্রেপ্তার করার পর বেশ বিব্রত, অস্বস্তিতে পড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। লোকমান যে বিসিবিরও পরিচালক। বর্তমানে বোর্ডের ফ্যাসিলিটিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান তিনি। যাঁর কারণে বিসিবি এখন অস্বস্তিতে, সাত বছর আগেও ক্রিকেটের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক ছিল না। মোহামেডান ক্লাবের মাধ্যমে ফুটবলের লোক হিসেবেই সবাই তাঁকে জানত।
কয়েকজন পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, লোকমান প্রথম ক্রিকেট বোর্ডে আসেন ২০১২ সালের অক্টোবরে। আগের কমিটির চার বছরের মেয়াদ শেষ হলে সে সময় বিসিবির একটি অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি গঠন করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। ১৩ সদস্যের এই অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সভাপতি হন বিসিবির বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান। তিনি তার আগেই সরকার কর্তৃক মনোনীত হয়ে সভাপতির চেয়ারে বসেছিলেন। এই কমিটির একজন সদস্য হিসেবে যুক্ত হন লোকমান। পরে ২০১৩ সালের অক্টোবরে যে ১৯ পরিচালক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন, তাঁদের মধ্যে তিনিও ছিলেন। লোকমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বোর্ড পরিচালক হয়েছেন ২০১৭ সালের অক্টোবরে বিসিবির সবশেষ নির্বাচনেও।
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কক্ষ ক্যাসিনোর জন্য ভাড়া দেওয়ায় লোকমানকে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে র্যাব। তাঁর গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনায় বিব্রত বিসিবির আরেক পরিচালক ও ক্রীড়াঙ্গনের সুপরিচিত সংগঠক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম, ‘নানা জায়গা থেকে তাঁর (লোকমান) ব্যাপারে আমাদের কাছে জানতে চাইছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিব্রত হচ্ছি, অস্বস্তির মধ্যে পড়ে যাচ্ছি। তবে সরকারের এই অভিযানকে স্বাগত জানাই, অবশ্যই এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। ক্লাবগুলোয় যেসব বিতর্কিত উপাদান ঢুকে গিয়েছিল, তাতে ক্লাবের প্রকৃত সংগঠকেরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। এখন একটা সুযোগ এসেছে সংস্কারের, পরিবর্তন আনতে হবে, যেন আবারও পুরোনো পথে হাঁটতে না হয়।’
তবে সাত বছর আগেও যাঁর ক্রিকেটের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না, সেই লোকমান কীভাবে বিসিবিতে এলেন, সেটি অবশ্য মনে পড়ছে না সাজ্জাদুল আলমের, ‘আগে তাঁকে সরাসরি ক্রিকেটে যুক্ত থাকতে দেখিনি। তবে মাঠে দেখেছি, হয়তো দর্শক হিসেবে এসেছেন। ক্রিকেট সংগঠক হিসেবে তাঁর পরিচয় আমরা জানতাম না। এই বোর্ডের আগের বোর্ড থেকে তাঁকে দেখছি।’
বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক ও বিসিবির আরেক পরিচালক নাঈমুর রহমান বলেছেন, তদন্তে প্রমাণিত হলে শাস্তিও পেতে পারেন লোকমান, ‘সন্দেহভাজন হলে তাঁর (লোকমান হোসেন ভূঁইয়া) বিরুদ্ধে তদন্ত হবে। অপরাধী প্রমাণিত হলে শাস্তিও হবে। সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে তাঁকে আটক করা হয়েছে। এ রকম অভিযান নিশ্চয়ই আরও চলবে।’
কদিন আগেও যাঁকে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান ও প্রভাবশালী পরিচালকদের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল মুখে দেখা গেছে, ক্যাসিনো-কাণ্ডে গ্রেপ্তার হয়ে সেই লোকমান যেন হাসি কেড়ে নিয়েছেন পুরো বোর্ডের!