ধন্যবাদ রশিদ— আফগানিস্তানের এক নম্বর বোলার রশিদ খানের বলে কাভার ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে উড়িয়ে চার মেরে কথাটা বলতেই পারতেন লিটন দাস। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম শতক থেকে লিটন মাত্র ২ রান দূরে ছিলেন। এমন সময় রশিদ যে বলটি করলেন সেটি লিটন চাইলে মাঠের যে কোনো প্রান্তে মারতে পারতেন।
রশিদের সেই ঝুলিয়ে দেওয়া বলটি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই চার মেরে ড্রেসিংরুমের দিকে তাকিয়ে উদ্যাপন করলেন লিটন। এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানের শতকে পুরো জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম তখন ‘লিটন!’, ‘লিটন!’ ধ্বনিতে মুখরিত।
প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের শুরুর জড়তা আজও ছিল লিটনের ব্যাটিংয়ে। ফজলহক ফারুকির বলে নিয়ন্ত্রণ খুঁজে পেতে অনেক সময় নিয়েছেন তিনি। ভাগ্য ভালো, আফগানিস্তানদের প্রায় কোনো বোলারই লাইন-লেংথের ক্ষেত্রে ধারাবাহিক ছিলেন না। নিয়ন্ত্রণ না থাকায় প্রত্যেকেই অতিরিক্ত রান দিয়েছেন। স্টাম্প বরাবর বল করার চেষ্টায় উল্টো ফাইন লেগে প্রচুর রান দিয়েছেন আফগানরা। তাতে চাপ কমেছে লিটনের। কোনো পরিশ্রম ছাড়াই পাওয়ারপ্লে থেকে ৫৪ রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ইনিংসের ড্রাইভ থেকে প্রথম বাউন্ডারি আসে ইনিংসের ১২তম ওভারে। অথচ ওভার প্রতি ৫-৬ করে রান পেয়ে এসেছে বাংলাদেশ। এতেই বুঝা যায় কতোটা লেগ সাইডে বল করেছে আফগানরা। তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের আউটও রান রেটে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি।
আফগানদের শুরুর দিকের বন্ধুত্বপূর্ণ বোলিংয়ে শুরুর চাপটা অনুভব করতে হয়নি লিটনকে। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে জুটির ভিত গড়ার কাজটাও বেশ সহজে সেরেছেন। শুরুতে লেগ সাইডে প্রচুর বল করলেও পাওয়ারপ্লে শেষে আফগান স্পিনাররা অফ স্টাম্পের বাইরে যথেষ্ট জায়গা দিয়েছেন লিটনদের। সুযোগটা কাজে লাগাতে ভুল করেননি বাংলাদেশ দলের এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। একটি শট খেলেই আফগানদের বিপক্ষে স্বাচ্ছন্দ্যে রান করেছেন লিটন। ইনিংসের শুরুতে দুজনই প্রচুর কাট করার সুযোগ পেয়ে সেটি কাজে লাগিয়েছেন। উইকেটে থিতু হওয়ার পর পুল শট, ফ্লিক শটে জোর দিয়েছেন।
মাঝের ওভারে লিটনের কর্তৃত্বপূর্ণ ব্যাটিংই শতকের পূর্বাভাস দিচ্ছিল। ব্যক্তিগত ৮৭ রানের সময় রশিদ খানের বলে হাশমতউল্লাহ শহিদির কাভারে ক্যাচ ছাড়ার মুহূর্তটা বাদ দিলে লিটনের ইনিংস থেকে খুঁত বের করা কঠিন হবে। কারণ তিন অঙ্ক না ছোঁয়া পর্যন্ত একটি শটও বাতাসে খেলেননি লিটন। তাঁর ইনিংসের দুটি ছক্কা এসেছে শতকের পর। ইনিংসের তৃতীয় ছক্কা মারতে গিয়ে লিটন যখন আউট হলেন, তখন তাঁর নামের পাশে ১৩৬ রান জ্বলজ্বল করছিল। ১২৬ বলে ১৬টি চার ও ২টি ছক্কায় সাজানো ইনিংসটিতে বাংলাদেশের তিনশ রানের মাইলফলক স্পর্শ করে।
লিটনের সঙ্গে ১৮৬ বলে ২০২ রান যোগ করা মুশফিক ছিলেন দুর্দান্ত ছন্দে। আফগানদের এলোমেলো বোলিংয়ের সুবিধাটা তিনিও পেয়েছেন ইনিংসের শুরুতে। তবে ৯৩ বলে ৮৬ রানের ইনিংসটি মুশফিক সাজিয়েছেন প্রান্ত বদল করার দুর্দান্ত দক্ষতায়। দুজন মিলে যোগ করা তৃতীয় উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড গড়েন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, শেষের ওভারে দ্রুত রান তোলার চাহিদা মেটাতে নিজের ইনিংসটি তিন অংকে নিতে পারেননি অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান।
ইনিংসের ৪৭তম ওভারে পর পর দুই বলে লিটন ও মুশফিককে আউট করেন ফরিদ আহমেদ। এরপর বাংলাদেশ ইনিংস বেশিদূর এগোতে পারেনি। ৫০ ওভারে ৩০৬ রানে থেমেছে বাংলাদেশ দলের ইনিংস। যেখানে লিটন-মুশফিকের জুটিটাই ছিল মেরুদণ্ড।