>তামিম ইকবাল, বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। কত রেকর্ড তাঁর অধিকারে। কিন্তু এই রেকর্ডটা তাঁর নেই। লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে দ্বিশতক করা সৌম্য সরকারকে অভিবাদন জানাচ্ছেন তামিম। পাশাপাশি লিটন-সৌম্য দুজনকেই বলছেন, তাঁরা কত ভালো তা পৃথিবীকে দেখিয়ে দেওয়ার এটাই সময়।
ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের হয়ে বেশির ভাগ রেকর্ডই তামিম ইকবালের। তবে এই রেকর্ডটা তাঁর নেই। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে কখনো ডাবল সেঞ্চুরি করা হয়নি বাঁহাতি ওপেনারের। কাল লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে দ্বিশতক করে দেখালেন সৌম্য সরকার।
সৌম্যর এ অর্জনকে বড় করেই দেখছেন তামিম। অর্জনের চেয়ে দেশসেরা ওপেনারকে স্বস্তি দিচ্ছে, রানে ফিরেছেন সৌম্য। লিগ, প্রতিপক্ষ, মাঠ যেটিই হোক, রান করলে সেটি সব সময়ই বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগায় ব্যাটসম্যানকে। তামিম মনে করছেন, উঁচু আত্মবিশ্বাস নিয়েই ২০১৯ বিশ্বকাপে যাচ্ছেন সৌম্য, ‘এটা অনেক বড় অর্জন। যদিও সামনে আমরা খেলব একেবারেই ভিন্ন কন্ডিশনে, ভিন্ন বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে। তবে রান করাটা সব সময়ই ইতিবাচক। এটা আত্মবিশ্বাস জোগায়। সে কোথায় রান করেছে এটা ব্যাপার না, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে সে রান করেছে। ও যদি শেষ দুই ম্যাচে দুটি সেঞ্চুরির জায়গায় ১০-৫ রান করে সফরে যেত, ওর মাথায় একটু হলেও চাপ থাকত। যখন আপনি রান করবেন, তখন বুঝবেন কীভাবে রান করতে হয়। যখন কারও খারাপ সময় যায়, তখন সে ওটা ভুলে যায় কীভাবে রান করতে হয়। এটা ওর জন্য ভালো হয়েছে।’
সৌম্য রানে ফিরেছেন, কিন্তু ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারবেন তো? প্রশ্নটা আসছে তামিমকে দেখেই। ২০০৭-এর ৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় দলে অভিষেক তামিম ইকবালের। আন্তর্জাতিক আঙিনায় যত সময় গড়িয়েছে, নিজের জায়গাটা ততই পোক্ত হয়েছে এ বাঁহাতি ওপেনারের। নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে। এক প্রান্তে তামিমের ভিত্তি যত শক্ত হয়েছে, তাঁর অপর প্রান্ত ততটাই যেন নড়বড়ে। প্রায় এক যুগ কাটিয়ে বাঁহাতি ওপেনারের বদল হয়েছে একের পর এক সঙ্গী।
সঙ্গী বদল হওয়ার একটাই কারণ, অন্য প্রান্তে যে ওপেনার থাকেন, তাঁর ধারাবাহিকতার অভাব। গত দু-তিন বছরে তামিমের সঙ্গী হিসেবে তাই কখনো লিটন দাস, কখনো দেখা গেছে সৌম্যকে। সঙ্গীর ব্যর্থতা একজন সফল ব্যাটসম্যানের ওপর মারাত্মক চাপ না ফেললেও একটা প্রভাব তো পড়েই। তামিম আজ মিরপুরে সাংবাদিকদের বললেন, ‘নির্দিষ্ট ম্যাচে এটা কোনো সমস্যা তৈরি করে না। ওপেনিংয়ে একজন নিয়মিত সঙ্গী থাকলে দুজনই খেলাটাকে ভালো বুঝতে পারব। অনেক সময় এমন থাকে যে আমার টাইমিং ভালো হচ্ছে না। হয়তো আমি মারছি, কিন্তু ফিল্ডারের কাছে চলে যাচ্ছে। তখন সঙ্গী একটা সুযোগ নিতে পারে। একইভাবে ওর সঙ্গে যদি এটা হয়, তবে আমার সুযোগ নিতে হয়। কিন্তু কেউ যদি নিজেই দলে থিতু না হয়, তাকে বলা ভারী অন্যায় যে ভাই তুমি মেরে খেলো। নিশ্চিত লিটন ও সৌম্য অনেক সুযোগ পেয়েছে। এখন সময় হয়েছে, সবাইকে দেখিয়ে দাও, তোমরা কত দুর্দান্ত। ওরা কত ভালো সেটা পৃথিবীকে দেখিয়ে দেওয়ার এটাই সময়।’
শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়, সৌম্য-লিটনকে নিয়ে আরও বড় ভবিষ্যদ্বাণী করলেন তামিম, ‘ক্রিকেটে সেরা ওপেনিং জুটিগুলো দেখুন: হেইডেন-গিলক্রিস্ট, সৌরভ-শচীন, শেবাগ-শচীন। তাঁদের মধ্যে বোঝাপড়াটা ছিল অসাধারণ। যখন ওদের ম্যাচগুলো দেখবেন, আপনি মনে করবেন যে উইকেটে কী মজাটা করছে। আরেকজনের চাহিদা কী, সেটি বুঝতে পারছে। এ রকম সুযোগ আমাদের এখনো হয়নি। তবে যে দুজন (ওপেনার সৌম্য ও লিটন) বিশ্বকাপে যাচ্ছে, তারা বাংলাদেশের হয়ে আগামী ১০-১৫ বছর খেলার সামর্থ্য রাখে। ভালো করার এটাই সেরা সময় বলে মনে করি।’
তামিমের ভবিষ্যদ্বাণী সফল করার দায়িত্ব এখন সৌম্য-লিটনের।