>বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম মনে করেন, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সামর্থ্যের প্রয়োগটাই জয়ের জন্য বেশি প্রয়োজন।
বৃষ্টির শঙ্কা আগেই ছিল। আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের বড় শঙ্কা সাকিব আল হাসান। খবর পেলাম কুঁচকির চোটে নাকি আজ ওর খেলাই অনিশ্চিত। সাকিব যদি খেলতে না পারে, সেটি বাংলাদেশের জন্য বড় ধাক্কা। কেন বড় ধাক্কা, সেটি ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। এবারের ২০১৯ বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সেরা পারফরমার তো সেই–ই। তবে আমি আশা করি, সাকিবের চোট খুব গুরুতর কিছু নয়, সে খেলতে পারবে। তবে কোনো কারণে যদি খেলতে না-ও পারে, সে ক্ষেত্রে ‘প্ল্যান বি’ বা ‘প্ল্যান সি’ নিশ্চয়ই ভাবা আছে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের।
বৃষ্টির শঙ্কা যেসব ম্যাচে থাকে, সেগুলোতে এ ধরনের সমস্যা হয়। খেলোয়াড়দের পক্ষে এসব ম্যাচের জন্য মনঃসংযোগ ধরে রাখা খুব মুশকিল হয়। এটা আমি আমার খেলোয়াড়ি জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি। আমার মনে হয়, ক্রিকেটারদের বৃষ্টির ব্যাপারটি ভুলে যেতে হবে। মেনে নিতে হবে, এটা এমনই একটা ব্যাপার, যেটি নিয়ে তাদের কিছুই করার নেই। তবে আমাদের খেলোয়াড়েরা অনেক অভিজ্ঞ। তারা নিশ্চয়ই এভাবেই দেখছে সবকিছু।
শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সাম্প্রতিক রেকর্ড বাংলাদেশের খুবই ভালো। গত সেপ্টেম্বরে দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ম্যাচে আমরা লঙ্কানদের রীতিমতো উড়িয়ে দিয়ে জিতেছি। এর আগে, গত বছর মার্চে শ্রীলঙ্কার নিদাহাস ট্রফিতে আমরা জিতেছি টানা দুটি ম্যাচ। যদিও সে দুটি ম্যাচ ছিল টি-টোয়েন্টি সংস্করণ, তবুও আমরা জিতেছি। বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে উড়ে গেছে শ্রীলঙ্কা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ভাগ্যগুণেই জিতেছে বলব। আমরা আজকের ম্যাচটা খেলতে নামব, লঙ্কানদের চেয়ে মানসিকভাবে এগিয়ে থেকেই। দল হিসেবেও শ্রীলঙ্কার চেয়ে ভালো ও অভিজ্ঞ দল বাংলাদেশ। এখন ম্যাচ শুরুর পর ক্রিকেটাররা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেললেই ম্যাচে আমরা জিতব।
আমি গত ম্যাচের পর বলেছিলাম, বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট একধরনের মুখস্থ কৌশল বা পরিকল্পনা নিয়েই কাজ করছে। সেই মুখস্থ পরিকল্পনায় তারা সফল হয়েছে আবার ব্যর্থও হয়েছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সে পরিকল্পনা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তবে আজ বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের বড় পরীক্ষা। কারণ, প্রতিপক্ষ দলের কোচ কিছুদিন আগেই বাংলাদেশের কোচ ছিলেন। এবারের বিশ্বকাপ দলটা বলতে গেলে তাঁর হাতেই গড়া। চন্ডিকা হাথুরুসিংহে আমাদের প্রায় সব খেলোয়াড়েরই শক্তি-দুর্বলতার জায়গা সম্পর্কে জানেন। সুতরাং, আজকে গৎবাঁধা পরিকল্পনার কোনো স্থান নেই। পরিস্থিতি অনুযায়ী তাৎক্ষণিক পরিকল্পনা দিয়েই এ ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারাতে হবে বাংলাদেশকে। তবে হাথুরু লঙ্কানদের কোচ হওয়ার পরপরই বাংলাদেশের রেকর্ড তাদের বিপক্ষে ভালো হয়েছে। সুতরাং, এটা নিয়ে ভেবে মরার কিছু নেই।
আজ বাংলাদেশ দলে পরিবর্তন আসছে দেখলাম। লিটন দাসের খেলা প্রায় নিশ্চিত। আসতে পারেন রুবেল হোসেনও। এই দুটি পরিবর্তন নিয়ে আমার কিছু বক্তব্য আছে। আমি অবশ্যই লিটন ও রুবেলকে দলের নেওয়ার পক্ষে। কিন্তু লিটন আর রুবেল কার জায়গায় খেলবে, বিশেষ করে লিটনের ব্যাটিং পজিশন কী হবে, এটা নিয়ে আমার কিছু কথা আছে। লিটন ওপেনিং ব্যাটসম্যান, টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। সে মোহাম্মদ মিঠুনের জায়গায় কীভাবে খেলে! লিটনকে খেলাতে হবে হয় ওপেনিংয়ে, নয়তো তিন নম্বরে। এর নিচে খেলার ব্যাটসম্যান তো সে নয়। আমি নিশ্চিত, টিম ম্যানেজমেন্ট এ ব্যাপারটা নিয়ে ভেবেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আর রুবেলকে যদি মেহেদী হাসান মিরাজের জায়গায় খেলানো হয়, সেটি হবে আত্মঘাতী। সে দলের একজন ইউটিলিটি ক্রিকেটার। উইকেট নেওয়ার বোলার তো বটেই, দুর্দান্ত ফিল্ডার। লোয়ার অর্ডারে মিরাজের ব্যাটিংটাও খুব কার্যকর। রুবেলকে যদি খেলাতে হয়, তাহলে সাইফউদ্দিনের জায়গাতেই খেলানো উচিত।
খুব আগ্রহ নিয়েই আজকের খেলাটা দেখতে বসব। প্রার্থনা থাকবে বৃষ্টি যেন না হয়। আর শুভকামনা থাকবে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য। আজই বিশ্বকাপের নতুন এক পথচলা শুরু হোক মাশরাফি-সাকিব-তামিমদের।